সম্প্রতি কেমন আছে কাশ্মীর? দীর্ঘকাল কার্ফু জর্জরিত, ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা বিচ্ছিন্ন, বিশেষ-অধিকার প্রত্যাহৃত, সেনা অতিশাসনে বিধ্বস্ত কাশ্মীর কেমন আছে— তাহার কিছু শ্বাসরোধকারী আলোকচিত্র বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করিয়া পুলিৎজ়ার পুরস্কারে ভূষিত হইয়াছেন চিত্রসাংবাদিক দার ইয়াসিন, মুখতার খান ও ছান্নি আনন্দ। আধাসেনার নিক্ষিপ্ত মার্বেল বলে আহত শিশু মুনিফা নাজ়িরের মুখের ছবিটি এই করোনা-আতঙ্কের দিনে আর এক বার স্মরণ করাইয়া দিয়াছে, কাশ্মীর উপত্যকায় জীবনের ছন্দটি কেমন। বিগত ছয় বৎসর ধরিয়া একাদিক্রমে কাশ্মীরের এই মুখটি বিবেকবান, সংবেদনশীল ভারতীয় নাগরিককে ক্লিষ্ট রাখিয়াছে। সন্ত্রাসের ক্রমাগত বিস্তার অসহায়তা ছড়াইয়াছে। এমনকি করোনা-আক্রান্ত বিশ্বেও সেই সন্ত্রাস একটুও বিশ্রাম লয় নাই। এই পরিস্থিতিতেই কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখিতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল পৌঁছাইলেন উপত্যকায়। পাক প্ররোচনা আটকাইবার কথাও হইয়াছে সেখানে। কিন্তু তাহাতে কি বিশেষ লাভ হইবে? পরিস্থিতির উন্নতি কি ঘটিতে পারে?
আশা কম বলিয়াই মনে হয়। বিগত মাসের পাঁচ দিন ব্যাপী গুলির লড়াই ‘কেরান অপারেশন’-এ যে তিন জঙ্গি নিহত হইয়াছে, তাহারা প্রত্যেকেই দক্ষিণ কাশ্মীরের বাসিন্দা, অর্থাৎ স্থানীয় মানুষ। নিহত হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার রিয়াজ় নাইকুও পুলওয়ামার লোক। নূতন করিয়া উগ্রপন্থা মাথাচাড়া দিবার পর যে জঙ্গিদের পরিচয় প্রকাশ্যে আসিতেছে, তাহারা প্রায় সকলেই স্থানীয়, পাকিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তও নহে। অপর পক্ষে, গত ৮ এপ্রিল সোপোরে সাজাব নবাব দার নামক এক জঙ্গির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভীতি উপেক্ষা করিয়া কয়েক শত স্থানীয় বাসিন্দা জমায়েত হইয়াছিলেন। বিপদ এড়াইতে এক নিহত জঙ্গির দেহ পরিবারের নিকট প্রত্যর্পণ না করিয়া গোপনে কবর দিয়াছিল নিরাপত্তা বাহিনী। মৃতের অনুপস্থিতিতে আয়োজিত অন্ত্যেষ্টি-প্রার্থনাতেও আসিয়াছিলেন কয়েক শত মানুষ। এই সব ঘটনা বলিয়া দেয়, কাশ্মীরে ভারত সরকারের নীতি এবং নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে লইয়া ফেলিয়াছে।
এপ্রিল-মে মাসে এতগুলি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সঙ্গত ভাবেই পাকিস্তানের কঠোর সমালোচনা করিয়াছে। দিল্লি-সহ গোটা ভারত কোভিড-১৯ ঠেকাইতে ব্যস্ত, এই সুযোগে পাকিস্তান জঙ্গিদের ইন্ধন দিতেছে। কিন্তু প্রলয় চলিবেই, অন্ধ হইয়া বসিয়া থাকিলে চলিবে না, এই কথা বিবেচনা করিয়া দিল্লিকেও তদনুযায়ী চলিতে হইবে। মোদী সরকারের কাশ্মীর নীতি যে কোনও ভাবে উগ্রপন্থা দমনে সাহায্য করে নাই এবং করিতেছে না, তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। স্থানীয় মানুষকে সামান্য উস্কাইয়া দেওয়াই এখন জঙ্গি কার্যক্রম চালাইবার প্রকৃষ্ট পথ। গোটা বিশ্ব যখন নিজেকে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি করিয়াছে, সেই সময়ও পথে নামিয়াছে কাশ্মীর। সাবধানতা অবলম্বন তাহার নিকট বিলাসিতা। আপনাকে যত্ন করা তাহার পক্ষে সম্ভব নহে। এই ভাবে পাকিস্তানের সহিত টক্কর দেওয়া যাইবে কি? যে কোনও উপায়েই হউক, কাশ্মীরের স্থানীয় মানুষের আস্থা অর্জন করিতে হইবে। তাহার পথ কী? মুনিফা নাজ়িররা কি সত্যই নিজেদের ভারতীয় ভাবিতে পারিবেন? ভারতের নাগরিক হইতে চাহিবেন?