বাজেটের দূরত্ব আর মাত্র তিন দিন। সেনসেক্সের ২৬ হাজার ছুঁতে আর মাত্র ৩৮ পয়েন্ট।
বৃহস্পতিবার প্রযুক্তিগত গোলযোগে মুম্বই স্টক এক্সচেঞ্জ ঘণ্টা আড়াই বন্ধ না-থাকলে ওই দিনই পর্দায় সম্ভবত ২৬ হাজার দেখতে পেতাম। এর ঠিক আগে সূচক স্পর্শ করেছিল ২৫,৯৯৯ অঙ্ক। শুক্রবার বাজার বন্ধের সময়ে সেনসেক্সের অবস্থান ছিল ২৫,৯৬২ অঙ্কে। কাজেই ২৬ হাজার এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
অবশ্য ২৬ হাজার ছোঁয়াটাই বড় কথা নয়, দেখতে হবে সূচক বাজেটের পরে ২৬ হাজারে দাঁড়িয়ে থাকতে এবং আরও উপরে উঠতে পারে কি না। সবটাই নির্ভর করবে অরুণ জেটলির প্রথম বাজেট সদর্থক অর্থনৈতিক দিশা দেখায় কি না এবং তা শিল্পমহল ও শেয়ার বাজারের, বিশেষত বিদেশি লগ্নিকারীদের পছন্দ হয় কি না, তার উপর।
এ বারের বাজেট থেকে বাজারের প্রত্যাশা বিরাট। পাশাপাশি, জেটলির সামনে সমস্যার পাহাড়ও খুব ছোট নয়। অর্থাৎ সবাইকে সমান খুশি করা সম্ভব নয় প্রথম বাজেটেই। একই সঙ্গে উন্নয়ন এবং বড় করছাড় সম্ভব না-হওয়াটাই স্বাভাবিক। দেশের স্বার্থে কিছু কড়া দাওয়াইও থাকতে পারে। যে-সব শিল্পের আশা তেমন পূর্ণ হবে না, সেগুলির শেয়ারে ঝটকা লাগতে পারে বৃহস্পতিবার বাজেটের বারবেলায়। সামগ্রিক ভাবে বাজারের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা অনুমান করা শক্ত হলেও বাজেট যদি মাঝারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে উন্নয়নের দিশা দেখাতে পারে, তবে কিন্তু বাজেটের চুলচেরা বিশ্লেষণের পরে সূচক ঊর্ধ্বগতিই পাবে। মনে রাখতে হবে বাজার এতটা উঠে এসেছে মূলত আশার উপর ভর করে। বাজেট সামগ্রিক ভাবে তার মনে না-ধরলে বেয়ার-রা কিন্তু হুড়মুড়িয়ে ঢোকার চেষ্টা করবে। মূল বাজেটের আগে থাকবে রেল বাজেট ও আর্থিক সমীক্ষা। এই দুইয়েরও প্রভাব থাকবে সোম ও মঙ্গলবার। প্রাক্ বাজেট পর্বে অতি উত্তেজনায় বাজার যদি বেশি চড়ে যায়, তবে তার সুযোগ নিতে কিছু শেয়ার বেচা যেতে পারে। পরে সংশোধন পর্বে তা ফের কিনে নেওয়া যায়। অর্থাৎ খুব সজাগ থাকতে হবে এই সপ্তাহটা।
এ বার তাকানো যাক বাজারের অন্যান্য ঘটনার দিকে, যেগুলির কম-বেশি প্রভাব থাকবে সূচকের উপর—
• প্রথম ত্রৈমাসিক ফলাফল: বাজেটের পরপরই প্রকাশিত হতে শুরু করবে ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিক কোম্পানি ফলাফল। প্রথা অনুযায়ী প্রথম দিকেই ফল প্রকাশ করবে শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি।
• গাড়ি বিক্রি: জুন মাসে গাড়ি বিক্রি ভাল বেড়েছে। এ নিয়ে টানা দু’মাস বিক্রি বাড়ল। গত মাসে শুধু মারুতি-সুজুকিই বেচেছে ১,০০,৯৬৪টি গাড়ি। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১% বেশি। অর্থনীতির জন্য এটি ভাল খবর। এতে ভর করে মারুতি শেয়ার এখন তুঙ্গে।
• কর্মসংস্থান: বেসরকারি একটি সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী চলতি আর্থিক বছরে দেশে কর্মসংস্থান বাড়তে পারে ১১.৩% হারে। গড়ে বেতন বাড়তে পারে ৫ থেকে ১৪%। সরকার, দেশ এবং শেয়ার বাজারের জন্য ভাল খবর।
• বর্ষা: দেরিতে হলেও পূর্ব ভারতের মাটি এখন অনেকটাই ভিজেছে। তবে মৌসুমি বায়ু উত্তর ভারতের দিকে এগোলেও মধ্য এবং পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখনও খটখটে। এটি মোদীর মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে উঠতে পারে।
• পেঁয়াজ: পেঁয়াজ জল এনেছিল আগের বিজেপি সরকারের চোখে। এ বারেও তারা সরকারে আসামাত্রই মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। এই সমস্যাকে উৎসমূলেই বিনাশ করতে সরকার এরই মধ্যে বাড়িয়েছে পেঁয়াজ রফতানির ন্যূনতম দর। কড়া নির্দেশ জারি করা হয়েছে মজুতদারির বিরুদ্ধে। সুষম বণ্টনেরও ব্যবস্থা হচ্ছে।
• ডলার/সোনা: ডলারের দাম ক’দিন আগে ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় কিছুটা বেড়েছিল সোনার দামও। বাজেটের মুখে বিদেশি লগ্নি বেড়ে ওঠায় আবার নামছে ডলারের দাম। বাজেটের পরেও যদি বিদেশি লগ্নি-প্রবাহ অটুট থাকে, তবে সোনার দর আবারও নামতে পারে।