টেমসের রাজহাঁস গোনা হল না এ বার
ঐতিহ্য অনুসারে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস-এর সমস্ত রাজহাঁসের মালিক রাজা বা রানি, এই মুহূর্তে রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ। একটি রাজহাঁস হত্যাও রাজদ্রোহের শামিল। তবে উইন্ডসর কাসলকে ঘিরে থাকা টেমস নদীর রাজহাঁসগুলোই মূলত রানির প্রত্যক্ষ দেখাশোনার অধীন। প্রতি বছর হয় ‘সোয়ান আপিং’ নামের অনুষ্ঠান, টেমসের সব রাজহাঁস গণনা করা হয় তাতে। এই রাজহাঁস গোনার ঐতিহ্যের শুরু দ্বাদশ শতকে। রানির ‘সোয়ান মার্কার’দের নেতৃত্বে ‘সোয়ান-আপার’রা সারে কাউন্টির সানবেরি অন টেমস থেকে শুরু করে অক্সফোর্ডের কাছে অ্যাবিংডন পর্যন্ত রোয়িং করেন, সঙ্গে চলে বার্ষিক রাজহাঁস গণনার কাজ। এই বিচিত্র ব্যাপার দেখতে টেমসের পাড়ে ভিড় করেন দর্শকেরা। করোনার জেরে চলছে লকডাউন, এ বছর তাই সোয়ান আপিং বাতিল। এ বারের মতো রাজহাঁস-শুমারি হল না।
রাজকীয়: টেমস নদীতে চলছে রাজহাঁস গোনার কাজ, ‘সোয়ান আপিং’। পুরনো ছবি
ইতিহাসের কলকাতা
ব্রিটিশ টিভিতে লকডাউনের আগের কলকাতা দেখা গেল গত সপ্তাহে, প্রাক্তন কনজ়ার্ভেটিভ রাজনীতিক তথা টিভি-সঞ্চালক মাইকেল পোর্টিলো-র তথ্যচিত্র ‘এম্পায়ার’-এ। প্রথম পর্বের বিষয় কলকাতা। পোর্টিলো কলকাতার ভিড়ে ভরা বাজারে ঘুরেছেন, ক্লাইভের বাড়ির ধ্বংসাবশেষেও। লর্ড ক্লাইভ ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন লেখক ইতিহাসবিদ জহর সরকার, বলেছেন কী করে ক্লাইভ কোম্পানিকে করে তুলেছিলেন অসীম ক্ষমতাধর। ব্যারাকপুরে ওয়েলেসলির বিরাট প্রাসাদে গেছেন পোর্টিলো, সেটা এখন বঙ্গপুলিশের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কেন্দ্রের প্রধান শোভেন মিত্র বলেছেন, এই বাড়ি বানিয়েছিলেন ভারতীয় শিল্পীরা। ইতিহাসবিদ রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন সিপাহি বিদ্রোহের সময় ভারতীয় সেনাদের বিদ্রোহের কারণ। পোর্টিলোর সফরে এসেছে বঙ্গভঙ্গ, বিশ্বযুদ্ধ, জালিয়ানওয়ালা বাগ, মন্বন্তরও। ইতিহাসবিদ কৌশিক দাসের মত, মন্বন্তর ব্রিটিশদের তৈরি ‘বাংলার হলোকস্ট’। তথ্যচিত্রের শেষে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন কলকাতায় ব্রিটিশ শাসনের ঐতিহ্য সম্পর্কে।
এক নম্বরের গান
আশ্চর্য প্রতিযোগিতা। ব্রিটেনে মিউজ়িক চার্টে এক নম্বর হওয়ার দৌড় এখন ১০৩ বছরের মহিলা, ‘ফোর্সেস সুইটহার্ট’ নামে খ্যাত ভেরা লিন এবং ১০০ বছর বয়স্ক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ক্যাপ্টেন টমের মধ্যে। টম তাঁর বাগানে ১০০ পাক হেঁটে ‘এনএইচএস’-এর জন্য ৩৩ মিলিয়ন পাউন্ডও তুলেছেন! ভেরা লিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গেয়েছিলেন ‘আ নাইটিঙ্গেল স্যাং ইন বার্কলে স্কোয়ার’, ‘উই’ল মিট এগেন’-এর মতো গান। লকডাউনের আবহে খোদ রানিও তাঁর বক্তৃতায় দ্বিতীয় গানটা উদ্ধৃত করেছেন। ইউরোপ বিজয়ের ৭৫ বছর পূর্তি ও রানির বক্তৃতার আবহে লিন-এর গানটি মিউজ়িক চার্টে ঠাঁই পেয়েছে। মিউজ়িক চার্টের আবির্ভাব ১৯৫২-তে, লিন-এর গান তারও পুরনো। ক্যাপ্টেন টম কয়েক সপ্তাহ আগে বয়স্কতম মানুষ হিসেবে চার্টের শীর্ষে পৌঁছে রেকর্ড গড়েছেন, গায়ক মাইকেল বল ও ‘এনএইচএস ভয়েস অব কেয়ার কয়্যার’-এর সঙ্গে ‘ইউ’ল নেভার ওয়াক অ্যালোন’ গানে কণ্ঠ দিয়ে। টম এখনও শীর্ষে, ৩০ নম্বরে থাকা লিনকে অনেকটা পথ পেরোতে হবে।
অনলাইন বাগান
‘চেলসি ফ্লাওয়ার শো’ ছাড়া লন্ডনে গ্রীষ্মের উদ্যাপনটাই অসম্পূর্ণ। চেলসির রয়্যাল হসপিটাল-এ অনুষ্ঠিত এই বার্ষিক প্রদর্শনী রানির প্রিয় অনুষ্ঠানগুলোর একটা। করোনা-আবহে এখন শো গার্ডেন, বা স্বর্ণপদক জয়ের লড়াইয়ে নামা ফুলের সম্ভার, সব কিছুই রীতিমতো থমকে। এ হেন বাতিলের ঘটনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই বছরই ঘটল। এই ফ্লাওয়ার শো প্রথম শুরু হয় ১৯১৩-র মে মাসে, চলেছিল তিন দিন। এখন তা চলে ছ’দিন ধরে, দেখতে আসেন দেশ-বিদেশের দর্শকরা। ব্রিটেন তো বাগান আর বাগানশিল্পীদের দেশ, কিন্তু বিখ্যাত এই শো এ বার অনলাইন হওয়ার ঘোষণা হয়েছে, ইতিহাসে এই প্রথম বার। ১৮-২৩ মে সেরা বাগানশিল্পীরা দর্শকদের ভার্চুয়াল ভ্রমণে সুদৃশ্য বাগানগুলো ঘুরে দেখাবেন, শেখাবেন বাগানের নকশা, বা সেরা গোলাপ আর অন্য ফুলগাছ জন্মানোর কৃৎকৌশল। খুদে বাগান বা বারান্দায় রাখা পাত্রে আনাজপাতি চাষের কৌশল এই লকডাউনে সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় হতে যাচ্ছে।
প্রস্ফুটিত: চেলসি ফ্লাওয়ার শোয়ের ফুল