রাজস্থানের নাগৌর জেলার কুর্নু গ্রামে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে দুই দলিত যুবকের উপর নৃশংস নির্যাতন চলিল। অত্যাচারের ঘটনাটি ভিডিয়োবন্দি করিয়া ছড়াইয়া দিয়াছে নিপীড়কেরা। জাতপাতের বিদ্বেষ সমাজের কোন গভীরে বাস করে, সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন সত্যটি উস্কাইয়া দিল উক্ত ঘটনা। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর হিসাব বলিতেছে, অপরাধপ্রবণতার দিক হইতে রাজস্থান প্রথম সারির রাজ্য। অর্থাৎ সাধারণ ভাবেই সেইখানে আইনশৃঙ্খলা বেহাল। এই রূপ স্থানে দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধের পিছনে একটি কারণ সমাজের সামগ্রিক অপরাধপ্রবণতা। অন্য কারণ দলিতদের প্রতি উচ্চবর্ণের সামাজিক বিদ্বেষ, যাহা চড়া সামগ্রিক অপরাধপ্রবণতার কারণে ভয়াবহতর রূপ ধারণ করে। সমগ্র দেশে তফসিলি জাতির মানুষদের বিরুদ্ধে অপরাধের হার মোট অপরাধের ২১.৩ শতাংশ, রাজস্থানে ৩৭.৭ শতাংশ। নাগৌরের ভিডিয়ো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হইবার পরেই তদন্ত শুরু হইয়াছে এবং তফসিলি জাতি-জনজাতি নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে সাত জন গ্রেফতারও হইয়াছে। তৎসত্ত্বেও, জাতপাতের ভিত্তিতে নির্যাতনের ন্যায় সামাজিক ব্যাধি সারাইবার ঔষধ সহজে মিলিবার নহে। দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিপুল মাত্রাই উহার প্রমাণ।
রাজস্থানে ১৭.২ শতাংশ মানুষ দলিত হইলেও মূলস্রোতের রাজনীতিতে তাঁহাদের অংশীদারি সামান্যই। প্রতিবেশী রাজ্য উত্তরপ্রদেশে দলিতদের নিজস্ব রাজনৈতিক দল আছে, আইনসভায় প্রতিনিধিত্ব আছে, রাজপথে সংগ্রামের নেতা আছেন। মহারাষ্ট্রেও দলিতদের রাজনৈতিক শক্তি উপেক্ষা করিবার মতো নহে। কিন্তু রাজস্থানে তাঁহাদের না আছে শক্তিশালী নিজস্ব দল, না আছে শাসক বা মূল বিরোধী পরিসরে তাৎপর্যপূর্ণ স্থান। ক্ষমতায়ন না হইবার ফলেই দলিতদের উপর অত্যাচার করা সহজ। যাহাদের হাতে ক্ষমতা, অপরাধ করিয়াও তাহাদের পার পাইবার সম্ভাবনা বিপুল। বর্তমানে দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা যে উচ্চবর্ণের আধিপত্যকামী রাজনীতি অভ্যাস করিয়া থাকেন, উহার ফলে এই বিদ্বেষ ফুলে-ফলে পল্লবিত। নির্যাতনের ঘটনাগুলি সেই রাজনীতির নিকট তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ উহার মাধ্যমেই দলিত সমাজে ভীতির সঞ্চার করা সম্ভব।
প্রশাসন দায়িত্ব এড়াইতে পারে না। ইহা সত্য যে কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত দলিতদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় তাঁহার প্রশাসনকে জ়িরো টলারেন্স বা শূন্য সহনশীলতা নীতি লইতে বলিয়াছেন। এই ধরনের ঘটনা দেখিলেই জানাইবার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে, এবং অত্যাচারিত গোষ্ঠীকেও তদ্রূপ করিবার জন্য উৎসাহ দেওয়া হইতেছে। ইহাও মানিতে হয় যে পূর্বাপেক্ষা অধিক ঘটনা নথিভুক্ত হইতেছে। কিন্তু যত ক্ষণ না অপরাধ করিয়া সামাজিক ভাবে রেহাই পাইবার ধারণাটি ভাঙা যাইতেছে, তত ক্ষণ মুখ্যমন্ত্রীর নীতি কার্যকর হইবার আশা ক্ষীণ। সেই জন্য অভিযোগ করিবার উৎসাহ দানের সহিত আইন বলবৎ ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করিবার উপরেও জোর দিতে হইবে। ইহার সহিত বহু প্রত্যন্ত এলাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের উপর ঘটিয়া চলা নির্যাতনের ঘটনাগুলিতে সামনে আনিতে হইবে, যাহা সাধারণত অ-নথিভুক্ত থাকিয়া যায়। না হইলে বিভেদরেখা মুছিবার কাজটি সহজ হইবে না।