কলকাতার কুটিরশিল্প
দীপককুমার বড় পণ্ডা
২৫০.০০
সিগনেট প্রেস
উনিশ শতকের শেষ দিকে পোড়ামাটির পাত্রের কলকাতায় আমদানি নিয়ে কৌতূহলী প্রসঙ্গ উঠে আসে। ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের তথ্যে সে সময় কালির দোয়াত কলকাতাতেই তৈরি হলেও কলসি মালসা সরা আমদানি হত বালিগঞ্জ থেকে। আজ হয়তো এতে বিস্ময় জাগতে পারে, কিন্তু সে দিনের কলকাতার ভরকেন্দ্র আজকের সঙ্গে মিলবে না। জনবসতির বিন্যাস, নগরায়ণের বিস্ফারে শহরের চৌহদ্দি আজ বহুলাংশেই অস্পষ্ট। কলকাতার কুটিরশিল্পের অন্বেষণে— মাটি কাঠ পাট পাথর ধাতু শঙ্খ চিত্র বাঁশ বেত চামড়া বয়নশিল্প-সহ নানা উপাদানের কারিগরি ক্ষেত্রের মানচিত্র তৈরি হয়েছে। মৃৎপ্রতিমার কেন্দ্র হিসাবে কুমোরটুলি তো পরিচিত— কিন্তু কাঁসারিপাড়া, শাঁখারিটোলা, পটুয়াপাড়া ইত্যাদির জাতিগোষ্ঠীগত শিল্পকাজ আর নতুনবাজার গরানহাটা দক্ষিণদাড়ি চেতলা চিৎপুর কবরডাঙার মতো বহু জায়গার তথ্যে স্বতন্ত্র বিষয় প্রকাশিত হল। সন্ধানী দৃষ্টিতে নগর-পল্লিতে ঘুরে ঘুরে দীপক তথ্য সংগ্রহ করেছেন, পুরনো তথ্যের ধরতাই দিয়েছেন। কারিগর-শিল্পীদের বসবাস, বিপণন, চাহিদার গতিপ্রকৃতি জানাতেও তাঁর এই অভিজ্ঞতাঋদ্ধ রচনা। কলকাতার কুটিরশিল্প নিয়ে সহজ আলাপি বয়ানে পাওয়া গেল কারিগরদের যোগাযোগের ঠিকানাও। ন্যূনতম যান্ত্রিক উৎপাদনের এই কাজে শিল্পীগোষ্ঠীর পারিবারিক পরম্পরাগত কৃৎকৌশল সব ক্ষেত্রে হয়তো বজায় থাকে না। তবে সূত্র সন্ধানে শিল্পবাজার ও বিজ্ঞাপনে কুটিরশিল্পের নগরকেন্দ্রিক আলোকপাত কলকাতাচর্চারও অন্যতম দিক। স্বদেশি শিল্প প্রসার আন্দোলনের প্রাক্-স্বাধীনতা পর্বের আলোড়নের পরবর্তীতে, কলকাতাকে অন্য আঙ্গিকে দেখার মুন্সিয়ানা আছে এই কাজে।
মোহ
সিজার বাগচী
২০০.০০
আনন্দ পাবলিশার্স
আবৃতাকে নিয়েই সিজারের উপন্যাস মোহ। পড়াশুনো করে আর্থিক প্রতিপত্তির মধ্যে বড় হওয়া মেয়ে আবৃতা। প্রেমের বশে, আর ঝোঁকেরও বশে সে ভালবেসে ফেলে সমাপনকে। সমাপন যে তার জীবনে এ রকম অকস্মাৎই ‘সমাপন’ টানবে তা কী করে আগে থেকে বুঝবে আবৃতা? এমনকি পাঠকও হকচকিয়ে যান। সমাপন তার নাম সার্থক করে এ উপন্যাস থেকে বিদায় নিয়েছে এক ক্লান্ত হেরে যাওয়া চরিত্র হিসেবে। তার ১৮০ ডিগ্রি উল্টো দিকে অদ্বৈত। যে কিনা সামাজিক ভাবে আবৃতার জীবনে দ্বিতীয় পুরুষ। কি চরিত্রে-মননে এবং শারীরিক কাঠামোয়। এমনকি বিছানাতেও সে যেন নিবিড় হয়ে উঠতে পারে না। খানিকটা শিশুসুলভ আনাড়িও সে। সেটা আবৃতা প্রতি মুহূর্তে অনুভব করে। সিজার