রবীন্দ্র-গানের স্বরলিপিকার
লেখক: পীতম সেনগুপ্ত
৩০০.০০
সাহিত্য সংসদ
‘আমি সুর রচনা করি, সুর ভুলি, স্বরলিপি করতে জানি নে! আমার জীবনে যত সুর বেঁধেছি তার অনেকগুলিই হয়েছে হারা— যারা শিখেছে এবং লিখেচে, আমার প্রয়োজন ঘটলে তাদের কাছ থেকেই আমার নিজের গান সংগ্রহ করে নিতে হয়।’ রবীন্দ্রনাথ প্রয়োজনে যাঁদের কাছ থেকে নিজের গান সংগ্রহ ক’রে নিতেন, সে-সমস্ত গুণীমানুষের কথা ক’জনই-বা জানেন, অথচ তাঁরা কত যত্নে কবির গান ও সুরকে বেঁধে রেখেছিলেন! ছেষট্টি খণ্ড মুদ্রিত হওয়ার পরও আজ আরও স্বরবিতানের কাজ চলছে বিশ্বভারতী-তে। সেই স্বরলিপিকারদের সঙ্গে পরিচয় করাতেই পীতম সেনগুপ্তের এই পরিশ্রমী গ্রন্থটি। ‘দেখতে চেয়েছি রবীন্দ্র-গানের সুরের আসনখানি কেমন করে তাঁরা পেতেছিলেন।’ প্রাক্-কথন-এ জানিয়েছেন পীতম। অনাদিকুমার দস্তিদার থেকে ইন্দিরা দেবী দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, শৈলজারঞ্জন মজুমদার থেকে সুভাষ চৌধুরী... স্বরলিপিকারদের মধ্যে কে-না এসেছেন তাঁর আলোচনায়। যেমন দিনেন্দ্রনাথ সম্পর্কে লিখছেন ‘এক বিচিত্র প্রতিভাধর মানুষ। তিনি ছিলেন কবি, গীতিকার, সুরকার, সংগীত শিক্ষক-পরিচালক, গায়ক, অভিনেতা, লেখক, বহুভাষাবিদ, অনুবাদক এবং হুল্লোড়প্রিয় আমুদে আদ্যন্ত দিলখোলা এক পুরুষ।’ কিন্তু বাঙালি তাঁকে চেনে কেবলমাত্র রবীন্দ্রনাথের ছায়াসঙ্গী হিসেবে, অথচ কবি স্বয়ং ‘আমৃত্যু তাঁর এই নাতির অসাধারণ ভূমিকার কথা নানা পরিসরে স্বীকার করে গেছেন।’ মন্তব্য পীতমের।
ভবতোষ দত্ত প্রতিক্ষণ সংকলন
সম্পাদক: স্বপ্না দেব
৮০০.০০
প্রতিক্ষণ
পড়লেই মন ভাল হয়ে যায়, এমন লেখকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। ভবতোষ দত্ত ছিলেন তেমনই এক জন। অর্থনীতির প্রগাঢ় পণ্ডিত, খ্যাতনামা অধ্যাপক, এমন সব গুরুতর পরিচয় ছাপিয়েও যে কারণে তাঁর লেখক সত্তাটি বাঙালি পাঠকের চোখ এড়ায়নি। তাঁর এক বন্ধুর পৈতৃক কবিরাজি ওষুধের দোকান ছিল। বাবা আর কাকার অনুপস্থিতিতে বন্ধুটি এক দিন দোকানে বসে। এক ক্রেতা এসে খাঁটি মধু চাইতে প্রেসিডেন্সি কলেজের রসায়নের ছাত্র বন্ধুটি জানায়, ‘খাঁটি’ মধু নেই, কারণ যতই সাফ করা হোক, কিছু অশুদ্ধতা মধুতে থেকেই যায়! ক্রেতা ফিরে গেলেন বটে, কিন্তু অধ্যাপক দত্তের মনে থেকে গেল সততার একটি বিরল পাঠ। এমনই সব গল্প, যেখানে কলুষতা নেই, বিদ্বেষ নেই, আছে শুধু মানুষের ভালত্বের হরেক বিবরণ, ভবতোষ দত্তের লেখার পাতায় পাতায়। ‘প্রতিক্ষণ’ তাঁর তিনটি বই— দৃষ্টিকোণ, আটদশক ও তামসী-কে একত্র করে প্রকাশ করল ভবতোষ দত্ত প্রতিক্ষণ সংকলন। একটিই খুঁত থেকে গেল। যদিও স্মৃতিচারণ, তবু অধ্যাপক দত্তের চরিত্রের কথা মাথায় রাখলেই বোঝা যায়, লেখাগুলোয় তিনি অতি প্রচ্ছন্ন, নিজেকে যতখানি অপ্রকাশ রাখা সম্ভব, তারও বেশি। বইটির সূচনায় যদি তাঁর সম্বন্ধে একটি লেখা থাকত, অপরিচিত পাঠকের পক্ষে কি এই বিরল বঙ্গসন্তানটিকে চেনা আর একটু সহজ হত না?
