বিপদ টলেছে, কিন্তু প্রশ্ন অনেক

দলীয় সরকারের অধীনে এবং সব দলের অংশগ্রহণে, ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম ভোট হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩৮
Share:

ভয়ঙ্কর মৃত্যু কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে মেট্রো রেলের সুড়ঙ্গে।—ফাইল চিত্র।

কলকাতার সৌভাগ্য যে, বছরের শেষটায় পৌঁছে হাহাকারের মুখে পড়তে হল না। শহরে একটা সাংঘাতিক হাহাকার কিন্তু উঠতে পারত। ভয়ঙ্কর মৃত্যু কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে মেট্রো রেলের সুড়ঙ্গে। এমনটা না-ও হতে পারত। মেট্রো রেলের অনেক যাত্রীকেই গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে মৃত্যুর এক ভীষণ রূপ ছুঁয়ে দিতে পারত। শেষ পর্যন্ত যে তা হয়নি, সে অত্যন্ত সুখের কথা। কিন্তু সে সুখে অস্বস্তিগুলো ঢাকা পড়ার নয়। যে প্রশ্নগুলো উঠে গেল মেট্রোর কামরায় আগুন লাগাকে কেন্দ্র করে, সেই প্রশ্নগুলোর কোনও সদুত্তর এখনও মেলেনি।

Advertisement

কী কী প্রশ্ন মাথাচারা দিয়েছে ২৭ ডিসেম্বরের ঘটনার পরে? সর্বাগ্রে প্রশ্ন উঠছে, কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া নিয়ে। এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল, আর কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া বলতে মাত্র কয়েকটা গতানুগতিক বাক্য! ‘‘একটা আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। আমাদের কর্মীরা আগুন নিভিয়েছেন। দমকল ও কলকাতা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। যাত্রীদের উদ্ধার করা হচ্ছে। আতঙ্ক ছড়াবেন না।’’ এই ছিল বৃহস্পতিবার মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিবৃতি। সাংঘাতিক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পরে এই নিতান্ত দায়সারা বিবৃতি দিয়ে কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ নিজেদের অসংবেদনশীলতার প্রমাণ তো দিয়েছেনই, আরও একগুচ্ছ প্রশ্নের জন্মও দিয়ে দিয়েছেন। কলকাতা মেট্রোর বিপর্যয় মোকাবিলা দল কত বড়? কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে, ঠিক কতক্ষণের মধ্যে বিপর্যয় মোকাবিলা দল সেখানে পৌঁছতে পারবে? মেট্রোয় আগুন লাগলে ঠিক কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে? সুড়ঙ্গের মধ্যে আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলে দরজা খোলার ব্যবস্থা নেই কেন? এতগুলো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে একটা দুর্ঘটনা। কিন্তু প্রশ্ন যতই উঠুক, জবাব দেওয়ার দায় যেন মেট্রো কর্তৃপক্ষের নেই। একটা দায়সারা বিবৃতিতেই যেন সব দায় থেকে মুক্ত হয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

খুব বড় কোনও ক্ষতি ২৭ ডিসেম্বর রাতে হয়নি ঠিকই। কিন্তু যদি ক্ষতি বড় আকার ধারণ করত, যদি আগুনটা ছড়িয়ে পড়ত, যদি যাত্রীরা জানালার কাচ ভাঙতে না পারতেন এবং বিষাক্ত ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে অনেকের মৃত্যু হত, তা হলে মেট্রো কর্তৃপক্ষ কী করতে পারতেন? দুর্ঘটনা ঠিক কখন ঘটেছিল? কতক্ষণ পরে উদ্ধারকারীরা পৌঁছেছিলেন, কতক্ষণ সুড়ঙ্গে আটকে থাকা বদ্ধ কামরায় হাঁসফাঁস করেছেন যাত্রীরা— এই সব প্রশ্নের জবাব খুঁজলেই মেট্রো কর্তৃপক্ষের অপ্রস্তুত দশাটা স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়। সেই অপ্রস্তুত দশা ঢাকার জন্যই যে দায়সারা বিবৃতি, তা-ও স্পষ্ট বোঝা যায়।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

কলকাতা মেট্রো এই মহানগরের অন্যতম সেরা জীবনরেখা। মহানগরবাসীর প্রাত্যহিকতার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে মেট্রো রেল। সুড়ঙ্গের মধ্যে যাত্রীরা একটু আগেই সাক্ষাৎ মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন— এমনটা জানার পরেও তাই ২৭ ডিসেম্বর রাতে শ’য়ে শ’য়ে নিত্যযাত্রী ওই মেট্রোতে চড়েই বাড়ি ফিরেছেন বা গন্তব্যে পৌঁছেছেন। বুকে আতঙ্ক ছাপ ফেললেও মেট্রোকে এড়িয়ে চলা কলকাতাবাসীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এই নির্ভরশীলতার কথা জানেন বলেই কি কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ গাছাড়া ভাব দেখালেন? সুড়ঙ্গে যত বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাই তৈরি হয়ে থাকুক, মেট্রোকে এড়িয়ে চলা এ শহরের পক্ষে সম্ভব হবে না— এমনটা বুঝে গিয়েছেন বলেই কি মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সে রকম কোনও গভীর প্রতিক্রিয়া জানানো হল না? কলকাতা মেট্রোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তারা যদি এই রকম কিছু ভেবে থাকেন, তা হলে কিন্তু আরও বড় বিপদ অপেক্ষায় থাকবে। যাত্রীদের তো বটেই, সে বিপদ মেট্রো রেলের কর্তাব্যক্তিদেরও কিন্তু ছাড় দেবে না।

আরও পড়ুন: পরিকাঠামো আছে কি? মেলে না জবাব, মেট্রো-বিপর্যয়ে ভগবানই ভরসা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement