রেভলিউশনারি ভায়োলেন্স ভার্সাস ডেমোক্র্যাসি/ ন্যারেটিভস ফ্রম ইন্ডিয়া
সম্পাদক: অজয় গুরাবর্তি
৭৫০.০০
সেজ
আজকের এই বদলে যাওয়া দুনিয়ায় রাজনৈতিক হিংসার প্রাসঙ্গিকতা কতটা? কতটাই বা তার অপশাসন ভেদের শক্তি? ভুবনায়নের এই যুগে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুললেই কি প্রকৃত সংস্কার হয় না কি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারীরাই আর একটি বিকল্প ক্ষমতা হয়ে ওঠে? এই প্রশ্নগুলো ওঠা স্বাভাবিকও বটে।
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে উত্তরবঙ্গের এক অখ্যাত গ্রাম নকশালবাড়ি থেকে বসন্তের যে বজ্রনির্ঘোষ শুনতে পেল গোটা দুনিয়া, পঞ্চাশ বছরে সেই বিপ্লবের রূপান্তর ঘটল কী ভাবে? এই গ্রন্থে নানা দিক থেকে তার হদিস দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সম্পাদক। যাঁরা লিখেছেন, তাঁরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশিষ্ট। যেমন, ভারাভারা রাও, আনন্দ তেলতুম্বড়ে, জি হরগোপাল, নীরা চান্দোক, সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, কে বালাগোপাল, চিত্রলেখা, লিপিকা কামরা, উদয় চন্দ্র। গ্রন্থটি তিনটি পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বে গণতন্ত্রের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা আলোচিত হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে উল্লেখ করা হয়েছে এই হিংসার ব্যবহার নিয়ে নানা বিভ্রান্তির কথা। এসেছে নাগরিক জীবন ও সমাজে তার প্রভাবের প্রসঙ্গও। তৃতীয় পর্বে বিপ্লবী পথের ও পন্থার নানা টানাপড়েন ও প্রশ্ন উঠে এসেছে। মূল ধারার গণতান্ত্রিক পথই শ্রেয় না কি অদূর ভবিষ্যতে শুধুমাত্র বিপ্লবের পথকেই আঁকড়ে ধরা যাবে?
চমৎকার ভাবনার সূত্র ধরিয়ে দিয়েছেন এ গ্রন্থের সম্পাদক অজয় গুরাবর্তি। তিনি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) সেন্টার ফর পলিটিক্যাল স্টাডিজের অধ্যাপক। এর আগেও তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে একাধিক গ্রন্থে।
ভারতীয় গণতন্ত্রের ভিতের মধ্যে জাতপাতের এতটাই প্রভাব যে মাঝেমধ্যেই নানা রূপে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কখনও হিংসার মধ্য দিয়ে, আবার কখনও বা তা দমাতে গিয়ে পাল্টা হিংসার মধ্য দিয়ে। ভিন্নতর এক ভাবনার জন্ম দিল এই গ্রন্থ।
সাসপেন্সের সম্রাট হিচকক
লেখক: প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
২৮০.০০
বুকফার্ম
