অপরাজিতা আঢ্য। ছবি-ফেসবুক।
বিবাহিত জীবনের চব্বিশটা বছর পার করেছি। গত তেইশ বছর ধরে মা তার আদরের জামাইকে ষষ্ঠীতে ডেকে আশীর্বাদ করেনি এমনটা কোনওদিনও হয়নি। আজ জামাইষষ্ঠী। সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। মেঘ জমেছে আমাদের মনেও। সেই মেঘের নাম করোনা ভাইরাস... আমপান।
অতনুর সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে সেই কোন ছেলেবেলায়। তখন আমি সবে উনিশ। সেই তবে থেকে গত বছর অবধি আমার মা নিয়ম করে সমস্ত নিয়মকানুন, লৌকিক আচার-আচরণ পালন করে এসেছে। সে পুজোর জামাকাপড় দেওয়া থেকে, জামাইষষ্ঠী-দোলের তত্ত্ব... কিছুই বাদ যায়নি কোনওদিন। কতবার মাকে বলেছি, মা এই বয়সে আর এত সব কোর না। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
আমাদের বাড়ির একটা নিয়ম আছে জানেন, জামাইষষ্ঠীর দিন মেয়ের বাড়ি থেকে জামাইয়ের জন্য আম পাঠাতে হবে। গত বছর অবধিও মা আমাকে ও অতনুকে নিয়ম করে আম পাঠিয়েছে।
ফিরে দেখা: বিয়ের দিনে স্বামী অতনুর সঙ্গে অপরাজিতা
তবে এ বার সব কিছুই কেমন আলাদা। করোনা, আমপান তো রয়েছেই... তা ছাড়া মায়ের শরীরটাও বিশেষ ভাল যাচ্ছে না বেশ কয়েক দিন ধরে। মা দীর্ঘ ৩৬ বছর স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। এখনও রাস্তায় দেখা হলে প্রাক্তনীরা জড়িয়ে ধরে, খবর জানতে চায়...কিন্তু এই লকডাউনে তো একেবারেই বাড়ির মধ্যে, তাই মানসিক দিক দিয়েও কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মা।
আরও পড়ুন- মাছ, মাংস, পাঁচ রকমের ভাজা দিয়েই কাটত জামাইষষ্ঠী, তবে এ বার..: সুদীপ
মা’র হয়তো মনেও নেই, আজ জামাইষষ্ঠী। আমিও মনে করাইনি আর। কী হবে মনে করিয়ে? মা’র আরও মন খারাপ হবে। তার চেয়ে বরং মা কিছুটা সুস্থ হোক, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক...জামাইষষ্ঠী বা যে কোনও অনুষ্ঠান তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না, এ বারেরটা না হয় তোলা থাক পরের বারের জন্য।
আরও পড়ুন- উনিশ বছর বয়সে জামাই সেজে জামাই ষষ্ঠী পালন করতে খুব মজা পেয়েছিলাম