ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য প্যানডেমিক: দ্য ফার্স্ট ইয়ার/ এসেজ় ফ্রম দি ইন্ডিয়া ফোরাম
৬৯৫.০০
ওরিয়েন্ট ব্ল্যাকসোয়ান
গত বছরের শুরু থেকেই সংবাদমাধ্যমে খবর আসছিল, চিনের উহান প্রদেশে নাকি অজানা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই গোটা বিশ্ব গৃহবন্দি। দেশে-দেশে মৃত্যুমিছিল, লকডাউন, কর্মক্ষেত্রে ধস, সর্ব স্তরে অর্থনৈতিক বিপর্যয়, স্কুলছুটের সংখ্যা বৃদ্ধি, গোটা প্রজন্মের মানসিক স্থিতিতে আঘাত— মানবজীবনের কোনও ক্ষেত্র নেই, যাকে প্রভাবিত করেনি কোভিড-১৯। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গোটা পৃথিবীর অর্থনীতি এমন ধাক্কা কখনও খায়নি। বেশ কয়েক দশক ধরেই দারিদ্র দূরীকরণের যে প্রকল্পগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা চলছিল নানা দেশে, তা পিছিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। ২০২০ শেষ হওয়ার অপেক্ষা করেছিলেন সবাই। আশা ছিল, নতুন বছরে অতিমারিমুক্ত হবে পৃথিবী। ২০২১-ও শেষের পথে। ভ্যাকসিন এসে গিয়েছে, তবু বিদায় নেয়নি অতিমারি।
ভয়াবহ এই অতিমারির প্রথম বছরে ভারতের পরিস্থিতি ঠিক কেমন ছিল? অতিমারির ধাক্কা সামলাতে ভারতের প্রতিক্রিয়াই বা কী ছিল? অতিমারির চরম পর্যায়ে এই বিষয়গুলো নিয়ে নিজেদের ওয়েবসাইটে একটি প্রবন্ধ-সিরিজ় প্রকাশ করেছিল ‘দি ইন্ডিয়া ফোরাম’। প্রবন্ধ লিখতে আহ্বান জানানো হয়েছিল দেশে-বিদেশে কর্মরত কৃতী ইতিহাসবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিকদের। সেখানে প্রকাশিত এমন ২৪টি প্রবন্ধ এ বার বই আকারে প্রকাশিত হল।
বইটিকে আটটি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে অতিমারির প্রাথমিক পর্যায়ে ভারতের প্রস্তুতি নিয়ে। ভারত কি আরও ভাল ভাবে অতিমারির মোকাবিলা করতে পারত? আমরা প্রত্যেকেই সংক্রমণ ছড়ানোর শুরুর দিনগুলোর সাক্ষী। যে সময় অনেক বেশি পরীক্ষার প্রয়োজন ছিল, সে সময় তার ব্যবস্থা হয়নি। এই অধ্যায়ের অন্তর্গত প্রবন্ধগুলিতেও প্রতিফলিত হয়েছে সেই অব্যবস্থার চিত্র। দ্বিতীয় অধ্যায়ের মূল বিষয়, ভারতে মহামারি ও অতিমারির ইতিহাস। এর আগে প্লেগ ও গুটিবসন্তের সংক্রমণ ঘটেছে এ দেশে। সেই ইতিহাস থেকে বর্তমানে আমরা কিছু শিক্ষা নিলাম কি? তৃতীয় অধ্যায়ের অন্তর্গত দু’টি প্রবন্ধ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছিল দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণার পরেই। জীবন-জীবিকা, জনস্বাস্থ্যে অতিমারি-জনিত অব্যবস্থা এবং লকডাউনের সরাসরি প্রভাব নিয়ে সাবধানবাণী শুনিয়েছিলেন লেখকেরা। বইয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম অধ্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণার পরে দেখা যায় আইনরক্ষকদের অতি-সক্রিয়তা। অনেক সময়ই তা মানবিকতাবোধের সীমা লঙ্ঘন করে। হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের খোলা আকাশের নীচে পথ হাঁটা, লকডাউনের ফাঁদে পড়ে বাড়ি ফেরার আর্তি, ক্ষুধা-তৃষ্ণায় পথেই মৃত্যু— এই সমস্ত দৃশ্য আন্তর্জাতিক মহলে অতিমারি মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে। আইন ব্যবস্থার ভূমিকা এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার কথাই ধরা হয়েছে চতুর্থ ও পঞ্চম অধ্যায়ের প্রবন্ধগুলিতে। ষষ্ঠ ও সপ্তম অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ হয়েছে সমাজ ও অর্থনীতিতে অতিমারির প্রভাব। শেষ অধ্যায়ে পরিবেশ ও বাস্তুতান্ত্রিক বিজ্ঞানের আঙ্গিকে করোনা অতিমারিকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে, সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে অতিমারির গতি-প্রকৃতির পূর্বাভাস।
এই বই ভারতে অতিমারি পরিস্থিতির এক অতি জরুরি দলিল, যা ভবিষ্যতে এই ধরনের অবস্থা মোকাবিলায় শিক্ষা দিতে পারে।