আন্তর্জাতিক আঙ্গিক/ নির্বাচিত সংকলন
সম্পাদক: সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ও উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৫০.০০
দে’জ পাবলিশিং
“ন্যুভেল ভাগ বলে কিছু নেই। আসলে সমালোচকেরা একটা নাম দিতে ভালোবাসে।... আমি যদি মনে করি হিরোশিমা মন আমুর-এর ফর্ম-এ আমার বক্তব্য সব চেয়ে ভালো করে প্রকাশ করতে পারব, তবে তাই করব। কিন্তু শুধু একেই নব তরঙ্গ বলে না। আজ গদার যে ভাবে দেখতে চাইছেন, ব্রেশ্ট বহু আগেই সেভাবে দেখেছেন।” ঋত্বিক ঘটকই পারেন এমন তর্ক-তোলা সাক্ষাৎকার দিতে।
ফিল্ম সোসাইটির পত্রপত্রিকার অন্যতম লেখক অজয় বসু লিখেছেন, ঋত্বিকের কথা শুনতে ভাল লাগে তাঁর ‘বলার স্পর্ধার জন্যে’। যেমন ‘বার্গম্যান প্রসঙ্গ’ রচনাটিতে ঋত্বিকের মন্তব্য: “ভদ্রলোকের দ্য সেভেন্থ্ সীল অথবা দ্য ফেস দেখে আন্তরিকতার অভাব এবং চিন্তাশূন্য চমক ছাড়া আর কিছু মনে হয়নি।”
সিনেমা নিয়ে এমন যুক্তি-তর্কেরই এক চালচিত্র হয়ে উঠেছিল আন্তর্জাতিক আঙ্গিক। পত্রিকাটি (শুরুতে নাম ছিল আঙ্গিক) প্রকাশ পেতে শুরু করে ষাটের দশকের মধ্যপর্ব থেকে, নামের মধ্যেই ছিল চলচ্চিত্রের শিল্পরূপের কথা। প্রায় প্রতিটি সংখ্যাতেই ছড়িয়ে থাকত গুণী লেখকদের মেধার স্ফুরণ। পড়তে পড়তেই টের পাওয়া যায়, গত শতকে দেশভাগের মতো বিপর্যয় সত্ত্বেও স্বাধীনতার পর বাঙালির মনন কত অনায়াসে বিচরণ করত শিল্পের নন্দন আর তার বহুত্বে।
সত্যজিৎ রায় যেমন জন ফোর্ডের ছবির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে লিখছেন, “এর তুলনা মেলে পাশ্চাত্য সংগীতে সুরকার বেঠোফেনের মধ্যপর্বের রচনায়। সেই একই বলিষ্ঠ কাঠামো, সেই সহজ ও গভীর মানবিক আবেদন, সেই বীরত্বব্যঞ্জক পরিসমাপ্তি।” মৃণাল সেন একটি সাক্ষাৎকারে বলছেন, “আমার মনে হয় আধুনিক সিনেমা কাহিনির জট ছাড়িয়ে এই যুক্তিহীনতা এবং inspired nonsense-এর দিকে আবার ফিরে যাচ্ছে।”
বিতর্ক, বহু স্বরের ভিতর দিয়ে ফিল্মের শিল্পচিহ্নকেই তাঁর পত্রিকায় জড়ো করেছিলেন সম্পাদক রানা সরকার (১৯৪৩-২০১০)। এই সঙ্কলন বলছে: “একবার ফিরে দেখলে কেমন হয়?... নানা ধরনের ভাবনা এসে ষাট-সত্তরে কলকাতাকে মোহিত করেছিল। রানা সরকারের সৌজন্যে সেই অযুত চিন্তারাজি নথিভুক্ত রয়েছে এই পত্রিকায়।” এই ফিরে দেখার ভিতর দিয়ে পাঠক হয়তো বুঝবেন, সিনেমা যেমন একটা শিল্প তেমনই তা দেখাটাও একটা শিল্প।