ছোটদের পঞ্চাশটি গল্প
লেখক: শেখর বসু
৩০০.০০
আনন্দ পাবলিশার্স
১৯৭৫ সালে শেখর বসু আনন্দবাজার সংস্থার একটি ইংরেজি দৈনিকে কর্মজীবন শুরু করেন। ওই সময় ‘আনন্দমেলা’র সম্পাদক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁকে এক দিন ডেকে বলেন, ‘তুমি আনন্দমেলার জন্যে একটা গল্প দাও তো।’ শেখর অবাক, ‘কিন্তু আমি তো কখনও ছোটদের জন্য লিখিনি।’ ‘লেখোনি তো কী হয়েছে? লেখো। সামনের মাসেই গল্পটা চাই।’ তিনি দু’মাস বাদে দিয়েছিলেন ছোটদের জন্য প্রথম গল্প ‘ভাগ্যিস ইনু ছিল’। এর পর জড়িয়ে পড়েন ছোটদের লেখায়। পাশাপাশি চলতে থাকে বড়দের জন্য লেখাও। তবে দুই ধারার গল্প লিখতে গিয়ে তাঁকে কখনও বিড়ম্বিত হতে হয়নি। তাঁর উপলব্ধি: ‘সঙ্গে সঙ্গে এটাও টের পেয়েছিলাম ছোটদের লেখা কয়েক ঝলক মুক্ত বাতাস নিয়ে আসে। বড়দের লেখার ক্ষেত্রে ওই বাতাস কোনও বাধা সৃষ্টি করে না, বরং সাহায্যই করে থাকে। কারণ, বড়দের লেখাতেও ছোটরা আসে।’ আলোচ্য সংকলনটিতে ‘আনন্দমেলা’য় প্রকাশিত সুখপাঠ্য কুড়িটি গল্প স্থান পেয়েছে। বাকি গল্প ছোটদের অন্যান্য পত্রিকা থেকে নির্বাচিত। গল্পে কোনও ভূত চাউমিন খেতে ভালবাসে, কেউ ভালবাসে ভূতেদের ইতিহাস লিখতে— এ রকম মজাদার কাহিনি যেমন আছে, তেমনই আছে ব্যাংক-ডাকাত ধরা পড়েছিল টাকার থলে লাফিয়ে চলার ঘটনায়— এর মতো রহস্যকাহিনিও।
গোল্লাছুট
লেখক: কাশীনাথ ভট্টাচার্য
৬০০.০০
৯ঋকাল বুকস
ফরিদপুর থেকে নবীনকিশোরী দেবী আসছিলেন কলকাতায় ছেলে গোষ্ঠ পালের কাছে। সীমান্তে খুব কড়াকড়ি। রক্ষীদের প্রশ্নে প্রশ্নে ব্যতিব্যস্ত বৃদ্ধা। সুটকেস খুলতেই হবে, দেখাতে হবে কী কী আছে! সুটকেস খুলতেই ছেঁড়া ময়লা শাড়ির ওপরেই রাখা একটি ছবি। তা দেখে পুলিশ অফিসারের চোখ কপালে— ওঁকে চিনলেন কী করে? আপনার সঙ্গে ওঁর ছবি কেন? বৃদ্ধা বলেছিলেন, ‘ওইডা তো আমার পোলা!’ এর পর বৃদ্ধা এমন আদর পেতে থাকলেন যে তিনি ছেলেকে শুধিয়েছিলেন, কী এমন করিস যে তোর মাকে এত খাতির যত্ন করে সীমান্তের পুলিশ? শুনে গোষ্ঠ বলেছিলেন, ‘কিসসু না গো মা, শুধু বলে লাত্থাই!’ আলোচিত বইটিতে এ রকমই ফুটবলের বাইরের হরেক খবর যেমন সাবলীল বাংলায় বর্ণিত আছে, তেমনই আছে শৈলেন, বদ্রু, পিকে, বলরাম, অমল, চুনী, পেলে, মারাদোনা, রোমারিয়ো, রোনাল্ডো, জিদান থেকে শুরু করে হাল আমলের লিয়োনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোদের ফুটবল কৌশলের বিশদ বিবরণ এবং ফুটবল সম্পর্কিত হাজারো তথ্য। আর আছে ১৯৬২-র এশিয়ান গেমস ফুটবলে সোনাজয়ীদের মূল্যবান স্মৃতিচারণা।
শতায়ু বিজন
সম্পাদক: কুন্তল মিত্র ও ফণিভূষণ মণ্ডল
৪০০.০০
অক্ষর প্রকাশনী
‘শতবর্ষে তাঁর কথা তেমন করে খুব বেশি মানুষ মনে রেখেছেন এমন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না...’ এমন মন্তব্য করার পাশাপাশি সৌমিত্র বসু এও লিখছেন, ‘মিথ হয়ে ওঠার সমস্ত উপকরণ থাকা সত্ত্বেও বিজন সেই অভ্রংলিহ চূড়া স্পর্শ করলেন না, হয়তো অবহেলায় ছুঁড়ে ফেলে দিলেন সেই উচ্চতাকে।’ সামগ্রিক ভাবে নানান দৃষ্টিকোণ থেকে বিজন ভট্টাচার্যকে (১৯১৫/১৭-১৯৭৮) বোঝার চেষ্টা বইটিতে। যাঁরা তাঁকে দেখেছেন, তাঁর নাটকে অভিনয় করেছেন, তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁরা যেমন লিখেছেন তাঁকে নিয়ে, তেমনই আবার নাট্যকার হিসেবে তাঁর নাটকগুলির আলোচনাও ঠাঁই পেয়েছে বইটিতে। এমনকী বিজনবাবু আর তাঁর বন্ধুদের সম্পর্ক নিয়েও রচনা আছে। এক সাক্ষাৎকারে হরিমাধব মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন ‘বিজনদার মতো বোধ হয় আমার মনে হয় বা ঋত্বিকের মতো indian soil, indian attitude towards religion, towards our life, culture, heritage— এটা কেউ সেভাবে বোঝেনি— এই রকম নাট্যকার বাংলায় দেখিনি।’ বিজনবাবুর বিস্তারিত কালানুক্রমিক জীবনকথা থেকে তাঁর নাটক রচনা-প্রকাশ-অভিনয়-প্রযোজনা-পরিচালনার বিবরণ এ-বইয়ের পরিশিষ্টে। নাটককার হিসেবে তাঁর কলমের শক্তির কথা মুখবন্ধ-এ লিখেছেন পবিত্র সরকার: ‘তাঁর অভিজ্ঞতা-পরিধি ছিল বিশাল, উচ্চমধ্যবিত্ত জীবন থেকে গ্রামীণ চাষি-বেদে-শ্রমিকদের জীবন পর্যন্ত— সকলের মুখের বাগভঙ্গিটি তিনি অনায়াসে তুলে আনতে পারতেন।’ নিজের বিশ্বাস বা মূল্যবোধে বরাবরই যে অটুট ছিলেন বিজন ভট্টাচার্য, তা তাঁর সৃষ্টি থেকেই শুধু নয়, লেখা থেকেও উপলব্ধি করা যায়: ‘কাজের ফাঁকে আজও স্বপ্ন দেখি, খরাপোড়া উষর প্রান্তরের এ কোণে চুপ করে বসে সমুদ্যত সহস্র কাস্তের মুখে ধানকাটার গান শুনি। লে-অফ আর লক-আউট-অভিশপ্ত ফ্যাক্টরি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে যন্ত্রেমন্ত্রে চৌদুনি উৎপাদনের অর্কেস্ট্রা বাজাই। চারণের আর কী কাজ থাকতে পারে।’