রোববারের পাঁচালি
জয়া মিত্র
৩৫০.০০
দে’জ পাবলিশিং
আশাপূর্ণা দেবীর উপন্যাস নিয়ে ‘অন্তরমহল’ নামের একটি রচনা ও তাঁর ‘জীবনখাতা’তে শেষ হচ্ছে জয়া মিত্রের বইখানি। লিখছেন ‘‘অন্তঃপুরের নিজস্ব জীবন। সবচেয়ে বড় বিশেষতা এইখানে যে, সে-জীবনকে দেখছে সেখানকারই এক বাসিন্দা। ভালমন্দে, হতাশা কী চরিতার্থতায়, দিনরাত্রির প্রহরে প্রহরে আলো পড়ছে মুখগুলোর ওপর। বাইরে থেকে সন্ধানী সার্চলাইটের আলো নয়, দিনযাপনের স্বাভাবিক আলো। যে দেখাচ্ছে সে নিজেও আছে ওইখানে। সে নিজের দেখাই দেখাচ্ছে। সেই দেখাতেই ভিন্ন হয়ে উঠছে সমস্ত আখ্যান।’’ পড়তে-পড়তে বোঝা যায় উপন্যাসের নতুন ধরনের খোঁজে মেতে উঠেছেন লেখিকা। প্রথমে আপাত ভাবে মনে হয় যেন কোনও নির্দিষ্ট বিষয় নেই তাঁর এ-বইয়ের, কিন্তু এগোতে থাকলেই টের পাওয়া যায় কত না-জানা বিষয়ের গভীর আবিষ্কার আর অনুসন্ধানে ভরে উঠেছে বইটি। যেমন উন্নয়নের উপাদান পোকা-মারা-বিষ নিয়ে লিখছেন ‘‘পোকা ও বন্ধুপোকার যে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ভারসাম্যের শিক্ষা কৃষক বহুশত বছর ধরে আয়ত্ত করেছিলেন, তা তছনছ করে দিয়ে রাসায়নিক কীটনাশক কোম্পানির মুনাফা জড়ো হল পৃথিবীর বিরাট অঞ্চলের মাটির প্রাণমূল্য দিয়ে। আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশবছর আগে, এই ‘উন্নয়ন ব্যবস্থা’র গোড়ার দিকে ‘দি সাইলেন্ট স্প্রিং’— ‘নীরব বসন্ত’ নামে একটি ছোট বই ওই ভয়ঙ্কর আগ্রাসনের ঝুঁটি ধরে নাড়িয়ে দিয়েছিল।’’ জয়া জানাচ্ছেন, ওই বইটির লেখিকা র্যাচেল কারসন দেখিয়েছিলেন কী ভাবে মাঠে মাঠে ছড়ানো ডিডিটি-র বিষ জখম করছে পাখিদের স্নায়ুতন্ত্রকে। বিষক্রিয়ার মৃত পোকা খেয়ে এইসব পাখিদের ডিমের খোলা এত পাতলা হয়ে যাচ্ছে যে তা দিতে বসলে ভেঙে যাচ্ছে সেগুলি। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়ছে পাখিদের একের পর এক প্রজাতি। এ ভাবেই কত রকমের মানুষ আর তাদের বেঁচে-থাকার আখ্যানে ভরে উঠেছে গোটা বইটি। গল্প-উপন্যাসের চেয়ে স্বাদে কোনও অংশে কম নয় এই পথচলা, পাঁচালি। বীরভূমের গ্রাম, পুরুলিয়ার হাটের পাশাপাশি ইতালির অভিনেত্রী ও নাট্যকার, দলিত বা ‘অপর’ মানুষদের আন্দোলনের অপ্রতিরোধ্য লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর পাশাপাশি ইরানি ছবি-করিয়ে মখমলবাফ। যখন সাপ্তাহিক কলামে লিখছিলেন লেখাগুলি, তখন ‘‘সমাজের ভেতরে নানাবিধ তাপ ও চাপ বাড়ছিল ক্রমাগত।... এ রকম সময়কে প্রত্যক্ষ করা একজন লেখকের কাছে এক চ্যালেঞ্জ আর দুর্লভ সৌভাগ্যও।’’ জানিয়েছেন জয়া, বইটির শুরুতেই।