Animals

বিপন্ন

লকডাউনে সরকারি ঘোষণায় অরণ্য ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ জরুরি পরিষেবাভুক্ত হইয়াছিল। তাহা বুঝাইয়া দেয়, বন্যপ্রাণের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করিবার সদিচ্ছা সরকারের আছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২০ ০১:০৯
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্ব জুড়িয়া বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত ব্যবসার উপর নজর রাখে, এমন এক সংস্থার রিপোর্টে জানা গেল, লকডাউন চলাকালীন ভারতে চোরাশিকার বাড়িয়াছে দেড়শত শতাংশেরও বেশি। লকডাউনের পূর্বের ছয় সপ্তাহের সহিত পরবর্তী ছয় সপ্তাহের অনুপুঙ্খ তুলনা নিশ্চিত করিয়াছে, চোরাশিকারের ঘটনা ৩৫ হইতে বাড়িয়া হইয়াছে ৮৮। ভারতে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের অধীনে প্রাণিকুল গুরুত্ব ও বিপন্নতার নিরিখে কয়েকটি শিডিউল বা তফশিলভুক্ত। প্রথম তফশিলে রহিয়াছে কৃষ্ণসার, চিতা, বাঘ, গন্ডার, হাতির ন্যায় ‘সর্বাধিক সংরক্ষণযোগ্য’ প্রাণী। লকডাউনে ইহারাই লক্ষ্য হইয়াছে বেশি। কিন্তু শজারু, লাঙ্গুর, চিত্রল হরিণ, সম্বর, বন্য শূকরের ন্যায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় তফশিলভুক্ত প্রাণীর চোরাশিকারের ঘটনা মাত্র পাঁচটি হইতে বাড়িয়া হইয়াছে আটাশটি। বৃহদাকার প্রাণী হইতে পাখি, সরীসৃপ কিছুই বাদ পড়ে নাই।

Advertisement

লকডাউনে সরকারি ঘোষণায় অরণ্য ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ জরুরি পরিষেবাভুক্ত হইয়াছিল। তাহা বুঝাইয়া দেয়, বন্যপ্রাণের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করিবার সদিচ্ছা সরকারের আছে। তবু কী করিয়া এই চোরাশিকারের রমরমা? রিপোর্ট বলিতেছে, উল্লিখিত সময়ে চোরাশিকারের ঘটনায় গ্রেফতারের সংখ্যাও বিলক্ষণ বাড়িয়াছে— পূর্বে ছিল ৮৫, পরে ২২২। অপরাধের মাত্রার উল্লম্ফন ও চোরাশিকারিদের ধরপাকড়ে গতি, ইহা কি তবে স্ববিরোধ? তাহা নহে। লকডাউনে বন্যপ্রাণ প্রহরীর সংখ্যাও ধাক্কা খাইয়াছে। জাতীয় উদ্যানগুলিতে সেই অর্থে নজরদারির সমস্যা নাই, কিন্তু সংলগ্ন বা প্রান্তবর্তী অঞ্চলে সব সময় কড়া প্রহরা থাকে না। বন্য প্রাণী তো নিয়ম করিয়া অরণ্যের কেন্দ্রেই থাকিবে তাহা নহে, চোরাশিকারিরা তাহাদের অসতর্ক বিচরণ ও নিরাপত্তারক্ষীদের অপ্রতুলতার সুযোগ লইয়াছে। চোরাশিকারি বলিতে একটি নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীই বুঝায় না, লকডাউনে অকস্মাৎ কর্মহীন বা অরণ্যের নিকটে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষও ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করিতে প্রাণিহত্যায় দ্বিধা বোধ না-ই করিতে পারেন। তাঁহাদের নিকট হরিণ, খরগোশ বা শজারু বন্যপ্রাণ নহে, জীবন্ত মাংসপিণ্ড। লকডাউনে আন্তঃরাজ্য সীমান্তগুলি বন্ধ হইয়া যাওয়া পরোক্ষ ভাবে বন্যপ্রাণের নিরাপত্তায় বাধা হইয়া দাঁড়াইয়াছে। অনেক সময় বনকর্মীরা খবর পাইয়াও বিপন্ন বা আহত প্রাণীর রক্ষায় যাইতে পারেন নাই। বা যাইতে বিলম্ব ঘটিয়াছে, তত ক্ষণে সুযোগসন্ধানী কাজ হাসিল করিয়া ফেলিয়াছে। লকডাউনে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে বরাদ্দ অর্থ বা তহবিলও কমিয়াছে, তাহার প্রভাবও কি প্রহরায় পড়ে নাই?

অবস্থা ইহা হইতেও খারাপ হইতে পারিত। আন্তঃরাজ্য সীমান্ত বন্ধ থাকায় চোরাশিকার হইয়াছে সীমিত গণ্ডির ভিতর, সীমান্ত খোলা থাকিলে দুর্বৃত্তরা আরও প্রাণী হত্যা করিত; মাংস, চামড়া ও অন্য দুর্মূল্য দেহাংশ অবাধে পাচার বা চালান করিত। তথ্য বলিতেছে, লকডাউনে পরিবহণ ব্যবস্থা ও চোরাশিকারিদের গোপন বাজার বন্ধ থাকায় কিছু প্রাণী বাঁচিয়া গিয়াছে— বাঘের চোরাশিকার লকডাউন-পূর্ব ২০ শতাংশেই স্থির, পাখি শিকারের হার ১৪ হইতে ৭ শতাংশে নামিয়া আসিয়াছে, তফশিলভুক্ত কচ্ছপ মারা পড়ে নাই। তাহাতে সন্তুষ্টির কারণ নাই। বন্যপ্রাণ রক্ষায় দৃষ্টান্তমূলক ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি লউক সরকার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement