Bickram Ghosh Puja Plans

রবিশঙ্করজি আমার খাওয়াদাওয়ার অভ্যেসটাও বদলে দিয়েছেন: বিক্রম ঘোষ

পণ্ডিত রবিশঙ্করজি থেকে পিতা পণ্ডিত শঙ্কর ঘোষ হয়ে স্ত্রী, পরিবার থেকে ঠাকুর দেখা, আড্ডা, অনুষ্ঠান সবটা নিয়ে তাঁর পুজো কাটানোর কথায় অকপট বিখ্যাত তবলিয়া । সামনে আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩ ১২:২০
Share:

গালে চাঁটি মেরে যে শব্দ তৈরি করেন, আপনাদের তালবাদ্যের ভাষায় তাকে ‘চিক ড্রামিং’ বলে। এটা কি আপনার নিজস্ব সৃষ্টি?

Advertisement

এটা ‘বডি ড্রামিংয়ের’ অঙ্গ। আফ্রিকার এক শিল্পীকে করতে দেখেছিলাম। ব্রাসেলস শহরে। সেই শিল্পী বেসিকটা কী ভাবে করা হয়, পনেরো মিনিট ধরে দেখিয়ে দেন আমাকে। এর পর ১৯৯৯-২০০০ থেকে আমি আমার ফিউশন শো-তে সেটা গ্রহণ করতে শুরু করি। এবং এই শিল্পের একটা ভারতীয় চেহারা দিই। গালের ওপর আঙুল খেলানোর টেকনিকে যোগ করি কিছু তবলার বিষয়। দক্ষিণ ভারতীয়, উত্তর ভারতীয় ‘পারকাশন’ কম্পোজিশন গালে বাজাই। আজকাল অল্পবয়সিরা চিক ড্রামিং করে। আমাকে দেখে উৎসাহ পায়। এখন তো আমি বডি ড্রামিংও করি।

আপনার বাবা পণ্ডিত শংকর ঘোষ কি আপনার এই সব চিক ড্রামিং-বডি ড্রামিং দেখে গিয়েছেন?

Advertisement

হ্যাঁ, হ্যাঁ। খুব মজা পেতেন।

তবলা বাদক শঙ্কর ঘোষ এবং বিক্রম ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।

পুজো তো এসে গেল। স্ত্রীর সঙ্গে পুজো কী ভাবে কাটাবেন?

কলকাতার বাইরে চলে যেতে ইচ্ছে করে। প্যান্ডেলে ঘোরার শখ নেই।

জয়ার সঙ্গে থাকতে থাকতে একটা অভ্যেস হয়ে গেছে তো! মনে হয় না, অন্য কোনও বান্ধবীর সঙ্গে যাই?

না। একেবারেই না। আসলে আমি খুব ঘরকুনো।

যখন ‘হঠাৎ নীরার জন্য’ ছবিটি হচ্ছে, তখনই তো জয়া শীলের (এখন ঘোষ) সঙ্গে আপনার প্রেম শুরু। তখন এক ধরনের আনন্দ ছিল নিশ্চয়ই। এখন জয়াকে নিয়ে ঘুরতে গিয়ে সেই আনন্দটা পান? নাকি একঘেয়েমি কাজ করে।

জয়ার সঙ্গে সময় কাটাতে আমার খুব ভাল লাগে। আমরা প্রায়ই দুজনে বেড়াই, দু’জনে খেতে যাই। ভাল লাগে। আসলে কী মনে হয় জানেন, বিবাহিত জীবনে একটা ভারসাম্য রাখতে লাগে। দু’জনের দু’রকম জীবন থাকতে হয়। জয়া ওর ‘ক্র্যাফ্ট’ নিয়ে ট্যুর করে এল। আমি আমার ‘ক্রাফ্ট’ নিয়ে ট্যুর করে এলাম। এই স্বাধীনতা জীবনে থাকলে কোনও রকম অসুবিধে হয় না।

একটি অনুষ্ঠানে বিক্রম ঘোষ এবং জয়া শীল। ছবি: সংগৃহীত।

আচ্ছা আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু পণ্ডিত তন্ময় বসুর সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরেছে কোনও?

না তো! তন্ময় আর আমার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এই তো কয়েক দিন আগেই কথা হচ্ছিল।

কী কথা?

এই ধরুন, পুরনো দিনের কথা, রবিশঙ্করজির সঙ্গে ট্র্যাভেল করা, মজা করার কথা। কত স্মৃতির কথা।

তন্ময় বসুর সঙ্গে বিশেষ মুহূর্তে বিক্রম ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।

আপনি আর পণ্ডিত তন্ময় বসু এক সঙ্গে অনুষ্ঠান করার কথা ভাবেন না?

না। আমরা আলাদা আলাদা ব্র্যান্ড। এক সঙ্গে যখন বাজাতাম, বাজাতাম। হয়ে গিয়েছে সেটা। এখন ‘জার্নি’ আলাদা। আর তার মানে, বন্ধুত্ব আলাদা হয়ে গেছে তা কিন্তু নয়।

পণ্ডিত রবিশংকরকে নিয়ে কোনও মিউজিক্যাল থিম ভেবেছেন?

গত বছর যে শো-টা করলাম লন্ডনে রয়্যাল ফেস্টিভ্যাল হলে, রবিশঙ্করজির একশো বছর উপলক্ষে, সেখানে আমি আর তন্ময় বাজালাম তো এত বছর পরে। সেই অনুষ্ঠানে অনুষ্কাশঙ্কর সহ আরও অনেক বিখ্যাত শিল্পীরা বাজালেন। তিন ঘন্টার অনুষ্ঠান।

রবিশঙ্করকে নিয়ে থিম মিউজিকের কথা হচ্ছিল!

অনেক ধরনের কাজ হতে পারে ওঁকে নিয়ে। ওঁর কম্পোজিশন নিয়ে। সেটা আমরা করেছি। ওঁর ‘পথের পাঁচালী’র, ‘গান্ধী’র থিমগুলিকে নিয়ে যদি শো করা যায়, তেমন কথাবার্তাও চলছে। রবিশঙ্কর সেন্টারের যিনি প্রধান, তাঁর নাম সিমরন। তিনি বিদেশে রবিশঙ্করজিকে ঘিরে বড় করে অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করছেন। এই অনুষ্ঠানে আমিও থাকব আশা করি।

পণ্ডিত রবিশঙ্কর। ছবি: সংগৃহীত।

রবিশঙ্করের সঙ্গে দুর্গাপুজো নিয়ে কখনও কথা হয়েছে?

না ওঁর সঙ্গে দুর্গা পুজো বা ফুটবল নিয়ে আলোচনা না করে জীবনদর্শন নিয়ে আলোচনা করেছি।

কেমন সে আলোচনা?

১৯৯৫ সালে জাপান গিয়েছি। তখন আমি কাঁচা কাঁচা, ম্যারিনেটেড জাপানি খাবার একদম খেতে পারতাম না। রবিশঙ্করজি পাশে বসেছিলেন, বললেন, ‘‘এই তো সুযোগ ওয়ার্ল্ড সিটিজেন হওয়ার! তুমি যদি সারা পৃথিবীর মিউজিক নিয়ে থাকতে চাও, তা হলে তোমার কাজ হবে সব কালচারের খাবার খাওয়া।’’ সেই যে অভ্যেস শুরু হল, এখন আমি হাত দিয়ে যেমন তাড়াতাড়ি খেতে পারি, তেমনই তাড়াতাড়ি চপস্টিক দিয়েও খাই। আর এটা রবিশঙ্করজির জন্যই। সারা পৃথিবীর দরজা উনি এ ভাবেই খুলে দিয়েছেন।

এখন যে আপনার বাবা নেই। পারিবারিক ঘরানায় পুজো কী ভাবে উপভোগ করেন?

পুজো আমার কাছে বিরতি নিয়ে আসে, হালকা হওয়ার। মা এসেছেন। দূর থেকে ঢাকার শব্দ ভেসে আসছে। শরতের হাওয়া...এই আর কী। কখনও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, খাওয়াদাওয়া। টোটো কোম্পানির মধ্যে একদম নেই আমি। বরং জয়া মাকে নিয়ে, ছেলেদের নিয়ে একটু প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে যায়। ওর শখ আছে।

আচ্ছা আপনি কখনও ঢাক বাজিয়েছেন?

অবশ্যই বাজিয়েছি। আমাদের পাড়া কবীর রোডের ‘বেঙ্গল ইমিউনিটি’ ক্লাবের পুজোয়। বেহালার সেনহাটি কলোনির দুগ্গাপুজোয় বাবা আর আমি এক সঙ্গে ঢাক বাজিয়েছি। পাড়ার সবার অনুরোধে।

আপনার স্ত্রী জয়ার বাপের বাড়ি তো গুয়াহাটি। কখনও ওখানে দুর্গাপুজোয় গিয়েছেন?

এক বার গেছিলাম। খুব ভাল লেগেছিল। ওখানে পুজোর বেশ রমরমা। জয়ার বাড়ির লোকজনও খুব জমাটি।

পুজোয় কেন্দ্র কোনও তালবাদ্যের অনুষ্ঠান করবেন নাকি কলকাতায়?

রিজেন্ট পার্ক গভর্নমেন্ট এস্টেট শারদীয়া কমিটির পুজোর হীরক জয়ন্তী এ বার। আমি সেখানে বাজাব। আমার এক বিশেষ বন্ধু ওই পুজোর সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া আমার সঙ্গীত পরিচালনায় আসছে একটা ছবি আসছে।

সঙ্গীতশিল্পী হরিহরণ এবং বিক্রম ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।

আর কোনও মিউজিক রিলিজ?

আমরা চার জন মিলে একটা সংস্থা তৈরি করেছি। আমার সঙ্গে আছেন, গৌরাঙ্গ জালান, উৎসব পা্রেখ আর মায়াঙ্ক জালান। সেখান থেকে বাংলা গানের একটা অ্যালবাম রিলিজ হচ্ছে। যেখানে গাইছেন হরিহরণজি, শান, মহালক্ষ্মী আয়ার, অমিত কুমার, কৌশিকী চক্রবর্তী, জুবিন গর্গ, সোনা মহাপাত্র ...।

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ এত গভীর হয়ে গেল কী করে? আপনি তো ক্ল্যাসিকালের শিল্পী।

আমার সব রকম মিউজিক ভাল লাগে। যদিও আমি সিনেমা ভালবাসি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির নিয়মিত কাজ শুরু করি পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে। দেরিতেই। আগে টুকটাক কিছু কাজ করেছি। হিন্দি বাংলা হিট ছবির মিউজিক করে ৫৩টা ছবি হয়ে গেল। অনেক পুরস্কার এসেছে তার জন্য। এক সময় ভাবতাম সিনেমায় মিউজিক শখের কাজ। এখন আমার কাছে এটি একটা গুরুত্বপূর্ণ পেশা।

সাক্ষাৎকার: সংযুক্তা বসু

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement