ইল্লিবারাল ইন্ডিয়া/ গৌরী লঙ্কেশ অ্যান্ড দি এজ অব আনরিজ়ন
চিদানন্দ রাজঘাট্টা
৪৯৯.০০
কনটেক্সট (ওয়েস্টল্যান্ড)
মনের সঙ্গে কাজের, আর কাজের সঙ্গে জীবন মিলে যায়, এমন ক’জন আছে? সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ তেমন ছিলেন। তাই তাঁর সাংবাদিক জীবনকে বুঝতে হলে তাঁর জীবনটা জানতে হয়। আলাপ করানোর কাজটি করেছেন আর এক সাংবাদিক, চিদানন্দ রাজঘাট্টা। কলেজে পড়তে পড়তে তাঁদের প্রেম, বাড়ির অমতে বিয়ে, বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লি যাত্রা, একই পেশায় দু’জনের কাজ। ক্রমে সম্পর্কে ভাঙন, বিচ্ছেদ। আশির দশক থেকে একবিংশের দেড় দশক, এই সময় জুড়ে ভারতে রাজনীতি, সমাজ বদলেছে। উদার, সহিষ্ণু, যুক্তিবাদী সমাজের গায়ে গেরুয়া ছোপ গাঢ় হল। ‘প্রগতিবাদী’, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দগুলোই বিপজ্জনক, বিদ্রুপযোগ্য হয়ে উঠল। গৌরী সেই সঙ্কীর্ণতা মানেননি। তাঁর সাংবাদিকতা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ ধাঁচের নয়, তাই হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে কলম ও কথা বারবার ঝলসে উঠেছে। শেষে এক বছর আগে তিনটি গুলি শেষ করেছে তাঁকে। কিন্তু গৌরীকে আজই বা কতটুকু চেনে ভারত? সরল, তরতরে ভঙ্গিতে লেখা বইটি সেই অন্তরঙ্গ পরিচয় করিয়ে দেয়। নকশালদের মূলস্রোতে আনতে গিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ, কানহাইয়া কুমারদের প্রতি গৌরীর আত্মীয়তা, এ বই সেই অল্প-জানা, কম-বোঝা ভাঁজগুলো খুলে দেখিয়ে দেয়। গৌরীর কাছে তাঁর সাংবাদিকতার অনেক সমালোচনা করেছেন চিদানন্দ, ঝগড়াও হয়েছে, কিন্তু দু’জনের সম্মান-সহমর্মিতা অটুট ছিল। ব্যক্তিজীবনের এই অংশটুকুও যদি রাষ্ট্রের পরিসরে আসত!
উত্তরণ/ শ্রেষ্ঠত্বের পথে সকলে
এ পি জে আবদুল কালাম/ অনু: সুব্রত ঘোষ
২৫০.০০
আনন্দ পাবলিশার্স
‘‘উত্তরণ: শ্রেষ্ঠত্বের পথে সকলে-র পিছনের ভাবনাটি হল শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নতি একটি দেশকে সর্বোত্তম করে তুলতে পারে না। সবার আগে প্রয়োজন একটি জাতীয় চরিত্রের নির্মাণ, যা জন্ম নিতে পারে আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ, স্কুলের শিক্ষা, আর দেশের সংস্কৃতি থেকে।’’ তাঁর পঁয়ত্রিশতম বইটির ‘প্রাককথন’-এ লিখেছেন এ পি জে আবদুল কালাম। ‘‘বহু ক্ষেত্রেই ভারত বিরাট উন্নতি করেছে। তাকে অর্থনৈতিকভাবে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হতে আর শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু এই-ই কী সব? না, কখনও নয়। কারণ, জীবনযাপনের মান বাড়াতে এখনও অনেকটা পথ অতিক্রম করতে হবে আমাদের। তাই এই বই যেন উন্নত মানবজীবনের এক ম্যানিফেস্টো, এক ঘোষণাপত্র।’’ বইটিতে তিনি দেখাতে চেষ্টা করেছেন, কোন কোন গুণে একটি দেশ মহান হয়ে ওঠে। জীবনযাপনের মানের ভিত্তিতে অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনামূলক বিচার করেছেন। দেশে এবং দেশের বাইরে তাঁর বিভিন্ন ভ্রমণগুলি থেকে তিনি নিয়েছেন বিভিন্ন সূত্র। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে উঠে আসা মানুষজনের সঙ্গে তাঁর সংযোগ থেকেও নিয়েছেন বহু সূত্র। বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষজনের জন্য রচনা করেছেন শপথ, যা প্রত্যেকের জীবনকে করে তুলবে সমৃদ্ধ। ২০১৫ সালে প্রয়াণের কিছু আগেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শেষ করেন এই বই।
তৃপ্তি মিত্র/ অন্য বিনোদিনী
দেবতোষ ঘোষ
২২৫.০০
ঋত প্রকাশন
শম্ভু মিত্র কথায় কথায় একদিন তাঁর মেয়ে শাঁওলীকে বলেছিলেন, তোর মা যদি আবার জন্মায় তো থিয়েটারই করবে।— লিখেছেন দেবতোষ ঘোষ। ঠিক তার পরেই আর-একটি বাক্য যোগ করেছেন: ‘‘আমিও কায়মনোবাক্যে বলি, তাই যেন হয়।’’ সহ-অভিনেতা বা সহকর্মী হিসেবে দীর্ঘ কাল ধরে খুবই কাছ থেকে তৃপ্তি মিত্রকে দেখেছেন লেখক, সেই অসামান্য অভিনেত্রীর গুণপনার একজন সাক্ষী তিনি। নিজের পঞ্চাশোর্ধ্ব অভিনয়-জীবনের যাত্রাপথে যা যা আনন্দময় অভিজ্ঞতার সঞ্চয় তার একটি এই তৃপ্তি মিত্রের অভিনয়। বইটি লেখকের এমনই এক স্মৃতির কোলাজ যেখান থেকে অভিনেত্রীর পাশাপাশি পরিচালক তৃপ্তি মিত্রকেও চিনে নেওয়া যায়। বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠী ছাড়াও কী ভাবে পেশাদারি থিয়েটারে, মননশীল চলচ্চিত্রে, কিংবা জীবনের উন্মেষ পর্বে আইপিটিএ-র একজন সচেতন কর্মী হিসেবে সতত সক্রিয় থাকতেন তিনি, তারও একটা হদিশ যেমন, তেমনই আবার স্নেহসূত্রে পর-কে আপন করে নেওয়া, বা সহকর্মীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া... সামগ্রিক একটা ছবি যেন তৃপ্তি মিত্রের। ‘‘এখানে পাওয়া যাবে এমন একজন ব্যক্তিগত মানুষের ছবি, যিনি নিষ্ঠাভরে সঙ্ঘগত থেকেও নিবিড়ভাবে ব্যক্তিগত।... অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্রের অভিনয়-ইতিহাসটুকু মাত্র নয়। তাঁর একান্ত মানবিক আর গভীরতার সামাজিক ছবিটিই আমার কাছে এই লেখাগুলির প্রধান আকর্ষণ।’’ শঙ্খ ঘোষ জানিয়েছেন এ-বইয়ের শুরুতেই। আর লেখক তাঁর বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে উচ্চারণ করেছেন এই অমোঘ বাক্যটি: ‘‘তৃপ্তি মিত্র আমাদের সময়ের থিয়েটারের অহংকার।’’