ঐতিহ্য নিয়ে মধ্যবিত্তের যে গদগদ, ভাবাবেগসর্বস্ব এবং ভাসাভাসা ধারণা, তাকে মোক্ষম ফুটিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় ‘পরশপাথর’ ছবিতে— পরেশবাবু (তথা তুলসী চক্রবর্তী)-র ভাষণে: ‘‘বাঙালীর ঐতিহ্য! যে সে কথা নয়। তাকে ভুললে চলবে না, তাকে এড়িয়ে গেলে চলবে না। তাকে ধরে রাখতে হবে।’’ ‘সংস্কৃতি’ শব্দটি উচ্চারণমাত্র সচরাচর উঠে আসে উচ্চমার্গীয় সাহিত্য, দর্শন, সঙ্গীত, অভিনয়, নৃত্য ও চারুকলার প্রসঙ্গ। কিন্তু এতে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক আংশিক পরিচয় মাত্র পাওয়া যায়। ‘ঐতিহ্য’ এই তৎসম শব্দটি ‘ইতি হ’ থেকে নিষ্পন্ন; ওই ‘ইতি হ’ থেকেই আবার ‘ইতিহাস’ কথাটির জন্ম। ঐতিহ্য এই মুহূর্তের সৃষ্টি নয়, তার শিকড় গভীর এবং বিস্তার সুদূরপ্রসারী। ঐতিহ্যের ভিত অতীতে প্রোথিত; কিন্তু আগামী প্রজন্মগুলির কাছে তা গ্রহণযোগ্য হলে তবেই তা ঐতিহ্যের শিরোপা পাওয়ার যোগ্য। ঐতিহ্যের উন্মেষ ও উত্তরাধিকারের ভিতরে থাকে পরম্পরা-পরিবর্তনের টানাপড়েন। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনুসন্ধানে তাই ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত এবং প্রক্রিয়া দুই-ই প্রাসঙ্গিক। ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারের স্বাদু এবং ব্যঞ্জনাময় গদ্যে রচিত ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্বন্ধে গভীর অভিনিবেশ ও অনুসন্ধান পাঠককে সচেতন ও প্রশ্নশীল করে তুলবে। কোনও কালানুক্রমিক বয়ান নয়, বরং তিনি পাঠকের সামনে রেখেছেন বেশ কিছু জরুরি জিজ্ঞাসা। ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে অধ্যয়নের সূচনা উনিশ শতকে, তার বিকাশ বিংশ শতাব্দীতে। স্বদেশের লুপ্ত গৌরব পুনরুদ্ধারের তাগিদও এই অনুসন্ধানের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের যে সব নমুনা অগ্রাধিকার পেল, সেগুলি প্রায়শই উচ্চকোটির জীবনাদর্শের সঙ্গে জড়িত এবং মানানসই। তার অন্যতম সেরা উদাহরণ সংস্কৃত সাহিত্য, ধর্ম, দার্শনিক ধ্যানধারণা এবং ললিতকলা। নৃতত্ত্ববিদরা যে ভাবে সংস্কৃতিকে দেখেন, বা বর্তমানে সংস্কৃতি-বিদ্যায় যা চর্চিত হয়, তার প্রেক্ষিত অনেক বৃহত্তর; সামাজিক প্রশ্ন, পৃষ্ঠপোষকতার পটভূমি, ক্ষমতার বিন্যাসও তাই এর আলোচনায় একান্ত জরুরি। সংস্কৃতি বিজড়িত থাকে দৈনন্দিন যাপিত জীবনের ক্ষেত্রেও। অতএব নিতান্ত আটপৌরে চর্চা, সাধারণ মানুষের জীবন বাদ দিয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আলোচনা অসম্পূর্ণ থাকে। এই সমস্যাপটের উন্মোচন বইটির এক বড় সম্পদ। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পাঠের ভিন্নতর পদ্ধতি ও স্বল্পালোচিত তথ্যসূত্রের বিশ্লেষণ থাপারের লেখনীতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ভূমিকা, প্রাককথন এবং কথান্ত বাদে বইটিতে আছে সাতটি অধ্যায়। তাদের উপজীব্য কী ভাবে সাংস্কৃতিক ঐক্য গড়ে ওঠে, কালের ধারণার সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাংস্কৃতিক দিক, নারীর মাধ্যমে সংস্কৃতির উন্মোচন, বৈষম্যের সংস্কৃতি, জ্ঞানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
ভারত-সংস্কৃতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ভাবে যুক্ত সম্রাট অশোকের কথা, যা প্রধানত জানা যায় তাঁর অনুশাসনগুলি থেকে। অথচ বিপুলায়তন সংস্কৃত সাহিত্য সম্ভারে অশোক কার্যত অনুপস্থিত। দুই হাজার বছরের এই অবহেলা ও বিস্মৃতির ঐতিহ্য কি বৌদ্ধধর্মানুসারী অশোকের প্রতি ব্রাহ্মণ্য বৈরিতার ফসল? অশোক বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের সহাবস্থান ও সদ্ভাবের যে সাধু নীতি নিয়েছিলেন, তা কি খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকেই নাড়া খেল? পতঞ্জলির ‘মহাভাষ্য’-এ ব্রাহ্মণ ও শ্রমণের পারস্পরিক অবস্থান ‘অহিনকুল’ হিসেবেই চিহ্নিত। প্রায় একই সময়ে সাঁচি স্তূপে একটি তোরণ দান করে বৌদ্ধ দাতা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যিনি প্রদত্ত বস্তুর ক্ষতি করবেন তিনি মাতৃঘাতী, পিতৃঘাতী, রুধিরপায়ী বলে চিহ্নিত হবেন। তথাকথিত পরমতসহিষ্ণুতার সুদীর্ঘ ঐতিহ্য কি এই ঐতিহাসিক নমুনাগুলির সঙ্গে খাপ খায়? অন্য দিকে, অশোকের লিপিসংবলিত ইলাহাবাদ স্তম্ভে যখন পরবর্তী কালে সমুদ্রগুপ্ত ও জাহাঙ্গিরের দু’টি লেখ উৎকীর্ণ করা হল, তখন তাঁরা কেউই বোধহয় এই স্তম্ভটির ঐতিহ্যগত তাৎপর্য বিষয়ে সচেতন ছিলেন না। এর ভিন্ন পরিচয় পাওয়া যাবে সুলতান ফিরোজ শাহের আমলে, যখন হরিয়ানা থেকে একটি অশোকস্তম্ভ বহু যত্নে ও মর্যাদায় (কিন্তু অশোক সম্বন্ধে অনবহিত থেকেই) দিল্লির কোটলায় স্মারক হিসেবে নিয়ে আসা হয়।
সমন্বয়ী ঐতিহ্যের ভিন্নতর অবস্থান আলোচিত হয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতিতে কালের ধারণার প্রসঙ্গে। ব্রাহ্মণ্য, বিশেষত পৌরাণিক আদর্শে চারটি যুগের যে বৃত্তাকার গতি, তাতে পুনরাবৃত্তির ঝোঁক স্পষ্ট। সত্য বা কৃতযুগ যেখানে এক আদর্শ কল্পলোক (ইউটোপিয়া), কলিকালের ভিতরে থাকে এক নষ্টলোক (ডিস্টোপিয়া)-র বিবৃতি। অর্থাৎ কৃতযুগে ফেরত যাওয়ার আগে ক্রমাবনতির আখ্যানই পুরাণকারের অন্বিষ্ট। অথচ কালের রৈখিক গতি, অর্থাৎ সম্বৎ (বিক্রমাব্দ, শকাব্দ, গুপ্তাব্দ, রাজ্যাঙ্ক ইত্যাদি), ঋতুপর্যায়, পক্ষ, মাস, দিনক্ষণ ইত্যাদি সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতনতার নজির রয়েছে প্রশাসনিক দলিলে, বিশেষত দানলেখ ও তাম্রপট্টে। কালের রৈখিক চরিত্র সম্বন্ধে যে ঐতিহ্য রয়েছে, তার সঙ্গে ‘বিপুলা পৃথ্বী, কাল নিরবধি’র ধারণা মিলবে না।
কালের ধারণার সঙ্গে ওতপ্রোত ঋতুপর্যায়ের বোধ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান। গণিত এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের দীর্ঘ ঐতিহ্য সুবিদিত, কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই তার চর্চা এবং প্রয়োগ ঘটত রাজদরবারে। গ্রহনক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয় করে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতেই হত সমুদ্রযাত্রার সময়। তাই থাপার এক মনোজ্ঞ বিবরণ দিয়েছেন অ্যাস্ট্রোলেব নামক যন্ত্রটি নিয়ে। এই যন্ত্র যাঁরা সাগর পাড়ি দিতে ব্যবহার করতেন তাঁরা উচ্চবর্গীয় নন, বহু ক্ষেত্রেই নিরক্ষর। তাই তাঁদের কলাকৌশল ভারতীয় ঐতিহ্যে প্রায় আড়ালেই থাকে। কালাপানি পার হওয়া যে কলিকালে বর্জনীয়, এই ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োগযোগ্যতা দুই-ই সন্দেহজনক। ভারতীয় নাবিক, ব্যবসায়ী, এমনকি ব্রাহ্মণরাও যে সমুদ্র পেরোচ্ছেন ব্রাহ্মণ্য অনুজ্ঞার তোয়াক্কা না করে, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আলোচনায় এই বিষয়টির প্রতি থাপার অধিকতর দৃষ্টি দিতে পারতেন।
দৈনন্দিন জীবনযাপনের সঙ্গে ঐতিহ্যের নিবিড় সম্পর্ক উদ্ভাসিত হয়েছে দক্ষিণ ভারতের আইয়ানারের উপাসনা বিষয়ক আলোচনায়। এই গ্রামীণ দেবতাটি সবর্ণ নয়, অবর্ণ সমাজের আরাধ্য; দেবতা অশ্বারোহী, তাঁর পুজারি কুম্ভকার বেলার সম্প্রদায়; তাঁকে দেওয়া হয় আমিষ ভোজ্য। আইয়ানার গ্রামের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। এই প্রসঙ্গে বিচার্য দক্ষিণ ভারতের বীরকল জাতীয় ভাস্কর্যের কথা। এই ভাস্কর্যে যুদ্ধে নিহত কোনও বীরকে স্মরণীয় করে রাখা হয়। এই যোদ্ধারা কিন্তু কোনও রাষ্ট্রের সৈনিক নন, গ্রামীণ সমাজের দ্বারা নিযুক্ত অতি সাধারণ ব্যক্তিবর্গ। গবাদিপশু লুণ্ঠনের প্রবণতা থেকে রক্ষা পাওয়ার তাগিদে আইয়ানারের উপাসনা এবং মৃত বীরের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের ঐতিহ্য। একই ভাবে আটপৌরে জীবনচর্যায় থাকেন নিয়ম রাজা, যিনি ওড়িশার ডোঙ্গরিয়া কোন্ড জনজাতির আরাধ্য। সম্প্রতি তাঁদের এলাকায় বক্সাইট নিষ্কাশনের যে উদ্যোগ হয়েছিল, তা ডোঙ্গরিয়া কোন্ডদের দীর্ঘ ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাই এই জনজাতিটি তার বিরুদ্ধে সফল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। উচ্চবর্গীয় সমাজ জনজাতিটির ঐতিহ্যের প্রতি যতটাই অমনোযোগী, ততটাই তাঁদের প্রতিরোধী ঐতিহ্য সম্বন্ধে তাঁরা নীরব। থাপার সঙ্গত ভাবেই প্রশ্ন তুলেছেন, বক্সাইট নিষ্কাশনের এলাকাটি যদি কোনও মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার বা গির্জার পরিসরের মধ্যে পড়ত, তা হলে কি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গেল গেল বলে রব উঠত না?
ইন্ডিয়ান কালচার্স অ্যাজ় হেরিটেজ/ কনটেম্পোরারি পাস্টস রোমিলা থাপার ৫৯৯.০০ আলেফ বুক কোম্পানি
বর্ণ-জাতি ব্যবস্থাধীন এবং পিতৃতান্ত্রিক সমাজে দুটি গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অবস্থান প্রায় নেপথ্যে থেকে যায়: তাঁরা হলেন অবর্ণ (দলিত) গোষ্ঠীভুক্ত মানুষ এবং নারী। সনাতন ব্রাহ্মণ্য ঐতিহ্যে নারী কন্যা, জায়া, মাতা হিসেবে সাধারণত অন্তঃপুরে আটকে থাকেন; দাসীর অবস্থান তো আরও হেয়। অথচ বৈদিক সাহিত্যে দাসীপুত্র ব্রাহ্মণদের মর্যাদা স্বীকৃত। পারিবারিক অবস্থান থেকে বিযুক্ত করার ঐতিহ্য পাওয়া যাবে বৌদ্ধ সঙ্ঘে ভিক্ষুণীদের কার্যকলাপে। এঁদের বিপ্রতীপে আছেন গৃহপত্নীরা, যাঁদের দানে বৌদ্ধবিহার এবং সঙ্ঘাদি সমৃদ্ধ হত। পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গৃহপত্নীদের যে ঐতিহ্য, তার সম্পদের উৎস কী? গার্হস্থ্যজীবনে নারীর আবদ্ধ থাকার যে সনাতন ঐতিহ্য, ব্রাহ্মণ্য ভক্তিধর্মের মাধ্যমে তার বিকল্প হয়তো আসত কখনও সখনও: তার উদাহরণ দক্ষিণ ভারতের অক্কমহাদেবী, অণ্ডাল, রাজস্থানের মীরাবাঈ এবং কাশ্মীরের লল্লেশ্বরী প্রমুখ। ভক্তিধর্মাশ্রয়ী যে কাব্য ও গীতির জন্য এঁরা স্মরণীয় তা কিন্তু সংস্কৃতে রচিত নয়, সেখানে সৃজনশীল আঞ্চলিক ভাষার ঐতিহ্যই অধিকতর মান্যতা পেয়েছে।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে অবর্ণ-সমাজের অবদানের যে নজির রোমিলা থাপার দর্শিয়েছেন বইটির অন্তিম অধ্যায়ে, তা চমকে দেওয়ার মতো। দিল্লির ঐতিহ্যবাহী কুতব মিনার এবং ওই চত্বরে কুওয়াত-উল-ইসলাম মসজিদ নির্মিত হয় সুলতানি আমলে, দ্বাদশ শতকের শেষে। বাজ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় একাধিক বার মিনারের সংস্কার করতে হয়েছিল। এর সাক্ষ্য দেবে কয়েকটি সংস্কৃত লেখ। ১৩৬৯ খ্রিস্টাব্দে সুরত্রান (সুলতানের সংস্কৃতায়িত রূপ) ফেরোজসাহি (ফিরোজ শাহ)-র আমলে সংস্কার সম্পন্ন হল বিশ্বকর্মার অনুগ্রহে: বিশ্বকর্মার অনুগত সূত্রধর হলেন চাহড় (তাঁর বংশপরিচয় বিবৃত), শিল্পী ছিলেন নানা সাল্হা আর দারুকর্মীর নাম ধর্মুবানানি। অন্যত্র লিপিবদ্ধ আছে কারিগর লোল, লশমন এবং হরিমণি গাবেরির নামও। ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতকের লেখগুলিতে কারিগর এবং মেরামত-কর্মীদের নাম হল গোপ, তুলসী, হিরা দেবীদাস, মাধোলাল, বদ্রাগু। নামগুলি স্পষ্টতই অমুসলিম। এঁরা কেউই বর্ণ-জাতি সমাজের উঁচু থাকের মানুষ নন। পাথর যিনি কাটছেন তাঁর অভিধা সঙ্গত্রসু (ফার্সি সঙ্গ্তরশ-এর সংস্কৃতায়িত রূপ)। লেখগুলি সংস্কৃতে রচিত, সঠিক বললে প্রায় মৌখিক সংস্কৃতে। সব থেকে চমকপ্রদ হল সঙ্গত্রসুর নাম ও পরিচয়: ‘চণ্ডালবংশ’জাত কারিগরের নাম রাম। এই ভাবে কারিগরদের নাম থেকে গেল কুতব মিনারের ঐতিহ্যে। কোনও চণ্ডালবংশজাত কারিগর একটি সৌধ মেরামতিতে অংশীদার থাকছেন, সেটি আবার ইসলামি সংস্কৃতিতে লালিত— তাতে চমৎকৃত হতে হয় বইকি। হিন্দু দেবালয়ের নির্মাণে এবং সংরক্ষণে অবর্ণ সমাজের যোগদানের সমতুল্য নজির কতগুলি আছে? তা ছাড়া উপরিউক্ত কারিগররা সম্ভবত সাক্ষর ব্যক্তি: এ কথাও খেয়াল রাখা দরকার।
বহু বৈচিত্রে বর্ণময় ভারতীয় ঐতিহ্যসম্পদের যে সুনিপুণ আখ্যান এবং বিশ্লেষণ রোমিলা থাপার মাত্র ২২২ পাতায় রাখলেন, তার জন্য তিনি আশ্রয় নিয়েছেন আঠেরোটি আকর তথ্যসূত্রের; তার সঙ্গে বহু ঐতিহাসিকের গ্রন্থ-প্রবন্ধাদি তো আছেই। তাঁর বক্তব্য যেমন পাঠককে ভাবাবে, তেমনই বুঝিয়ে দেবে এই জটিল আখ্যান নির্মাণ করার জন্য কী পরিমাণ আয়াস, দায়বদ্ধতা এবং পেশাদারি দক্ষতার প্রয়োজন। হালফিল যাঁরা বিবিধ আখের গোছানর তালে ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বহুমুখী জটিলতাকে একপেশে এবং অবিমিশ্র হিন্দুত্বের মোড়ক দিয়ে চালানর চেষ্টা করছেন, তাঁরা ‘কালি দিয়ে চুনকাম’ই শুধু করতে পারেন, সেটাও ধোপে টিকবে কিনা ঘোর সন্দেহ।