জয় গোস্বামী।
করোনা-তাণ্ডবে অন্তরীণ কবি জয় গোস্বামীর মন ডায়েরির পাতায়।
সকাল সাড়ে ১০টা
চারিদিকে ঝলমল করছে রোদ্দুর।আমাদের এই সল্টলেকের আবাসনে অনেক গাছ। গাছের পাতারা কাঁপছে হাওয়ার দমকে।কে বিশ্বাস করবে?এই বাতাসের মধ্যেও নাকি থাকতে পারে মারণরোগের জীবাণু? গৃহবন্দি হয়ে বসে আছি।সারা দেশের জন্য দুশ্চিন্তায় মন উদগ্রীব হয়ে আছে।কী ভাবে পাওয়া যাবে উদ্ধার? এই সব কথা ভাবতে ভাবতেই সকাল পার হয়ে যায়।
দুপুর আড়াইটে
বাইরের রোদ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ঘরের মধ্যে অন্তরীণ থাকলেও বার বার হাত ধুতে হচ্ছে সাবান দিয়ে। বই পড়ায় মন বসাতে পারছি না। গতকাল এখানকার বেসরকারি হাসপাতালে এই করোনা ভাইরাসের আক্রমণে একজনের মৃত্যুর খবর এসেছে।মনকে শান্ত রাখা এ সময়ে খুব শক্ত।টিভিতে দেখছি রাজপথ জনমানবহীন। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি আর যেন কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত না হয়।আমাদের আপনজনেরা, বন্ধুজনেরা যেন সুস্থ থাকেন সবাই।এই প্রার্থনার বেশি আর কী করতে পারি?
বিকেল ৫টা
এই করোনা ভাইরাসের আগমনের সময় আমি একটা বিষয় কিছুতেই ভুলতে পারছি না।তা হল, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসাধারণ ভূমিকা। মমতা কত সর্বাত্মক ভাবে এই দুর্যোগের মোকাবিলায় নেমে পড়েছেন সেটা দেখলে বিস্মিত হতে হয়। বিপর্যয়ের এই অবস্থাকে আটকাতে সব রকম ব্যবস্থা তিনি অবলম্বনকরেছেন।বিভিন্ন হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।এমনকি, বিরোধী দলনেতাদের ডেকেও বৈঠক করেছেন। সূর্যকান্ত মিশ্র, আব্দুল মান্নান, সুজন চক্রবর্তীদের সঙ্গে অলোচনা করে তাঁর কাজ,কর্তব্য বিষয় নিশ্চিত হতে চেয়েছেন।এমন ভূমিকা গ্রহণ দেখা যায় না। সমস্ত পশ্চিমবঙ্গবাসীর পক্ষ থেকে তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ইচ্ছে করছে।
সন্ধে ৭টা
একটা বই নিয়ে বসেছি। বইয়ের নাম ‘অন দ্য শোল্ডারস অব জায়েন্টস’। এই জায়েন্টের সংখ্যা পাঁচ। এই পাঁচ জন হলেন কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও, নিউটন, কেপলার, আইনস্টাইন। যিনি লিখেছেন বইটি, তিনি বলছেন, এই পাঁচ জনের কাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে উঠতে পেরেছে বলেই আমাদের অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, অ্যাস্ট্রোনমি এত দূর দেখতে শিখেছে আজ।বইটির লেখক যিনি, তিনিও একজন জায়েন্ট।তাঁর নাম স্টিফেন হকিং। বইটি একা পড়ে বোঝার সাধ্য আমার নেই। ফোন করে আমার বিজ্ঞানী বন্ধুদের সাহায্য নিচ্ছি। এই লকডাউনের সময় তাঁরাও ল্যাবে যেতে পারছেন না। তাঁরাও তো গৃহবন্দি!