নাটক ও কাব্যনাটক সমগ্র/ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সম্পাদক: মলয় রক্ষিত ও কাজি তাজউদ্দিন
৫০০.০০
আনন্দ পাবলিশার্স
উপন্যাস-গল্প-কবিতার পাশাপাশি বেশ কিছু নাটকও লিখেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। গদ্যনাটক, শ্রুতিনাটক, সংলাপকাব্য কিংবা কাব্যনাটক— নাটকের সব ধারাতেই তাঁর ছিল অনায়াস বিচরণ। ব্যস্ত জীবনেও শৌখিন নাট্যসংস্থা ‘বুধসন্ধ্যা’য় অভিনয় করেছেন। ১৯৭৫ নাগাদ আকাশবাণীতে অভিনয়ের জন্য কবিতা সিংহের অনুরোধে লেখেন প্রথম কাব্যনাটক ‘প্রাণের প্রহরী’। তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘নাটক’ মানে অঙ্ক-দৃশ্য বিভাজিত, সংলাপ ও ঘটনা-পরম্পরায় সজ্জিত এবং যার একমাত্র সার্থকতার মানদণ্ড অভিনয়-সাফল্য। প্রাণের প্রহরী-র ‘মুখবন্ধ’-তে সুনীল লিখেছেন, ‘...বন্ধুবর অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী কেয়া চক্রবর্তী এবং আরও কেউ কেউ একাধিকবার আমাকে নাটক রচনায় প্ররোচিত করতে চেয়েছেন, কিন্তু আমি সাহস সঞ্চয় করতে পারিনি। আমার ধারণা, সাহিত্যের এই আঙ্গিকটির জন্য আলাদা ধরনের নৈপুণ্যের প্রয়োজন। কিন্তু চরিত্রের মুখে সংলাপ বসিয়ে একটি কাহিনী সাজালেই তা নাটক হতে পারে না। ...যে নাটকের অভিনয় উপযোগিতা নেই, তা নাটকের আকারে লেখার কোনও সার্থকতা থাকতে পারে না। মঞ্চের প্রয়োগকৌশল না-জানা থাকলে দৃশ্য-সৃষ্টি কৃত্রিম হয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই। মঞ্চজ্ঞান থাকলে নাট্যকারেরা যে কোনও বাস্তব, দুর্জ্ঞেয়, বিমূর্ত বিষয়কেও দর্শকদের সামনে উপস্থাপিত করতে পারেন।’ আলোচ্য সংকলনটিতে তাঁর সব ক’টি কাব্যনাটক, গদ্যনাটক, ছোটদের নাটক স্থান পেয়েছে। আছে অসমাপ্ত দুটি অনুবাদ নাটক ও একটি নাটকের সংযোজিত পাঠ।
সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি ও বিপন্ন সময়
লেখক: অশোক চট্টোপাধ্যায়
১৬০.০০
ছোঁয়া
আমাদের দেশে এ পর্যন্ত যত দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে— তাতে প্রায় সব দাঙ্গাতেই নিহতের সংখ্যা বেশি মুসলিমদের, হিন্দুদের কম। ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা বেশি মুসলিমদের, হিন্দুদের কম। গ্রেফতারের সংখ্যাও বেশি মুসলিমদের, হিন্দুদের কম। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্যের উল্লেখ করার পাশাপাশি প্রাপ্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে এও খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন লেখক, ভারতে বিভিন্ন পুলিশবাহিনীতে মুসলিমদের সংখ্যা রীতিমতো নগণ্য। তার পর প্রশ্ন তুলেছেন ‘পুলিশবাহিনীতে মুসলিম সম্প্রদায়ের এই নগণ্য সংখ্যাতত্ত্ব কোন ইঙ্গিত বহন করে?’ ২০১৪-২০১৭-র মধ্যে রচিত ছোট-বড় নানা প্রবন্ধে সাম্প্রদায়িক বিভাজন-পীড়িত রক্তাক্ত স্বদেশের কথাই তুলে এনেছেন লেখক, সঙ্গে স্পষ্ট করেছেন নিজের মতও: ‘হিন্দুত্ববাদীরা পরমতসহিষ্ণুতার বিন্দুমাত্র নিদর্শন না রেখে উগ্রতা প্রকাশে অবাধ নজির সৃষ্টি করে চলেছে।’
আজও তারা পিছু ডাকে
লেখক: শোভা ঘোষ
৩০০.০০
অরুণা প্রকাশন
‘এবারে একটু পড়াশুনায় মন দেওয়া দরকার।’ শোভা ঘোষের এই আত্মকথনকে বাঙালির সমৃদ্ধ অতীতের স্মরণ বললেই বোধহয় তাঁর রচনাগ্রন্থটি যথার্থ সম্মান পায়। আমরা তো কেবল উনিশ শতকীয় রেনেসাঁসে কৃত পুরুষদের আলোচনাতেই সীমায়িত থাকি, কিন্তু কতটুকুই-বা খেয়াল রাখি, পারিবারিক জীবনধারা বজায় রেখেই বাঙালি মেয়েরা কী ভাবে তাঁদের শিক্ষার অভ্যাস বজায় রাখতেন, মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজকে পিছুটান থেকে নতুন জাগরণের দিকে ঠেলে দিতেন... আজও তারা পিছু ডাকে তেমনই একটি বই। ‘গ্রন্থকর্ত্রী নিপুণভাবে তৎকালীন পূর্ববাংলার সমাজব্যবস্থা, শিক্ষাদীক্ষার একটা সামগ্রিক চিত্র এঁকেছেন... অত্যন্ত নিকট হতে দেখা বাঙ্গালীর জীবনেতিহাস।’ হরেন্দ্রনাথ মজুমদার লিখেছেন ভূমিকা-য়। রচয়িতার দৌহিত্রী আবার একালের যশোধরা রায়চৌধুরী, যিনি তাঁর সাম্প্রতিক স্মৃতিগ্রন্থে শোভা ঘোষ সম্পর্কে লিখেছেন ‘‘পড়েছি দিদার স্মৃতিকথা ‘আজো তারা পিছু ডাকে’ বইতে। কীভাবে শ্বশুরবাড়ি থেকে ম্যাট্রিক পাশ মেয়েটিকে বেথুনে পড়ার উৎসাহ যোগানো হল।... বরিশালের গাভার ঘোষ পরিবার। দেবপ্রসাদ ঘোষ, আমার দাদু ছিলেন আলোকময় সেই জাগরণ-সময়ের এক অন্যতম মশালবাহী। বরিশালের অশ্বিনী দত্তের সাক্ষাৎ শিষ্য... দেবপ্রসাদ নিজের স্ত্রীকে বাড়িতে বসে থেকে সময় নষ্ট না করে পড়তে পাঠান।’’ নতুন প্রজন্মের অবশ্যপাঠ্য।