ফাইন্ডিং দ্য রাগা: অ্যান ইমপ্রোভাইজ়েশন অন ইন্ডিয়ান মিউজ়িক
অমিত চৌধুরী
৪৯৯.০০
পেঙ্গুয়িন হ্যামিশ হ্যামিলটন
এয়ার গিটারিস্ট, পপ-রক গায়ক, পশ্চিমি সিঙ্গার-সংরাইটারের গানপথে যাচ্ছিল যে কিশোরজীবন, অকস্মাৎ যদি সে এসে পড়ে উত্তর ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের গভীর নির্জন পথে, কেমন হয় সে অভিঘাত? কেমন করে সত্তরের দশকের বম্বে শহরের পঁচিশ তলার একটা ফ্ল্যাটে, পরে পড়াশোনার খাতিরে লন্ডনে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস হাউসের পাতলা দেওয়াল আর সিলিংওলা ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে এক-একটা রাগ, গুরু-সান্নিধ্যে কিংবা একাকী? এই খোঁজটাই অমিত চৌধুরীর এই ইংরেজি গদ্যগ্রন্থের বিষয়। শুধু ভারতীয় মার্গসঙ্গীত নিয়ে নয় এ বই, সঙ্গীতের সমান্তরালে বয়ে চলা জীবন নিয়েও; তাই লেখক নিজে, তাঁর বাবা-মা, কুঁয়ার শ্যাম ঘরানার তাঁর গুরুরা, সাধের ইয়ামাহা গিটার বা রাসবিহারীর ‘হেমেন’ থেকে কেনা তানপুরা, বম্বে-লন্ডন-কলকাতা শহর আর তার বদলে যাওয়া দৃশ্য ও শব্দপট, সবাই, সবই— এই বইয়ের চরিত্র। এ যেমন আত্মকথন, তেমনই এক আখ্যানও; স্থানে স্থানে ডুব দেয় ঠাট-রাগ, রেওয়াজ-তালিম, ধ্রুপদ-খেয়াল-ঠুংরি-ভজন নিয়ে ভাবনার গভীরে, আবার উড়াল দেয় দর্শন-সাহিত্য-চিত্রকলা-সিনেমা-চলচ্চিত্র সমেত শিল্পের উদার আকাশে। তাই বইয়ে তানসেন-দান্তে-হপকিন্স-তুলসীদাস-সত্যজিৎ-কিশোরী আমনকর-আমির খাঁ-রবীন্দ্রনাথ-কালিদাস-রলাঁ বার্ত ঘুরে বেড়ান অনায়াস স্বাভাবিকতায়, লেখকের ভাষা ও ভাবের সহজতাই তাঁদের সে স্বাধীনতা দিয়েছে। প্রায় আড়াইশো পৃষ্ঠার বইয়ের ১৬১ পাতাজোড়া প্রথম পর্বটি— ‘আলাপ’— জেগে থাকে যে কোনও রাগের উপক্রমণিকার মতোই, সুমন্থর, মায়াবিস্তারী।
শববাহিকা
শ্রীজাত
২০০.০০
সিগনেট প্রেস
যদি প্রথম চোখ যায় এ বইয়ের উৎসর্গপত্রে, বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে একটু— ‘শেষবারের আগুন, মাটি আর জলকে’। আর সেখান থেকেই শুরু হয়ে যায় কবিতা, এই কবিতাবইও। শ্রীজাতর এই কবিতাগুলি মৃত্যুচেতনার, সরাসরি মৃত্যু বিষয়ক, আর সেই কারণেই বড় জীবনপ্রেমী। এ শুধু এক মানুষের মৃত্যু নয়, কবির মৃত্যু; শুধু নাড়ির নয়, কলমের থেমে যাওয়া— সেই না-জীবনকে কবিই লিখে যাচ্ছেন, দেখে যাচ্ছেন সামনে বা একটু দূর থেকে, প্রিয় ঘর-শহর-স্বজনের নৈকট্যেই। এই এপিটাফগুচ্ছ শীতল পাথুরে লিপি নয়, এক্ষুনি ছেড়ে-যাওয়া জীবনের মতোই উষ্ণ। এই কবিকলমের রূপকল্প মায়ায় মোড়া— শহরতলির ছাতিম গাছের কাছে রাখা উইল, শিরার ভিতর ঘুরে-বেড়ানো কলম, বাথরুমে পড়ে থাকা অস্পৃষ্ট একাকী সাবান, ফতুয়া শুকোতে আসা শীতের নরম রোদ সেই মায়ায় হয়ে ওঠে আশ্চর্য সুন্দর। মৃত্যুর দু’পারের দুই জগৎ, ও পারে বাবা বসে থাকেন: ‘আজ, রাতের ট্রেনে, তার ছেলে আসবে’; এ দিকে, মৃত মানুষটির নম্বর থেকে হঠাৎ-আসা ফোনে চমকানো কেউ: ‘লেখা চেয়েছিলাম না জুন মাসে?’
রূপক চক্রবর্তীর কবিতায় ইশারা বহু না-বলা গল্পের। পর পর দু’পাতায় দু’টি চিঠি লিখেছেন তিনি— মা ও তাঁর সই বকুলমাসির পত্রালাপ। দুই প্রৌঢ়ার কথোপকথন, একদা যাঁদের আলাপ হয়েছিল মিছিলে— বামপন্থী মিছিলে— যেখানে তাঁরা শুনেছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা, যেখানে সোমনাথ লাহিড়ীর বক্তৃতা শুনে কেঁদেছিলেন তরুণী বকুল। সে যৌবনের কলকাতা গিয়ে এখন একাকিত্বের দিবারাত্রি— “বাপের বাড়ী ও শ্বশুরবাড়ীর কেউ কোন আমার খোঁজ নেয় না ভয়ে। যদি আমাকে ওদের রাখতে হয়?”
পার্ক স্ট্রিট পদাবলী
রূপক চক্রবর্তী ও অগ্নি রায়
১৯৯.০০
দে’জ
অগ্নি রায়ের কবিতায় লগ্ন হয়ে থাকে মায়াবী মনখারাপ। ‘রাস্তাই একমাত্র রাস্তা’ শীর্ষক কবিতায় লিখেছেন, “নিত্য নতুন মানচিত্র তৈরি হওয়া ড্যাম্প দেওয়ালে সৌরভ গাঙ্গুলি, স্টেফি গ্রাফের কাগজ কাটা পোস্টার চুঁইয়ে, লাল মেঝে চৌকাঠ টপকে” যে গলি “ক্রমশ পৌঁছে যাচ্ছে তোমার আলো-মোড়ের কাছে। যেখানে নতুন জামা আর ডায়েটের গন্ধ, অপু-দুর্গার মতো ছোটাছুটি করছে। কিন্তু তার আগেই নাছোড় ইউ টার্ন নিয়ে নিষেধ-পাঁচিলের সামনে মুখ থুবড়ে অন্ধ হওয়ার সময়, দ্যাখো তার ধুলো জন্মান্তর ঘটে যাচ্ছে রোজ”। এই মনখারাপের চলন বাঙালি আজন্ম চেনে। কারণ, বাঙালি শেষ অবধি জানে, পার্ক স্ট্রিটে “কে কার বিরহকে ধাপ্পা দেবে বলে বসে আছে।” আশ্চর্য সঙ্গত করেছে যোগেন চৌধুরীর আঁকা— বহু ক্ষেত্রে কবিতার থেকে নির্দিষ্ট ভাবে পৃথক সুরে বেজেও।