jagdeep dhankhar. governor

কোথায় থামিতে হয়

অত্যন্ত দুঃখের সহিত বলিতে হয়, রাজ্যপাল নিজের আচরণকে সংবিধানানুগ করিতে পারেন নাই। 

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৩৬
Share:

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গতিজাড্যের বিপদ হইল, তাহা থামিতে জানে না। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে সেই বিপদের কথা এক বার স্মরণ করাইয়া দেওয়া প্রয়োজন। রাজ্য সরকারের সহিত তিনি যে দ্বৈরথে নামিয়াছেন, তাহা বিপজ্জনক দিকে গড়াইতেছে। এবং, গতিজাড্যের ধর্ম মানিয়া, থামিবার নাম করিতেছে না। রাজ্য সরকার অভিযোগ করিয়াছে, তাঁহার ছাড়পত্র না মিলিবার কারণেই একাধিক বিল লইয়া বিধানসভায় আলোচনা সম্ভব হইতেছে না, ফলে সভা স্থগিত রাখা হইয়াছে। রাজভবন অভিযোগ অস্বীকার করিয়া জানাইয়াছে, সরকার ঠিক সময়ে বিল পাঠায় নাই। দোষ আসলে কাহার, সেই তর্কে কালক্ষেপ করা বৃথা। রাজ্য সরকারের তরফে সবই যথাযথ হইয়াছে, তেমন দাবি করাও কঠিন। কিন্তু, গত কয়েক মাসে রাজ্যপাল যত বার নিজের গণ্ডি অতিক্রম করিয়াছেন, তাহাতে জনমানসে ধারণা হইতে বাধ্য যে এই অভিযোগও তাঁহার সরকার-বিরোধিতারই একটি প্রকাশ। অসৌজন্যের সমস্যাই ইহা— যে ঘটনায় প্রকৃত প্রস্তাবে অসৌজন্য নাই, নেহাত প্রশাসনিকতা রহিয়াছে, সেখানেও তাহার দীর্ঘ ছায়া পড়িতে থাকে। পরিস্থিতিটি অতি দুর্ভাগ্যের। রাজ্যপালের সহিত শাসক দলের সংঘাত এই রাজ্য পূর্বেও দেখিয়াছে— দেশের হরেক প্রান্তে বিভিন্ন সময়ে তেমন সংঘাত ঘটিয়াছে— কিন্তু, কোনও ক্ষেত্রেই তাহা এতখানি তিক্ততা অবধি গড়াইয়াছিল কি না, ভাবিয়া দেখিবার মতো। রাজ্যপাল ধনখড়ও ভাবুন।

Advertisement

এ-হেন পরিস্থিতির পিছনে সাধারণত দোষ এক দিকের হয় না। নবান্নও অসৌজন্যের নিত্যনূতন নজির সৃষ্টি করিতেছে। কিন্তু, নজির সৃষ্টি করিতেছেন রাজ্যপালও। রাজ্যপাল ও নবান্ন পদমর্যাদা ও গুরুত্বের দিক দিয়া এক জায়গায় নাই, তাই নজির সৃষ্টির ক্ষেত্রে তাঁহাদের ভূমিকাও এক প্রকারের হইতে পারে না। শুধু শাসকপক্ষই নহে, নাগরিক সমাজের এক বৃহদংশের মতেও, রাজ্যপাল ধনখড়ের আচরণে রাজনীতির গন্ধ প্রবল। তিনি যাহা বলিতেছেন, যে ভাবে অনবরত শিষ্টতার সীমা অতিক্রম করিতেছেন, তাহাতে কেহ অভিযোগ তুলিতেই পারে যে তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় সরকারের অথবা বিজেপির প্রতিনিধি হিসাবে দেখিতেছেন। প্রকৃতপক্ষে, রাজ্যপালের করণীয় কী ও কতটুকু, তাহা অন্য কেহ দেখাইয়া দেয় না— একমাত্র নিজস্ব বিবেচনার দৃষ্টিতেই তাহাকে দেখা সম্ভব। অত্যন্ত দুঃখের সহিত বলিতে হয়, রাজ্যপাল নিজের সেই দৃষ্টিকে প্রসারিত করিতে পারেন নাই। নিজের আচরণকে সংবিধানানুগ করিতে পারেন নাই।

গত কয়েক মাসে তাঁহার উপর্যুপরি অভিযোগের মূল সুর, এই রাজ্যে তিনি যথেষ্ট সম্মান পাইতেছেন না। পূজা কার্নিভালের রাজপথ হইতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অলিন্দ, সর্বত্রই তাঁহার নাকি অমর্যাদা ঘটিতেছে। রাজ্যপালের সম্মানহানি হইলে তাহা রাজ্যের লজ্জা, কিন্তু, রাজ্যপাল স্মরণে রাখিতে পারেন— নিজেকে সম্মান আদায় করিবার ক্ষুদ্রতা হইতে দূরে রাখিতে পারাতেই তাঁহার পদের প্রকৃত সম্মান। রাজ্যপাল পদটি যে মূলত আলঙ্কারিক, এই কথাটি নূতন নহে। সাত দশকের দেশযাত্রায় তাহা ইতিমধ্যে বহুপ্রতিষ্ঠিত। পদাধিকার বলে তিনি রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য— সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাঁহার হাত হইতেই ছাত্ররা ডিগ্রি গ্রহণ করিবেন। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা তাঁহার কর্তব্য নহে, আকস্মিক অযাচিত পরিদর্শন তো নহেই। বরং, নিজেকে সম্ভ্রমজনক দূরত্বে সরাইয়া রাখিলেই তাঁহার পদের সত্যকারের মর্যাদা রক্ষা সম্ভব। তিনি স্বপ্রবৃত্ত হইয়া রাজ্যের কোনও অঞ্চলে সাধারণ মানুষের অবস্থা জানিতে গেলে তাঁহাকে বাধা দেওয়ার কোনও উপায় নাই। কিন্তু, সেই কাজটি না করাই তাঁহার কর্তব্য, কারণ কাজটি তাঁহার নহে। রাজ্যপাল পদের ক্ষেত্রে গুরুত্ব আদায় না করিতে চাহিলেই যে গুরুত্ব পাওয়া

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement