ভোট এলেই প্রবীণ নেতা মণিশঙ্কর আইয়ারকে নিয়ে আশঙ্কায় থাকেন কংগ্রেস নেতৃত্ব— এই বুঝি তিনি কোনও বেফাঁস মন্তব্য করে বিজেপির হাতে অস্ত্র তুলে দিলেন! ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি নরেন্দ্র মোদীকে ‘চাওয়ালা’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। মোদী নিজের পুরনো চাওয়ালা পরিচিতিকেই ভোটের প্রচারে কাজে লাগিয়ে ফেলেন। তার পরে মোদী সম্বন্ধে ফের কটূক্তি করে দলের সদস্যপদ থেকে সাসপেন্ড হয়েছিলেন। এ বার ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে মণিশঙ্কর রাজীব গান্ধীকে নিয়ে স্মৃতিকথা লিখেছেন। রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর দফতরে আমলা হিসাবে কাজ করেছিলেন তিনি; পরে রাজনীতিক হিসাবেও দেখেছেন। মণিশঙ্করের বইতে বফর্স থেকে শাহ বানো মামলা, বাবরি মসজিদ থেকে অসম চুক্তির মতো নানা প্রসঙ্গ এসেছে। ঘরপোড়া গরুর মতো কংগ্রেস নেতাদেরও স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক বেড়েছে।
মণিশঙ্কর আইয়ারকে নিয়ে আশঙ্কায় কংগ্রেস।
আসন পরিবর্তন
প্রথা অনুযায়ী বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনে বক্তব্য পেশ করেন রাষ্ট্রপতি। এত দিন তা-ই হয়ে এসেছে পুরনো সংসদের সেন্ট্রাল হলে। এ যাত্রায় নতুন সংসদ ভবনের লোকসভাতে যৌথ অধিবেশনের ব্যবস্থা হয়েছিল। সেখানে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। অন্যান্য দিনের মতোই তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার নিজের আসনে বসতে গিয়ে দেখেন, তাঁর আসনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা জেডি(এস) সাংসদ এইচ ডি দেবগৌড়ার নাম সাঁটা রয়েছে। হতচকিত হয়ে পড়েন সুদীপ। ছুটে আসেন মার্শালেরা। জানান, রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার কারণে বসার জায়গায় পরিবর্তন হয়েছে। সুদীপকে যেখানে বসতে দেওয়া হয়, সেই বেঞ্চেই কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী ও ডিএমকের দলনেতা টি আর বালুর আসন ছিল। সুদীপের সামনে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁরও বসার স্থান পাল্টে গিয়েছিল। তবে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা উপলক্ষে অনুপস্থিত ছিলেন অধীর।
বিজেপির অটোরিকশা
রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা তৈরির সময় এক জনকে টিকিট দেওয়া নিয়ে অশোক গহলৌত ও সচিন পাইলটের মধ্যে চুলোচুলি হয়েছিল। তিনি কোটার নেতা শান্তিকুমার ধারীওয়াল। পাইলট গহলৌতের ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন ধারীওয়ালকে প্রার্থী করার বিরোধী ছিলেন। কারণ তিনিই গহলৌতের হয়ে হাই কম্যান্ডের বিরুদ্ধে কংগ্রেস বিধায়কদের বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই ধারীওয়ালই এখন রাজস্থান বিধানসভায় বিরোধী কংগ্রেসের প্রধান অস্ত্র। তিনি রাজস্থানের বিজেপি সরকারকে ‘ডাবল ইঞ্জিনের অটোরিকশার সরকার’ বলে কটাক্ষ করছেন। বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা হলেন সামনের চাকা। পিছনের দুই চাকা দুই উপমুখ্যমন্ত্রী। আর অটোর চালকের আসনে নরেন্দ্র মোদী!
স্বাতী মালিওয়াল। ছবি পিটিআই।
বিপ্লবে বিরক্ত?
ধর্মেও আছেন, ইনকিলাবেও। সেখানেই গোল বাধল। আম আদমি পার্টি থেকে রাজ্যসভার নতুন সাংসদ হয়েছেন স্বাতী মালিওয়াল। দিল্লির মহিলা কমিশনের সভানেত্রী হিসাবে স্বাতী প্রায়ই খবরের শিরোনামে উঠে আসতেন। বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনে তিনি রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে শপথ নিলেন। তার আগে সকালে দিল্লির কনট প্লেসের হনুমান মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু শপথ গ্রহণের পরে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিলেন। তাতেই বিজেপি শিবির থেকে আপত্তি উঠল। তাঁকে ফের শপথবাক্য পাঠ করালেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। বিরোধী শিবিরে প্রশ্ন উঠল, বিজেপির সাংসদরাও আজকাল সাংসদ হিসাবে শপথগ্রহণের পরে ‘জয় শ্রীরাম’ বা ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলছেন। তাঁদের ক্ষেত্রে কেন আপত্তি উঠছে না?
আবার হবে তো দেখা?
চলতি অধিবেশন শেষে লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়ে যাবে। লোকসভায় বিদায়ের সুর। পাঁচ বছরের শত্রুতা ভুলে একে অন্যকে জয়ের জন্য শুভকামনা জানান সাংসদেরা। হরিয়ানার এক বিজেপি সাংসদকে জয়ের শুভকামনা জানিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, বেজার মুখে সেই সাংসদের প্রতিক্রিয়া— আবার টিকিট পাব কি না তার ঠিক নেই। গোটাটাই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর উপর। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে যে ভাবে বিজেপির পুরনো নেতাদের টিকিট কাটা গিয়েছে তাতে লোকসভা নির্বাচনের সময়ে যে নতুন মুখ বেছে নেওয়া হবে না, এই ভরসা কেউ দিতে পারছেন না।