অ্যান অটোবায়োগ্রাফি অর দ্য স্টোরি অব মাই এক্সপেরিমেন্টস উইথ ট্রুথ/ এম কে গাঁধী
অনুবাদ: মহাদেব দেশাই, সম্পা: ত্রিদীপ সুরহুদ
৮৯৯.০০
পেঙ্গুইন বুকস
ইংরেজি শিরোনাম থেকে বইটির প্রকৃত চরিত্র বুঝতে পারা একটু কঠিন। মূল গুজরাতিতে লেখার সময় গাঁধীজি কিন্তু সূক্ষ্ম পার্থক্যটি দু’টি শব্দ ব্যবহার করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন— তিনি ‘জীবনবৃত্তান্ত’ লিখতে চাননি, ‘আত্মকথা’ রচনা করতে চেয়েছেন, যে আত্মকথা শুধু গুজরাতিতেই লেখা সম্ভব, কারণ নিজের সঙ্গে তিনি সেই ভাষাতেই কথা বলেন, আর তাঁর অন্তর্যামীর কথা তিনি সেই ভাষাতেই শুনতে পান। গাঁধীর জোরটা তাই ইতিহাসের খুঁটিনাটি তথ্যে নয়, সত্যসন্ধানে। ১৯২৫-এর নভেম্বর থেকে ১৯২৯-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৬৬টি কিস্তিতে ‘নবজীবন’ (গুজরাতি) ও ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ (ইংরেজি) পত্রিকায় গাঁধীজির আত্মকথা প্রকাশিত হয়, ইংরেজি অনুবাদ করেন মূলত মহাদেব দেশাই, কয়েকটি অধ্যায় প্যারেলাল নায়ার। ১৯২৭-২৯-এর মধ্যে প্রকাশিত হয় দুই খণ্ডে গ্রন্থিত সংস্করণ, আর ১৯৪০-এ দ্বিতীয় পরিমার্জিত অখণ্ড সংস্করণ। এই দ্বিতীয় সংস্করণটিকে ভিত্তি করেই নতুন প্রামাণিক সংস্করণ তৈরি করেছেন এই সময়ের অন্যতম বিশিষ্ট গাঁধী-গবেষক ত্রিদীপ সুরহুদ। পাতায় পাতায় সাজিয়ে দিয়েছেন মূল গুজরাতি রচনা অনুসারে বিভিন্ন শব্দ শব্দগুচ্ছ বাক্যের বিকল্প অনুবাদ, যাতে গাঁধীর ভাষা ব্যবহারের নিজস্বতার পরিচয় পেতে পারেন পাঠক। আর আত্মকথা-য় উল্লেখিত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সন-তারিখ-ঘটনাবলির উপর টীকা তো আছেই, আছে ব্যাখ্যা ও মন্তব্য-সহ সংশোধনীও। নতুন করে অনুবাদ করলেন না কেন, প্রশ্নটি নিজেই তুলে উত্তর দিয়েছেন ত্রিদীপ তাঁর চমৎকার ভূমিকায়, তিনি নিজেকে এ কাজের যোগ্য মনে করেন না। কারণ শুধু যে তাঁর সাহিত্যসৃষ্টির তেমন ক্ষমতা নেই তা-ই নয়, তাঁর নৈতিক জগৎটাও বাপুর অন্তর্যামীকে উপলব্ধি করার মতো ততটা স্বচ্ছ নয়! ত্রিদীপ যা-ই বলুন, মুখবন্ধে আশিস নন্দী যথার্থই লিখেছেন, বর্তমান প্রজন্মের কাছে গাঁধীর চিন্তাভাবনা পৌঁছে দেওয়ার কাজে তাঁর ভূমিকা অসামান্য। তার প্রমাণ ছড়িয়ে আছে গুজরাতিতে লেখা নারায়ণ দেশাইয়ের চার খণ্ডের অনবদ্য গাঁধীজীবনী ও চন্দুলাল দালালের হরিলাল-জীবনীর ইংরেজি অনুবাদে আর গাঁধীর হিন্দ স্বরাজ-এর প্রামাণিক সংস্করণ সম্পাদনায়।