খুব চমৎকার এক জটিল মনস্তত্ত্বের নারীচরিত্র এঁকেছেন। যে কিনা প্রায় এক বস্ত্রে স্বামীগৃহ ত্যাগ করে অথচ তাকে ভুলতে পারে না। পরবর্তী বিবাহে যাওয়ার আগে এ দিক ও দিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। পরের বিয়ের স্বামীর সঙ্গেও তার মানসিক ও শারীরিক মেলবন্ধন গড়ে ওঠে না। আবারও সম্পর্কচ্যুত হওয়ার কথা ভাবতে থাকে। সিজার তাঁর উপন্যাসে ছোটগল্পের মতো কৌতূহল জাগিয়ে রাখেন, এর পর কী হবে? তাঁর গদ্য টানটান। সম্পর্ক ও ঘটনার ওঠাপড়া দক্ষ ভাবে ধরেছেন লেখক। এ উপন্যাস যেন শব্দ-অক্ষরের এক চমৎকার চলচ্চিত্র।
পোলিয়ো/ দি ওডিসি অব ইর্যাডিকেশন
টমাস আব্রাহাম
৬৯৯.০০
কনটেক্সট (ওয়েস্টল্যান্ড)
বিশ্ব থেকে পোলিয়ো নির্মূল করার অভিযান শুরু হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। তিন দশকে পোলিয়ো কমেছে ৯৯.৯ শতাংশ, রোগ এড়িয়েছে দেড় কোটিরও বেশি শিশু। খরচ হয়েছে পনেরোশো কোটি ডলার। এ কাজে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত একশো জন স্বেচ্ছাসেবী। পোলিয়োর ফোঁটা খাওয়াতে গেলে পাকিস্তানে তাদের মেরেছে তালিবান, নাইজিরিয়ায় বোকো হারাম। একই দিনে সব শিশুকে পোলিয়োর টিকা খাওয়াতে সীমান্তে যুদ্ধ স্থগিত করতে হয়েছে, দেশের সরকারের সঙ্গে গেরিলা বাহিনিকে বসাতে হয়েছে আলোচনায়। কখনও ধর্ম-বিরোধিতার জিগির, কখনও মার্কিন-বিদ্বেষ পোলিয়ো নির্মূল অভিযানকে রুখে দিতে চেয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো জনবহুল রাজ্যেও প্রতিটি শিশুর কাছে পৌঁছে গিয়েছেন টিকাকর্মীরা, বার বার। প্রায় অসাধ্য সাধন করেছে এই জনস্বাস্থ্য প্রকল্প।
কিন্তু তা কি সফল? সত্যিই কি গুটিবসন্তের মতো পোলিয়োও বিদায় নিয়েছে? লেখক সন্দিহান। প্রশ্ন তুলেছেন গবেষণার নৈতিকতা নিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, রোটারি-র মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার অবস্থান নিয়ে। কী করে নির্ধারিত হয় জনস্বাস্থ্য প্রকল্প, মানুষের চাহিদা দিয়ে নাকি টাকা জোগাড়ের ক্ষমতা দিয়ে? সাংবাদিক টমাস আব্রাহাম পোলিয়ো দূর করার গল্পে বিজ্ঞানের জটিলতা আর রাজনীতির মারপ্যাঁচকে সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। দেখিয়েছেন, বিজ্ঞানের আবিষ্কার আর বিজ্ঞানীর অহমিকা, দুটোই নির্ধারণ করে জনজীবনে বিজ্ঞানের প্রয়োগকে। অন্যান্য অসুখকে অবজ্ঞা করে পোলিয়োর উপর এত জোর দেওয়া ঠিক কি না, সে প্রশ্নটাকে চাপা পড়তে দেননি কিছুতেই।