আমি নবদ্বীপের একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক। রুক্মিণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিবন্ধের (‘স্কুল যখন খুলবে আবার’, ২০-১০) সঙ্গে আমরা, শিক্ষক এবং অভিভাবকরা একমত। ধাপে ধাপে স্কুল খোলার প্রক্রিয়া শুরু করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আমরা লকডাউন পর্বে অভিভাবকদের মাধ্যমে পড়ুয়াদের কাছে নিয়মিত প্রশ্নপত্র পাঠিয়েছি, অভিভাবকদের কাছ থেকেই তা সংগ্রহ করে, সংশোধন করে ফেরত দিয়েছি। এর পরেও দেখা যাচ্ছে, লিখতে-পড়তে পারা এবং অঙ্ক কষতে পারার যে ক্ষমতা পড়ুয়ারা স্কুলে আয়ত্ত করেছিল, তা অনেকটাই কমছে।
প্রসঙ্গত জানাই, আমরা স্কুলে ইংরেজি ও বাংলা লিখতে পারা, নামতা মুখস্থ ও অঙ্ক কষতে পারার উপরেই বেশি জোর দিই। কিন্তু দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় তাদের ক্ষতি হচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষে আমরা অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করি। সকলেই বলেন, বাড়িতে থেকে ছেলেমেয়েরা অবাধ্য হয়ে উঠেছে, পড়াশোনার অভ্যাস নষ্ট হচ্ছে। তাঁরা চান, সপ্তাহে অন্তত এক দিন ক্লাস হোক। এক-এক দিন এক-একটি শ্রেণি আসুক স্কুলে। কিন্তু সরকারি নির্দেশ থাকায় আমরা এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। সরকার স্কুলগুলিকে নিজ দায়িত্বে ক্লাস শুরুর অনুমোদন দিক, এবং স্কুলগুলি নিয়ম মানছে কি না, সে বিষয়ে নজর রাখুক। নইলে শৈশব হারাবে শিশুরা।
রামমোহন চক্রবর্তী
নবদ্বীপ, নদিয়া
উদ্ভিদ সংরক্ষণ
ব্যাঙ্ক মানে শুধু অর্থ লেনদেনের প্রতিষ্ঠান নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি। ল্যান্ড ব্যাঙ্ক, ব্লাড ব্যাঙ্ক, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংরক্ষিত রাখার ব্যাঙ্ক ইত্যাদির কথা অনেকেই জানেন। গত ২১ অক্টোবর রায়গঞ্জের সারদা বিদ্যামন্দিরে উদ্ভিদ ব্যাঙ্কের শুভ সূচনা হল। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় ও সারদা বিদ্যামন্দিরের যৌথ উদ্যোগে এই উদ্ভিদ ব্যাঙ্কের মূল উদ্দেশ্য হল, বিরল প্রজাতির গাছের সংরক্ষণ। বহু ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন, মূল্যবান গাছকে এই ব্যাঙ্কের আওতায় এনে এদের কী ভাবে সংরক্ষণ করা যায়, তার ব্যবস্থা করা। এই বিদ্যালয় ইতিমধ্যে প্লাস্টিক-মুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার প্রকল্পেরও সূচনা করেছে।
বাণীব্রত ত্রিপাঠী
রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর
ভাঙার জন্য?
‘সুখের সন্ধানে’ (সম্পাদকীয়, ২৭-১০) সময়োপযোগী নিবন্ধ। বাস্তবিক এ বড় বিষম ব্যাধি, যার অন্যতম উপসর্গ হল, নিশ্চিত বিপদের প্রবল সম্ভাবনা জানা সত্ত্বেও পা বাড়ানোর প্রবণতা। তাই আজও সিগারেট প্যাকেটে থাকা ভয়াবহ ছবিগুলি উপেক্ষিত হয়। তীব্র বেগে মোটরবাইক চালানোর নামে বীরত্ব প্রদর্শনকারীদের দেখে মনে হয়, ‘ওদের কি প্রাণের ভয় নেই?’ আজ অতিমারিকে যাঁরা অবহেলা করছেন, তাঁদের সম্পর্কেও একই কথা মনে আসে। পুলিশ, আদালত, কোনও কিছুকেই ওঁরা পরোয়া করেন না, কারণ রাজনৈতিক দাদা-দিদিদের হস্তক্ষেপে ছাড় পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত বলি, সিঙ্গাপুর দেশটির আয়তন কলকাতা শহরের মতো। কিন্তু আজ তা কেবলমাত্র মানচিত্রের একটি ছোট্ট বিন্দু নয়, প্রথম বিশ্বের একটি দেশ বলে পরিগণিত। এটা সম্ভব হয়েছে এই জন্য যে, এখানে নাগরিক থেকে পর্যটক প্রত্যেকেই জানেন, নিয়ম মানার জন্য, ভাঙার জন্য নয়। তাই শাস্তির ভয়ে তাঁরা বিশৃঙ্খল হন না। অতিমারিতে ২৮টি প্রাণ হারিয়েছে সিঙ্গাপুর, যদিও ছোট দেশ হলেও জনসংখ্যার ঘনত্ব নেহাতই কম নয়— প্রায় ৮০০০ প্রতি বর্গ কিলোমিটার। এ দেশ অসাধ্যসাধনের দাবিদার।
চৈতালী তরফদার (ভট্টাচার্য)
ম্যান্ডারিন গার্ডেন্স, সিঙ্গাপুর
ডাক সেনানী
ডাক বিভাগের অকর্মণ্যতা সম্পর্কে কত কী শুনে আসছি! কর্মচারীরা কাজ করেন না, কর্মসংস্কৃতি গোল্লায় গিয়েছে ইত্যাদি। অবসরের পর নৈহাটিতে বাস করি। যে ডাকঘর থেকে চিঠিপত্র আসে, সেটি একটি ঘিঞ্জি বাজারের তিনতলায়। দীর্ঘ দিন সেখানে সিঁড়িতে ওঠার সময় ধরার মতো হ্যান্ডেলও ছিল না। হার্টের রোগী হওয়ার কারণে পারতপক্ষে ও পথ মাড়ানোর চেষ্টা করতাম না। অবশ্য যাঁরা চিঠিপত্র বিলি করেন, তাঁদের সহযোগিতার কখনও অভাব দেখিনি। সম্প্রতি ডাক-তার বিভাগের প্রতি আস্থা বাড়ল ‘আধার এনেব্লড পেমেন্ট সিস্টেম’ প্রকল্পের সুযোগে। এর কার্যপ্রণালী খুবই সহজ। যদি কোনও ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে টাকা থাকে এবং অতিমারি-কালে সেই ব্যাঙ্কে গিয়ে বা এটিএম-এর মাধ্যমে সেই টাকা তোলার সুযোগ না থাকে, তবে স্থানীয় ডাকঘরে টেলিফোন করলেই তাঁরা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ডাকপিয়নের হাতে পাঠিয়ে দেন। আধার কার্ডটি অবশ্য যে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলবেন, তার সঙ্গে লিঙ্ক করে রাখা দরকার। ডাকপিয়নকে নিজের মোবাইল নম্বর, আধার কার্ড নম্বর এবং ব্যাঙ্কের নাম জানালে, এবং বায়োমেট্রিক মেশিনে আপনার আঙুলের ছাপ মিলে গেলে, বাড়িতে বসেই টাকা পাওয়া সম্ভব।
আমি নিজেই একাধিক বার এ ভাবে টাকা তুলেছি। মনে রাখা দরকার, এটি দরজার বাইরে থেকে চিঠি বা পত্রপত্রিকা ছুড়ে দেওয়া নয়। সমগ্র প্রক্রিয়ায় ঘরের ভেতর আসতে হয়, প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো ডাকবিভাগের অ্যাপে ইনপুট করতে হয়, বৃদ্ধদের আঙুল ধরে বায়োমেট্রিক মেশিনে ঠিক জায়গায় বসিয়ে দিতে হয়— সব মিলিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। বেশির ভাগ ডাকপিয়নকেই দেখেছি অকুতোভয়ে কাজগুলো করে যান। ফলত, আমাদের এলাকার ডাকপিয়ন শিবুচন্দ্র দাস করোনা-আক্রান্ত হয়ে চোদ্দো দিন করোনা-সেন্টারে কাটিয়ে সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছেন।
এত ঝুঁকি সত্ত্বেও, তাঁর পরিবর্তে অন্য যিনি এ ক’দিন এসেছেন, কর্তব্যের ব্যাপারে তাঁরও কোনও হেলদোল দেখিনি। অতিমারি-আবহে ডাক্তার, নার্স, পুলিশদের অগ্রণী সেনানী হিসেবে শ্রদ্ধা জানানোর সময়ে আমরা যেন এঁদের কথা না ভুলে যাই।
দীপক গোস্বামী
দেউলপাড়া, নৈহাটি
আইন চাই
‘উপেক্ষিতা’ (সম্পাদকীয়, ২৪-১০) নিবন্ধে যথার্থই বলা হয়েছে, গৃহপরিচারিকা পেশাটি বর্তমানে এ রাজ্যে মহিলাদের সর্ববৃহৎ, কিন্তু অসংগঠিত নিয়োগক্ষেত্র। এর ফলে কর্মক্ষেত্রে জবরদস্তি কাজ করতে বাধ্য করা, যখন-তখন ছাড়িয়ে দেওয়া, সাপ্তাহিক ছুটি কিংবা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ছুটি না দেওয়া, মর্জিমাফিক বেতন দেওয়া, যে কোনও ছুতোয় সামান্য বেতনেও কোপ বসানো, বোনাস না দেওয়া, যৌন হয়রানি, শৌচাগার ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রভৃতি আচরণ চূড়ান্ত অমানবিকতার চিত্র তুলে ধরে। এর সব কিছুই দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে, তবে অতিমারি এই সমস্যাকেও তীব্রতর করে তুলেছে। কোনও ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’-এ কর্মস্থল হওয়ায় হয়তো কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সেখানেও পরিচারিকারা কাজে যোগ দিতে না পারলে নিয়োগকর্তারা খড়্গহস্ত। এর অবসান অবশ্যই জরুরি। এ নিয়ে শুধুমাত্র মানবিক হওয়ার আবেদন মনে হয় যথেষ্ট নয়। পরিচারিকাদের স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে চাই সুনির্দিষ্ট আইন। যে কোনও জনমুখী সরকার চাইলেই তা করতে পারে।
অন্য দিকে, মদের ব্যাপক প্রসারও বহু পরিচারিকার জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। স্বামীদের, এমনকি সন্তানদেরও অনেকেই মদ্যপ। ফলে ঘরে নিত্য অশান্তি। সমস্যা সমাধানে সাংগঠনিক প্রচেষ্টাও অনেক সময় কাজ করে না। প্রচণ্ড দারিদ্রের মধ্যে এ রকম আর্থিক অপচয়ের অবসানে সরকারের ভূমিকা আছে বইকি। এর সঙ্গে আশা করব, গৃহপরিচারিকাদের প্রত্যেককে ‘সামাজিক সুরক্ষা যোজনা’-র অন্তর্ভুক্ত করতেও সরকার উপযুক্ত ভূমিকা পালন করবে।
জয়শ্রী চক্রবর্তী
সম্পাদিকা, সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতি, পশ্চিম মেদিনীপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।