প্রসিদ্ধ ইংরেজ নাট্যকার অ্যান্টনি শ্যাফার হিচকক-এর ‘ফ্রেনজি’ ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। লন্ডনে সত্তর দশকে সে ছবির শুটিং চলাকালীন ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ প্রশ্ন করেছিলেন ‘এই সিনেমার হিরো কে?’ শ্যাফার বলে ওঠেন ‘হিরোর নাম আলফ্রেড হিচকক।’ কথাটা খাঁটি, এতটাই বর্ণময় ও কর্মময় মানুষ ছিলেন হিচকক যে তাঁর তৈরি প্রায় প্রতিটি ফিল্মই দর্শককে এখনও বিস্ময়ে বাক্স্তব্ধ করে রাখে। তাঁর এই বিস্ময়কর প্রতিভা নিয়েই প্রসেনজিৎ দাশগুপ্তের বইটি, ব্যতিক্রমী প্রয়াস অবশ্যই। কারণ, হিচককের ছবি বাঙালির কাছে যতই জনপ্রিয় হোক, তাঁকে নিয়ে চর্চা বাংলায় খুব কমই হয়েছে। ‘হিচককের মতো সাসপেন্সকে যেমন অন্য কোনো চলচ্চিত্র নির্মাতা কখনো পরিবেশন করতে পারেননি, তেমনই ঠিক হিচককের মতো আশ্চর্য মানসিকতার মানুষও আর একটি খুঁজে পাওয়া দায়।’— ‘লেখকের কথা’য় জানিয়েছেন প্রসেনজিৎ। সাদাকালো স্থিরচিত্রে হিচককের কোনও-কোনও ছবির প্রস্তুতিপর্ব, কোনও-কোনওটি স্বয়ং হিচককের। রঙিন ছবিগুলি বিভিন্ন ফিল্মের পোস্টার। নির্বাক ও সবাক ছবির তালিকায় তথ্যের সঙ্গে কাহিনি-সংক্ষেপ। ‘‘হিচকক ‘হুডানইট’ পছন্দ করতেন না... দুষ্কর্মটি কে করেছে, তার সঙ্গে হিচকক তুলনা করেছেন জিগ্স পাজ্ল বা ক্রসওয়ার্ড পাজ্ল সমাধানের। এর মধ্যে আবেগ বা অনুভূতির কোনো স্থান নেই।’’ খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন লেখক।
নাট্যাচার্য শিশির কুমার ভাদুড়ী/ অমল মিত্র
সম্পাদক: লবকুমার বসু
৩৫০.০০
নিয়োগী বুকস
বাংলায় নাটক বা নাট্যব্যক্তিত্ব নিয়ে লেখা বইগুলো গম্ভীর, রাশভারী। গবেষক-রসজ্ঞরা ছাড়া সাধারণ নাট্যপ্রেমী হাত ছোঁয়াতে খানিক কিন্তু-কিন্তু করেন। শিশিরকুমার ভাদুড়ীকে নিয়ে লেখা ইংরেজি বইটি দেখে-পড়ে মনে হল, এমন ছিমছাম, পাঠকবান্ধব বই বাংলায় শেষ কবে দেখেছি? হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড কাগজে নাট্যাচার্য শিশিরকুমারকে নিয়ে বেশ কয়েকটি ইংরেজি প্রবন্ধ লিখেছিলেন নাট্যাচার্যের স্নেহধন্য, লেখক-গবেষক অমল মিত্র, সেগুলি নিয়েই এই বই। মূল্যবান প্রাপ্তি শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্বকথা ও আনন্দ লাল-কৃত ভূমিকা। রবীন্দ্রনাথ শিশিরকুমারকে বলেছিলেন ‘প্রয়োগকর্তা’, ব্যবস্থাপক-নির্দেশকের ভূমিকা ছাপিয়ে, মঞ্চের নান্দনিক থেকে ব্যবহারিক সমস্ত ক্ষেত্রে শিশিরকুমারের অবদান রবীন্দ্রনাথের এই আখ্যা কুড়িয়েছিল। পুদভকিন কলকাতায় তাঁর ‘সরসী’ নাটক দেখার পর বলেছিলেন, কী করে গোটা নাটকটা মঞ্চে ঘটবার সময় শিশিরকুমার ধাপে ধাপে দর্শকের মন-বুদ্ধি সহ গোটা অস্তিত্বটাই টেনে নেন। গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে শিশিরকুমারের নাট্য-সম্পর্ক নিয়ে লেখা অমল মিত্রের প্রবন্ধদু’টি অনবদ্য। ভারত সরকারের দেওয়া পদ্মভূষণ প্রত্যাখ্যান করে ফিরতি-চিঠিতে শিশিরকুমার লিখেছিলেন, তাঁর সারা জীবনের কাজ স্বীকৃতি পাবে যদি কলকাতায় সরকার একটি ‘জাতীয় নাট্যশালা’ তৈরি করেন। মঞ্চ, প্রেক্ষাগৃহের নীল-নকশা সম্বলিত সেই লেখাটিও আছে বইয়ে। আছে এ যাবৎ ‘অপ্রকাশিত’ ক’টি ছবি, কিন্তু পরিচিতি নেই কেন?