মাতৃকাশক্তি
লেখক: অশোক রায়
৪০০.০০
আনন্দ পাবলিশার্স
‘শিবশক্তি বা বিষ্ণুমায়া, সাংখ্যের প্রকৃতি-পুরুষ, বেদান্তের ব্রহ্ম-মায়া, মহাযান বৌদ্ধ ধর্মে প্রজ্ঞাপারমিতা বা প্রজ্ঞা-উপায় বা নারী-পুরুষ ও তন্ত্রের (আগম-নিগম) শিব-শক্তি, এঁরা সবাই কোন এক জনপ্রিয় পদ্ধতিতে সমাজের স্রোতেই মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।’ লিখছেন অশোক রায়, তাঁর বইয়ের ভূমিকায়। মা-দুর্গা বিষ্ণুমায়া না শিবশক্তি, এই প্রশ্ন থেকেই তাঁর অনুসন্ধান শুরু, পড়তে পড়তেই গ্রন্থনির্মাণের পরিকল্পনা। বিশাল প্রেক্ষিতে তিনি ধরেছেন ভারতে মাতৃকাশক্তির বিকাশ ও বিস্তারকে। অনেকখানি পিছিয়ে গিয়ে শুরু করেছেন ‘সৃষ্টি’ থেকে— বিভিন্ন জনের বিচিত্র উপলব্ধিতে সৃষ্টিতত্ত্বের কথা সেখানে। এগিয়েছেন ‘প্রাগৈতিহাসিক কাল ও আদিম মানবের ধর্ম’ হয়ে ‘সিন্ধু সভ্যতায় মাতৃপূজা’য়। পাশাপাশি বৈদিক ও পৌরাণিক যুগে মাতৃপূজার বিবর্তন, বৌদ্ধ ধর্মের উত্থান থেকে বৌদ্ধ দেবদেবীর প্রচলন, হিন্দু ও বৌদ্ধ তন্ত্রমত থেকে পৌঁছেছেন শক্তি ও শাক্তধারায়, তাঁর মূল আলোচ্যে। দেখিয়েছেন ঋগ্বেদের স্ত্রী দেবতাদের মধ্যে কাউকেই অবলম্বন করে শক্তি উপাসনার অগ্রগতি হয়নি। বরং অম্বিকা, উমা, দুর্গা, কালীর নাম পাওয়া যায় উত্তরবৈদিক সাহিত্যেই। আবার, তাঁর কথায়, ‘এই বৌদ্ধ দেবীরা ও হিন্দু দেবীরা সবাই-ই এক বৃহত্তর ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় দেবী।’ আছে দেবী পূজার কথা, মা কালীর প্রাচীনত্ব, তন্ত্র কী ও তার তত্ত্বব্যাখ্যা, একান্ন পীঠের তত্ত্ব, সঙ্গে হিমাচলের শক্তিপীঠ ও কামাখ্যা ভ্রমণের বৃত্তান্ত। অশোক রায় বিশেষ ভাবে তুলে এনেছেন বাংলা দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ধারা। সব মিলিয়ে সহজ ভাষায় মাতৃপূজা ও শক্তিসাধনার বিস্তারিত ইতিবৃত্ত দুই মলাটে।