book review

অতিমারির অন্ধকার, ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ, ১৯২১। কলকাতার ৩/৪সি, তালতলা লেনের ভাড়াবাড়ির একতলায়, এক রাতে কাজী নজরুল ইসলাম পেনসিলে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি লিখেছিলেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩ ০৯:৪৬
Share:

—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP

কোভিড শুধু একটি অসুখের নাম নয়। বস্তুত, কোভিডকে নিছক জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় বলে চিহ্নিত করে দিলে এর কারণে ঘটা সুবিশাল সামাজিক এবং মানসিক পরিবর্তনগুলিকে উপেক্ষা করা হয়। সেই কোভিডকালের নানা দিক, মানবজীবনের নানা টুকরো মুহূর্তকে সাজিয়েছিলেন লেখক-সাংবাদিক রঞ্জন সেন তাঁর বিভিন্ন লেখায়। আলোচ্য বইটি বিভিন্ন দৈনিক ও পোর্টালে প্রকাশিত তাঁর সেই লেখাগুলির নির্বাচিত সঙ্কলন। ঝরঝরে লেখনীতে শুধুই কোভিডকালের অপরিসীম আতঙ্ক আর দমবন্ধ সময়ের চিত্রই ধরা পড়েনি, ধরা পড়েছে অনেক ইতিবাচক দিকও। যেমন লেখক লিখছেন— “সভ্যতা মানেই যে সঙ্ঘবদ্ধতা, ব্যক্তি পরিসর বজায় রেখে সামাজিক জীবনে থাকা এটা আমরা ভুলতে বসেছিলাম। করোনার মৃত্যুমিছিল আমাদের সেই বিস্মরণ থেকে উদ্ধার করে আত্মশক্তিকে আবিষ্কার করতে শেখালো।” লিখেছেন, “কোভিড-১৯ শিখিয়েছে মানুষের কাজকারবার পৃথিবীকে কীভাবে দূষিত করে তুলেছিল। এই শিক্ষাকে আমাদের ছড়িয়ে দিতে হবে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও।” আবার একই সঙ্গে তাঁর কলমে উঠে এসেছে দীর্ঘ লকডাউনে গরিবের সঙ্গে গরিবের লড়াই, বা মেয়েদের সঙ্কট তীব্র হওয়ার মতো প্রাত্যহিক জীবনের সমস্যাগুলিও। অতিমারি-অন্তে, যখন পৃথিবী ফের স্বাভাবিকতায় ফিরেছে, তখন নানা স্বাদের লেখাগুলি সেই ঘোর দুর্দিন এবং তার থেকে প্রাপ্ত শিক্ষায় ঋদ্ধ হয়ে থাকবে।

Advertisement

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ, ১৯২১। কলকাতার ৩/৪সি, তালতলা লেনের ভাড়াবাড়ির একতলায়, এক রাতে কাজী নজরুল ইসলাম পেনসিলে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি লিখেছিলেন। প্রথম প্রকাশ বিজলী-তে, ৬ জানুয়ারি, ১৯২২-এ। কবিতাটি লেখার পটভূমি কী ছিল, কবিতাটিকে কেন্দ্র করে তৎকালীন বুদ্ধিজীবী সমাজে কী রকম প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক উপস্থিত হয়েছিল, এমন নানা কিছুর বস্তুনিষ্ঠ অনুসন্ধান রয়েছে এই বইতে। কবিতাটিকে পাঠ করলে বোঝা যায়, এখানে এক ‘বীর’কে দীক্ষা দিচ্ছেন কবি। কে এই বীর, ‘দীক্ষক’-এর উদ্দেশ্য কী, বিদ্রোহী এবং বীরের অভিন্নতার সূত্রগুলি কোথায় বাঁধা রয়েছে, বিদ্রোহটির সংরূপগুলি কেমন, কোথায় রয়েছে দ্বন্দ্ব-কথা, এ সব খুঁটিনাটির হদিস দিতে চান লেখক। পাশাপাশি, বিশেষণ, ছন্দ, চিত্রকল্পের ব্যবহার, ‘আমি’ সর্বনামের প্রয়োগে, শৈলীগত কৌশলের হাত ধরে কবিতাটির নির্মাণ-ভাগকে যেন সদর্থক কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। ওয়াল্ট হুইটম্যান-এর ‘সং অব মাইসেল্ফ’-এর সঙ্গে ‘বিদ্রোহী’র তুলনামূলক আলোচনা, কবিতাটির বিভিন্ন ভাষায় হওয়া অনুবাদ, শব্দটীকা ও প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যার সংযোজন বইটি থেকে পাঠকের বাড়তি পাওনা।

পাঁচটি নারী চরিত্র ও তাদের কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা দশটি গল্প। দৈনন্দিন খুঁটিনাটি নিয়ে তারা নিজেদের জীবনের কথা বললেও, প্রতিটি গল্পই পাঠককে দেখাচ্ছে, ‘ব্যক্তিগতও আসলে রাজনৈতিক’। পাঁচটি চরিত্রের প্রত্যেকেরই শৈশব থেকে জীবনে ঘটে চলেছে নানা ঘটনা। এই বইয়ে তারই কথা, চরিত্রগুলির আত্মকথনের মাধ্যমে। কোথাও তারা অসহায়, অবুঝ, নীরব দর্শক, নিঃশব্দে মেনে নিচ্ছে নানা অত্যাচার। কোথাও বা প্রতিবাদী। ঘটনাগুলির অভিঘাত ও তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অনুভূতিগুলি অবশ্য চরিত্রগুলির কাছে একান্ত ব্যক্তিগত, গোপন। সেগুলি ভাগ করতে চায় না অন্য কারও সঙ্গে। ঠিক এখানেই যেন, তাদের একান্ত ব্যক্তিগত যা, অর্থাৎ তাদের ডাকনামগুলির গুরুত্ব। কিন্তু সমকালীন আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা যেন ভিন্ন চরিত্রগুলিকে অভিন্ন করে। ঠিক এই সূত্রেই যেন চরিত্রগুলিকে এক তারে বাঁধে তাদের ডাকনামগুলি। যে নামে তাদের চেনে শুধু তারা নিজে, তাদের কাছের মানুষেরা, যারা জানে তাদের ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি। ‘ফিকশনাল’ এই বইটির আখ্যানগুলি থেকে বোঝা যায়, আমাদের চার পাশে ছড়িয়ে রয়েছে এমন অনেকে, যাদের জীবন জুড়ে রয়েছে বহু সংগ্রাম। আর তাদের নিজের বলে রয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা, আর ওই ডাকনামগুলোর একান্ত ঘেরাটোপটুকু।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement