Ferstivals

চাহিলেই করা যায়

শারদোৎসবের কালে বিচারবিভাগের হস্তক্ষেপেই জনসমাগম অনেক দূর নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহা না হইলে সংক্রমণের মাত্রা আজ আরও বহুগুণ বেশি হইবার প্রবল সম্ভাবনা ছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২০ ০০:৪৫
Share:

ছবি: পিটিআই।

ষোলো আনা সাফল্য মিলিয়াছে, এমন বলিলে অত্যুক্তি হইবে। তবে কলিকাতায় অন্তত বারো আনা, অন্যত্র নিদেনপক্ষে আট আনা, কম কী? ছটপূজা লইয়া উদ্বেগ তুঙ্গে উঠিয়াছিল। বিশেষত রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবর নামক কলিকাতার দুইটি জলাশয় পুণ্যার্থীসমাগম হইতে রক্ষা পাইবে কি না, তাহা গভীর চিন্তার কারণ হইয়া দাঁড়াইয়াছিল। গত বছর আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রবীন্দ্র সরোবর বাঁচে নাই, পুলিশের চোখের সামনে বহু মানুষ সমস্ত নিষেধ এবং তালা ভাঙিয়া পূজা দিবার জন্য সেখানে অনুপ্রবেশ করিয়াছিলেন। এ বারেও যথাসময় আশঙ্কা ঘনাইয়া আসে— রবীন্দ্র সরোবরেই ছট পূজা করিবার দাবিতে বেশ কিছু মানুষ সমবেত (অথবা সংগঠিত) হন, পুলিশের সহিত তাঁহাদের তর্কবিতর্ক হয়, অশান্তি অন্যমূর্তি ধারণ করিবার উপক্রমও ঘটে, কিন্তু শেষ অবধি তেমন কোনও পরিণতি ঘটে নাই, ‘জাতীয় সরোবর’ রক্ষা পাইয়াছে। এই বছর পরিবেশ রক্ষার সহিত জড়িত ছিল সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রশ্নও। বড় আকারের জনসমাগম এড়াইবার ফলে সেই বিপদও অন্তত আংশিক ভাবে কমানো গিয়াছে। রাজ্যের অন্য নানা অঞ্চলে সমাবেশ পুরোপুরি এড়ানো যায় নাই, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অন্যান্য বারের তুলনায় তাহার মাত্রা কম ছিল। সামগ্রিক ভাবে, স্বস্তির কারণ আছে।

Advertisement

এই আপেক্ষিক স্বস্তির জন্য নাগরিক সর্বাগ্রে ধন্যবাদ জানাইবেন আদালতকে। শারদোৎসবের কালে বিচারবিভাগের হস্তক্ষেপেই জনসমাগম অনেক দূর নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহা না হইলে সংক্রমণের মাত্রা আজ আরও বহুগুণ বেশি হইবার প্রবল সম্ভাবনা ছিল। ছট পূজার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন আদালত একের পর এক নিয়ন্ত্রণী নির্দেশ জারি করিয়াছে। সমাজ এবং পরিবেশের অভিভাবক হিসাবে বিচারপতিদের এই ভূমিকা কেবল প্রশংসনীয় নহে, শ্রদ্ধার্হ। ভরসার কথা, এই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসনও বেশ কিছুটা তৎপর হইয়াছে। তৎপরতার দুইটি দিক: কঠোরতা এবং সংযম। বিশেষত রবীন্দ্র সরোবরের ক্ষেত্রে তাহার প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত দেখাইয়া পুলিশের কর্তা ও কর্মীরা প্রমাণ করিয়াছেন যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যাঁহাদের হাতে, তাঁহারা চাহিলে সেই দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করিতে পারেন।

এবং বুঝাইয়া দিয়াছেন, কেন এই রাজ্যে এমন দৃষ্টান্ত ব্যতিক্রমী থাকিয়া যায়, পুলিশের চোখের সামনে যাবতীয় দুরাচার চলিতে থাকে। ইহার দায় বর্তায় প্রশাসনের রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর। অতিমারির কালে সর্বজনীন দুর্গোৎসবের আয়োজন বিপজ্জনক জানিয়াও শাসকরা প্রথম হইতে তাহার নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট কঠোর হন নাই। ছট পূজাতেও সেই ধারাই চলিয়াছে। ছট পূজা নিয়ন্ত্রণের আদেশের বিরুদ্ধে কেএমডিএ উচ্চতর আদালতে আপিল অবধি করিয়াছে। অর্থাৎ, রক্ষকই ভক্ষক হইয়াছে। স্পষ্টতই, পরিবেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিবার এই তৎপরতার পিছনে আছে ক্ষুদ্রস্বার্থের রাজনীতি। লক্ষণীয়, অন্যতম বিরোধী দল বিজেপিও ছট পূজার উপলক্ষটিকে ক্ষুদ্র রাজনীতির কাজে ব্যবহার করিতে তৎপর, পরিবেশ রক্ষা বিষয়ে তাহাদের কিছুমাত্র মাথাব্যথার লক্ষণ দেখা যায় নাই। অথচ দুর্গাপূজা এবং কালীপূজার অভিজ্ঞতা দেখাইয়াছে যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শুভবুদ্ধি হারান নাই। ছটপূজার দিনেও পুণ্যার্থীদের একটি বড় অংশ যথেষ্ট সংযম পালন করিয়াছেন। অর্থাৎ, প্রশাসন আপন কর্তব্য পালন করিলে সমাজের সমর্থনই পাইবে। কিছু উন্মার্গগামী নাগরিক এবং কিছু সুযোগসন্ধানী রাজনীতির কারবারির দুষ্টচক্রে পা দিবার কিছুমাত্র প্রয়োজন নাই। বস্তুত, এই বছরের উৎসব-পর্বের অভিজ্ঞতা জানাইল যে, বৃহত্তর সমাজ আত্মসংযমে প্রস্তুত এবং অল্পসংখ্যক অসংযমীদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশও অপ্রস্তুত নহে। ঘাটতি রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সাহসের। শাসনযন্ত্রের যন্ত্রীরা তাহা পূরণ করিতে চাহেন কি?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement