বলাকা সাহিত্য পত্রিকা ১৯৯২-এ যাত্রা শুরু করেছিল। নিয়মিত অনিয়মিত যে ভাবেই হোক, চব্বিশ পার করে পঁচিশে পা দেওয়া খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়। তাই ‘এই সংখ্যায় পত্রিকাটির একটা ছোট্ট ইতিহাস থাকা বাঞ্ছনীয়’ মনে করেছেন সম্পাদক ধনঞ্জয় ঘোষাল, ‘সম্পূর্ণ নির্মোহ দৃষ্টি নিয়ে শুধু কাজের কথা নিয়ে বলাকার পঁচিশ বছরের ঘরের কথা লেখা কঠিন। আমি জানি এই সংখ্যাটি তেমন ভাবে হয়তো কারও কাজেই আসবে না। তবু সমকালের একটা ইতিহাস ধরা রইল এই যা।’ পুরনো প্রচ্ছদ দিয়ে গাঁথা এই সংখ্যার প্রচ্ছদ। পাঁচটি পর্বে বিভক্ত ১৭৬ পৃষ্ঠার পত্রিকাটি এককথায় অনবদ্য।
যে কোনও আন্দোলনই রূপান্তরের পথিক। পরিবর্তনের চালক। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৬৬ সালের খাদ্য আন্দোলন এমনই পট পরিবর্তনের বাহক হিসেবে চিহ্নিত। খাদ্য আর কেরোসিনের দাবিতে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে শুরু হয়েছিল এই আন্দোলন। ‘খাদ্য আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর’ এখন ইছামতী বিদ্যাধরী (সম্পা: অসীমকুমার রায়, অতিথি সম্পা: অনিল ঘোষ) পত্রিকাটির এই সংখ্যার বিষয়। সে দিনের চার জন ছাত্র, যাঁরা সরাসরি যুক্ত ছিলেন ওই আন্দোলনে, তাঁরা লিখেছেন স্মৃতিকথা। এ ছাড়া প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, কবিতাও আছে সংখ্যাটিতে।
হেনরি মিলারের পাঠক মূলত দু’ধরনের। একদল মিলার পড়েন পর্নোগ্রাফির আনন্দ নেওয়ার জন্য। আর এক দলের কাছে মিলার সাক্ষাৎ ‘সন্ত’। ব্যক্তি মিলার কেমন ছিলেন এবং তাঁর সাহিত্যের মূল্যায়ন সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে করা সম্ভব কি না— তা-ই কবিতীর্থ (সম্পা: উৎপল ভট্টাচার্য) পত্রিকার বর্তমান সংখ্যার আলোচ্য বিষয়। ‘আমাদের কথা’য়, ‘এত দিনে ‘ট্রপিক অব ক্যানসার’ এবং ‘ক্যাপ্রিকর্ন’ বেস্ট সেলার হয়েছে। ‘রোসি ক্রুশিফিকশন ট্রিলজি’ও এসেছে প্রচারের আলোয়। কিন্তু ‘পর্নোগ্রাফির সস্তা লেখক’ তকমাটা হেনরি ভ্যালেন্টাইন মিলারের গা থেকে যেন কিছুতেই আর উঠল না।’ তাঁরই একশো পঁচিশতম জন্মবর্ষে এই শ্রদ্ধার্ঘ্য-সংখ্যা।
‘খুঁজে খুঁজে বউবাজারের এক গলির মধ্যে অনিল বাসা ঠিক করলে। দোতলায় এক কবুতরের খোপ। তা হলেও আলো হাওয়া যেটুকু আছে তা ভালোই। সামনে হাতখানেক পাশের এক বারান্দা; পাক করবার জন্য ব্যবহৃত হয়। তার এক তৃতীয়াংশ পড়েছিল অনিলের ভাগ্যে। পারুল তবুও খুশিই হল। গ্রামের মেয়ে হলেও গ্রামের মতো এত জায়গা যে কলকাতায় পাওয়া যায় না, এ ধারণা তার আছে।’ নরেন্দ্রনাথ মিত্র লিখেছেন তাঁর ‘ভীড়’ গল্পে। পদক্ষেপ (সম্পা: অভিজিৎ মিত্র, সহ সম্পা: বন্দনা বসু, বিভাবসু মিত্র) পত্রিকার এ বারের বিষয় ‘কথা সাহিত্যে কলকাতা’। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রতিভা বসু, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, নবেন্দু ঘোষ, সন্তোষকুমার ঘোষ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়— এঁদের সকলের বিষয় কলকাতা। কয়েক জন লেখকের কলকাতাকে নিয়ে গল্প পুনর্মুদ্রিত হয়েছে।
