—ফাইল চিত্র
ফের রদবদল বিজেপিতে। এ বার ডানা ছাঁটা হল রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের ঘনিষ্ঠদেরই। বাদ পড়লেন যেমন অনেকে, কম গুরুত্বের পদেও আনা হল কাউকে-কাউকে।
দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলায় বদল এসেছিল আগেই। হরিণঘাটা এবং কল্যাণী বিধানসভা কেন্দ্র জুড়ে গিয়েছে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায়। এই সমস্ত এলাকায় নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার একাধিক পদাধিকারী ছিলেন। কাজেই নদিয়ার দক্ষিণে দলের সংগঠনে ফের রদবদল অবশ্যম্ভাবী ছিল। সেই রদবদলে একাধিক পদাধিকারীর যেমন ঠাই হল না, অনেকেই সরলেন কম গুরুত্বপূর্ণ পদে। ঘটনাচক্রে এঁদের বেশির ভাগই জগন্নাথের ঘনিষ্ঠ।
বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সংগঠনে কোন্দল ছিল আগেই। জগন্নাথ সাংসদ হওয়ার পরে তাঁর জায়গায় দক্ষিণ জেলা সভাপতি করা হয় বিরোধী গোষ্ঠীর মানবেন্দ্রনাথ রায়কে। মাস পাঁচেকের মধ্যে তাঁকে সরিয়ে ফের জেলা সভাপতি করা হয় জগন্নাথ-ঘনিষ্ঠ অশোক চক্রবর্তীকে। তবে দল সূত্রের খবর, মাস কয়েকের মধ্যেই অশোকের সঙ্গে জগন্নাথের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। সম্প্রতি একাধিক মণ্ডল সভাপতি, জেলার পদাধিকারীরা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অশোকের অপসারণ চেয়ে চিঠি পাঠান। এঁদের বেশির ভাগই জগন্নাথের ঘনিষ্ঠ।
বিজেপির সংগঠন এই জেলায় দুই ভাগে ভাগ হওয়ার পর থেকেই ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দক্ষিণ জেলা সভাপতি ছিলেন জগন্নাথ। দীর্ঘদিন পদে থাকার সুবাদে এবং পরে সাংসদ হওয়ায় জেলা কমিটি এবং মণ্ডল স্তরেও তাঁর প্রভাব রয়েছে। মাঝে জগন্নাথ ঘনিষ্ঠ তিন মণ্ডল সভাপতিকে পদ থেকে সরানোয় ক্ষুব্ধ হন একাংশ। জেলা দফতরে বিক্ষোভের মুখেও পড়তে হয় নেতৃত্বকে। এর মধ্যেই রদবদল হল জেলা কমিটিতেও। দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ সহ-সভাপতি পদে সরানো হল সাংসদের ঘনিষ্ঠ মনোজ বিনকে। আগে জেলা সভাপতির বিরুদ্ধেই মুখ খুলেছিলেন সহ-সভাপতি পঙ্কজ বসু। তাঁকে আর কোনও পদেই রাখা হয়নি নতুন কমিটিতে। সাধারণ সম্পাদক পদে নিরঞ্জন বিশ্বাস রয়ে গিয়েছেন। লোকসভা ভোটের পরে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রানাঘাট ১ ব্লকের প্রদীপ সরকারকে জেলার সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হয়েছে। সম্পাদকমণ্ডলীতে এসেছেন কুপার্সের মণ্ডল সভাপতি দীপক দে। সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বাদ পড়েছেন লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদীর সভায় কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া স্বপন ঘোষ এবং শান্তিপুরের নির্মল বিশ্বাস। তবে সহ-সভাপতি পদেই রয়ে গেছেন জগন্নাথ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আশিস উকিল ওরফে বিপুল।
সংগঠনের রাশ নিজের হাতে রাখতে অশোকই এই বদলের পিছনে রয়েছেন কি না সেই প্রশ্ন ঘুরছে দলের অন্দরে। জগন্নাথ অবশ্য দাবি করেন, “আমার লোক বলে কিছু নেই। আমরা সবাই বিজেপির লোক।” আর অশোক বলছেন, “সামনে নির্বাচন। সে দিকে তাকিয়েই দল যাকে যেখানে ব্যবহার করা প্রয়োজন মনে করেছে, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরমধ্যে অন্য কোনও অর্থ খোঁজা ভিত্তিহীন।”