সদিচ্ছা থাকিলেই সাফল্য আসে না, শনিবার তাহার সাক্ষ্য দিল রাজ্যের সকল বেসরকারি হাসপাতালে বন্ধ আউটডোর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রোগীর প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করিতে চাহিয়াছিলেন। সেই উদ্দেশে আইন সংশোধন হইয়াছে, বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগের নিষ্পত্তির জন্য নূতন কমিশন হইয়াছে, টাউন হলে মস্ত সভাও হইয়াছে। অথচ আজও সকল পক্ষ দায় এড়াইয়া যাইতেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, আউটডোরে ডাক্তার না আসিলে তাঁহারা নিরুপায়, তাঁহারা সকল পরিষেবা চালু রাখিয়াছেন। ডাক্তারদের বক্তব্য, তাঁহারা নিগৃহীত এবং প্রতারিত হইতেছেন। সুষ্ঠু ব্যবস্থার নিরাপত্তা না পাইলে কাজ করিবেন না। রোগী দেখিতেছে, নালিশ জানাইবার কর্তাদের সংখ্যা বাড়িতেছে, কিন্তু প্রতিকার পাইবার নিশ্চয়তা বাড়ে নাই, বিলম্বও কমে নাই। ফলে বেসরকারি ব্যবস্থার উপর ভরসা আরওই নড়বড়ে হইতেছে। বস্তুত হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো ও পরিষেবা নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন পাশ হইবার পর আজ অবধি কাজের কাজ কী হইয়াছে, তাহা স্পষ্ট নহে। কারণ হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠিত কমিশন নানা অভিযোগ গ্রহণ করিবার পর জানা গেল, তাহার কাজ শুরু করিবার অধিকারই নাই। কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন, আইন কার্যকর করিবার বিধি জারি না হওয়া পর্যন্ত কমিশন কাজ শুরু করিবে না। অতি সম্প্রতি বিধি প্রণয়ন হইয়াছে, কিন্তু আদালত এখনও কমিশনকে কাজ শুরু করিবার নির্দেশ দেয় নাই। অর্থাৎ বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগের নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া যথাযথ ভাবে শুরু হয় নাই।
ফলে বেসরকারি হাসপাতালগুলির স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করিবার প্রতিশ্রুতি রক্ষা শুরুর আগেই আইন-শৃঙ্খলার অবনতির ইঙ্গিত মিলিতেছে। হাসপাতালগুলিতে কিছু নেতা-আশ্রিত বাহুবলী ঢুকিয়া দালালি শুরু করিয়াছে। তাহারা হাসপাতাল কর্তাদের ও চিকিৎসকদের চাপ দিয়া যথেচ্ছ বিলের অঙ্ক কমাইতেছে বলিয়া অভিযোগ। ইহাদের দাপটে জেলার ছোট হাসপাতাল ও নার্সিং হোমগুলির নাভিশ্বাস উঠিতেছে, কলকাতার হাসপাতালের দশাও তথৈবচ। এমন নালিশ ক্রমাগত আসিলেও পুলিশ শক্ত হাতে ইহাদের দমন করে নাই। সকল অভিযোগ যে অমূলক নয়, কলকাতার একটি বড় হাসপাতালে এক পরিচিত বাহুবলীর গ্রেফতারি পরোয়ানাতেই তাহা প্রমাণিত।
কিন্তু রোগীর সহিত প্রতারণা ব্যতীত কি সরকারের নিকট বার্তা পাঠাইবার অপর কোনও উপায় ডাক্তারদের হাতে নাই? শনিবার কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত আগাম ঘোষিত হয় নাই। বহু দূর হইতে আসিয়া দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রোগীরা হতাশ হইয়া ফিরিয়াছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তা, কেহই এতগুলি অসুস্থ মানুষের দুর্ভোগ নিবারণ করিতে পারিলেন না। স্বাস্থ্য দফতর যে প্রতিকার চাহিতেছে, তাহাও আশাপ্রদ নহে। অনুপস্থিত ডাক্তারদের তালিকা তলব করিয়া, হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করিবার ভয় দেখাইলে পরিস্থিতি আরও সংঘাতপূর্ণ হইবে। চিকিৎসা চিকিৎসকেরাই করিবেন, আমলারা নহে। চিকিৎসার অনুকূল পরিস্থিতি রাখাই প্রশাসনের কাজ। সে কাজটি হইবার কোনও চিহ্ন এখনও নাই।