১৯৭৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় কিঞ্জল (সম্পা: চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, সহ সম্পা: মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়)। সম্প্রতি, তার ৪০তম বর্ষে ‘নির্বাচিত ২ কিঞ্জল’ প্রকাশ পেল। ২০০৪-এ কিঞ্জলের নির্বাচিত প্রথম সংগ্রহটি প্রকাশিত হয়। এই সংখ্যায় ২০০৬-১১-র মোট পাঁচটি সংখ্যার নির্বাচিত লেখা পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। নবনীতা দেব সেন লিখেছেন, ‘কিঞ্জল হাসে, হাসায়। চিমটি কাটে না। কারুর পা ধরে হ্যাচকা টান মারে না। কিঞ্জল বিমল আনন্দে আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে থাকে, অমলিন রাখে পাঠকের সুরুচি।’
তিনি বলতেন, যে বয়সে পুতুল খেলে মেয়েরা, তখন আমি অভিনয় করে রোজগার করতে নেমেছিলাম। ১৯২৬ সালে মাত্র দশ বছর বয়সে নির্বাক ‘জয়দেব’ ছবিতে কাজ শুরু করেন। ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার প্রাপক কানন দাস ওরফে কাননবালা ওরফে কাননদেবী শূন্যের নীচে থেকে শুরু করে খ্যাতির শেষ সীমায় পৌঁছে কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন। গত বছর ছিল তাঁর জন্মশতবর্ষ। তাই তাঁর সম্মানেই ধ্রুবজ্যোতি মণ্ডল ও সুগত রায়, সর্বজিৎ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈশাখী পত্রিকার সংখ্যা ‘শতবর্ষে কাননদেবী’। বইটিতে শিল্পীকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, দেবারতি মিত্র, পরিমল রায় প্রমুখ। পুনর্মুদ্রিত হয়েছে নানা শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং ’৮৭-’৮৮ সালের সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও কাননদেবীর কথোপকথন। সংখ্যাটিতে শিল্পীর বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য ছবি তো আছেই, উপরি পাওনা তাঁর অভিনীত ‘শেষ উত্তর’ ছবির চিত্রনাট্য, চলচ্চিত্র পঞ্জি, তাঁর গাওয়া সিনেমার নির্বাচিত গান।
ভীমরাও অম্বেডকরের সমাজভাবনার প্রাসঙ্গিকতা আজকের দিনে কোথায়, কতটুকু, তার গ্রহণীয় দিকগুলো কী, কোনগুলোই বা গ্রহণীয় নয়— এই প্রশ্নগুলোই তুলে ধরা হয়েছে বইমেলা বিশেষ সংখ্যা সংবর্তক-এ। ‘দেশজুড়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডব, মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারকে কেড়ে নিয়ে তাতে দেশদ্রোহিতার লেবেল সেঁটে দেওয়া, জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় ঐতিহ্যকে আধিপত্যকামী সংকীর্ণ হিন্দু জাতীয় ঐতিহ্যে পর্যবসিত করে দেশের আবহমান সংস্কৃতির ইতিহাসকে বিকৃত ভাবে উপস্থাপিত করার প্রচেষ্টা, আর তারই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মদতে ‘দলিত’ সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু জনসাধারণের ওপর হিন্দুত্ববাদীদের ক্রমবর্ধমান হিংস্র আক্রমণ’-এ সম্পাদক সৌরভ রঞ্জন ঘোষ উদ্বিগ্ন। তাই এই সংখ্যায় ফিরে দেখা হয়েছে অম্বেডকরের জীবন ও সংগ্রাম।
শঙ্খ ঘোষ সম্পর্কে অশ্রুকুমার সিকদার লিখেছেন ‘নিচুগলা নিচু রেখে/কোনওদিন মানবে না/ক্ষমতার ফোঁস।’ তাঁর রবীন্দ্রচর্চা প্রসঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মনে হয়েছে ‘নিছক ভক্তিবাদ থেকে অনেক দূরে থেকেছেন তো বটেই, তথ্যকে কেমনভাবে তত্ত্ব করে তুলতে হয়, তার নজির রয়েছে তাঁর প্রতিটি গদ্য গ্রন্থে।’ আর জয় গোস্বামী জানিয়েছেন ‘শঙ্খ ঘোষের লেখা আমায় শিখিয়েছে নিজের আঘাত ব্যক্তিস্তরে না রেখে বড় কোনও সামাজিক আঘাতের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতে হয়।’ এ ভাবেই তাঁকে নিয়ে কারুকথা এইসময়-এর (সম্পা: সুদর্শন সেনশর্মা) ‘শঙ্খ ঘোষ সম্মাননা সংখ্যা’য় লিখেছেন নানা বিশিষ্ট জন। আছে তাঁর পদ্য গদ্যের পুনর্মুদ্রণ, সঙ্গে জীবন ও গ্রন্থপঞ্জি।