Plastic

রাজ্য ও পাট

ইহাও লক্ষণীয় যে, কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়া এ রাজ্যে উৎপন্ন মোটা ধানের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ক্রয় করে। কিন্তু পাটের এক দশমাংশেরও সরকারি ক্রয় হয় না। পাট নিগম ভারতে মাত্র তিন লক্ষ বেল পাট ক্রয় করে। ফলে পাট চাষির অসহায়তা তুলনাহীন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০৫
Share:

— ফাইল চিত্র

প্লাস্টিক ব্যবহার কমাইতে চাহে কেন্দ্র। পাটচাষি ও চটশিল্পের জন্য ইহা এক নূতন সুযোগ হইতে পারিত। আক্ষেপ, তাহা গ্রহণ করিতে প্রস্তুত নহে পশ্চিমবঙ্গ। এক দিকে চটের বস্তার যত চাহিদা, অত জোগান দিতে ব্যর্থ রাজ্যের চটকলগুলি। অপর দিকে চাষি দাম না পাইয়া পাটের চাষ হইতে মুখ ফিরাইতেছেন। পাটের চাহিদা বাড়িলে তো পাটচাষ লাভজনক হইবার কথা। তাহা হইলে গোলমাল কোথায়? কেন্দ্রও তাহা বুঝিতে চায়। তাই পশ্চিমবঙ্গের জুট কমিশনারকে পাটশিল্পের সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করিবার নির্দেশ দিয়াছে কেন্দ্রের কৃষিপণ্য মূল্য ও দাম নিয়ন্ত্রণ কমিশন। অতঃপর চাষি, শিল্পপতি, প্রশাসনিক কর্তা, সকলের বক্তব্য লইয়া রিপোর্ট নির্মাণ, তাহার ভিত্তিতে সুপারিশ, সুপারিশের উপর সিদ্ধান্ত, তদনুসারে সরকারি নির্দেশ, এবং নির্দেশ অনুসারে সংশোধন, এই সরকারি প্রক্রিয়া চলিবে। তাহা সম্পূর্ণ হইতে কত দিন লাগিতে পারে, তাহার অনুমান কঠিন নহে। তাহার মধ্যে আরও কত চাষি পাটের খেতে ভুট্টা কিংবা ফুল লাগাইবেন, আরও কত চটকল শ্রমিক হাটে-বাজারে দিনমজুরি শুরু করিবেন, কে বলিতে পারে? সরকারি নীতি লইয়া বিতর্ক-বিবেচনা অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু পাটচাষি ও পাটশিল্প সম্পর্কে জরুরি কর্তব্যগুলি কী, তাহা নিতান্ত অজ্ঞাত নহে। সেগুলি করিতে এত বিলম্ব কেন?

Advertisement

পাটের চাহিদা ও জোগানে অসাম্যের প্রধান কারণ, কেন্দ্রের নির্দিষ্ট মানের বস্তা উৎপাদনে যে মানের পাট প্রয়োজন, তাহা যথেষ্ট নাই। যে চটকলগুলির আধুনিকীকরণ হইয়াছে, তাহারা নিম্নমানের পাটও ব্যবহার করিতে সক্ষম, কিন্তু তেমন কল অধিক নাই। কলগুলিকে আধুনিক করিবার দায়িত্ব জাতীয় পাট পরিষদের, কিন্তু চটকলে যন্ত্রাদি বিতরণের ক্ষেত্রে তাহাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনিয়াছে কেন্দ্রীয় অডিট সংস্থা। অপর দিকে, পাটের মান উন্নতির কোনও উপায় চাষির নিকট নাই। কেন্দ্র চাষিদের উন্নত চাষের প্রশিক্ষণ দিতে ২০১৫ সাল হইতে যে প্রকল্প শুরু করিয়াছে, তাহা চার বৎসরে এক লক্ষ চাষির নিকট পৌঁছাইয়াছে। এ রাজ্যে চল্লিশ লক্ষ পাটচাষি কবে তাহার সুবিধা পাইবে, কী করিয়া পাইবে, আজও স্পষ্ট নহে। শংসাপ্রাপ্ত পাটবীজের সরবরাহ এতই কম যে অধিকাংশ চাষি আজও ভাগ্যের ভরসায় বীজ বপন করেন। পশ্চিমবঙ্গ পাটের বৃহত্তম উৎপাদক, কিন্তু সর্বাধিক দশ-পনেরো শতাংশ চাষি পাটের জন্য কৃষিঋণ লইয়া থাকেন। কৃষিবিমার সুবিধাও তদ্রূপ। সরকার রিপোর্ট লিখিতেছে, ক্ষতির বিপুল ঝুঁকি স্বমস্তকে ধারণ করিয়া পাট লাগাইতেছে চাষি।

ইহাও লক্ষণীয় যে, কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়া এ রাজ্যে উৎপন্ন মোটা ধানের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ক্রয় করে। কিন্তু পাটের এক দশমাংশেরও সরকারি ক্রয় হয় না। পাট নিগম ভারতে মাত্র তিন লক্ষ বেল পাট ক্রয় করে। ফলে পাট চাষির অসহায়তা তুলনাহীন। বীজের মান অনিশ্চিত, খেতমজুরের মজুরি তাহার নাগালের বাইরে, বাজার মহাজনের দখলে, সরকার উদাসীন। উন্নত পাটের প্রস্তুতিতে যাহা প্রধান প্রয়োজন— যথেষ্ট স্বচ্ছ জল— বাংলার গ্রাম হইতে তাহা অন্তর্হিত। পাটকলগুলিতেও ঘোর অনিশ্চয়তা, ঠিকাদার-প্রেরিত দিনমজুরদের উপর অধিক নির্ভর করিতেছেন

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement