ন্যাসকমের সভায় সংগঠনের কর্তাদের সঙ্গে পূর্ব-ভারতে ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনার স্কট ফার্সেডন উড (বাঁ দিক থেকে তৃতীয়) এবং রাজ্যের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অমিত মিত্র।—নিজস্ব চিত্র।
ন্যাসকমের সঙ্গে জোট বেঁধে এ বার কলকাতায় তথ্যপ্রযুক্তির আঁতুড়ঘর (ইনকিউবেশন সেন্টার) তৈরি করবে রাজ্য।
শুক্রবার ন্যাসকমের অনুষ্ঠানে এসে এই দাবি করে শিল্প তথা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অমিত মিত্র জানান, এ জন্য তাদের ওয়েবেল ভবনে ১০ হাজার বর্গ ফুট জায়গা দেওয়া হচ্ছে।
তথ্যপ্রযুক্তির মতো মেধা নির্ভর শিল্পে এ ধরনের আঁতুড়ঘর যে কত জরুরি, বার বার তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে পশ্চিমী দুনিয়া। কারণ, ইনকিউবেশন সেন্টারের মানেই হল, সেখানে উদ্ভাবনী পরিকল্পনা (আইডিয়া) নিয়ে কেউ এলে, সব ধরনের সাহায্য পাবেন তিনি। প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার পরিকাঠামো মিলবে। চেষ্টা থাকবে পুঁজি জোগাড়ের। থাকবেন দিশা দেখানোর মতো শিল্পপতি। তৈরি পণ্য বা পরিষেবা বাজারে পৌঁছে দেওয়ার কৌশল বাতলানোর লোকও থাকবেন সেখানে। যদিও ন্যাসকম-রাজ্যের এই সেন্টারে সেই সব সুবিধার কতটা কী থাকবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ন্যাসকমের অবশ্য দাবি, উদ্ভাবনী চিন্তার খোরাক পেলে উদ্যোগ পুঁজির (ভেঞ্চার ক্যাপিটাল) মাধ্যমে টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করা হবে এই সেন্টারে। থাকবে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার বন্দোবস্তও। তবুও শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থা পর্যাপ্ত হবে কিনা, তার উত্তর দেবে সময়ই।
দুশ্চিন্তার শিকড় রয়েছে আরও এক জায়গায়। তা হল, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এবং সেখানে শুরুতে পুঁজি জোগানো ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অনেক সময়ই মনে করে, শুধু ‘আইডিয়া’টুকু যথেষ্ট নয়। তা থেকে তৈরি পণ্য বা পরিষেবাকে বাণিজ্যিক ভাবে লাভজনক করতে দরকার ভাল বাজারও। তা না-থাকলে আঁতুড়ঘর গড়ার পরও ‘স্টার্ট আপ’ পাড়ি দেবে ভিন্ রাজ্যে। উদাহরণ হিসেবে উঠে আসছে কলকাতার সংস্থা টুকিটাকি ডট কম। যারা স্রেফ বাজারের টানেই বেঙ্গালুরু পাড়ি দিয়েছে। এই সংস্থাকে পুঁজির জোগানো মাইক্রোসফট ভেঞ্চার্স টুকিটাকির সম্ভাবনা বুঝেই জানিয়ে দিয়েছিল যে, বেঙ্গালুরুতে ব্যবসা নিয়ে গেলে আখেরে লাভ। আর বাজারের টানেই সে কথা মেনেছে টুকিটাকি।
রাজ্যে ইনকিউবেশন সেন্টার তৈরির ভাবনা অবশ্য নতুন নয়। ২০০৭ সাল থেকে চিপ ডিজানিং-এর পরিকাঠামো ইন্ডিয়া ডিজাইন সেন্টার প্রকল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। কিন্তু তা এখনও রয়ে গিয়েছে পরিকল্পনার স্তরেই। অথচ মেধা সম্পদ ব্যবহার করে রাজ্যকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে এগিয়ে নিয়ে যেতে ইন্ডিয়া ডিজাইন সেন্টারের পরিকল্পনা করা হয়। সল্টলেকে প্রায় দু একর জমির উপরে এই পরিকাঠামো তৈরি হওয়ার কথা ছিল। ১২০ কোটি টাকার প্রকল্পে ২৪ তলা বাড়িতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও গবেষণাগার তৈরি হওয়ার কথা। সল্টলেকে জমি নিয়ে সমস্যা হওয়ায় রাজারহাটে প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।
তবে এ দিনের অনুষ্ঠানে ন্যাসকম প্রেসিডেন্ট আর চন্দ্রশেখর জানান, রাজ্যেও স্টার্ট আপ গড়ে তোলার মতো শিল্পোদ্যোগী আছেন। পরিকাঠামো এবং উৎসাহ পেলে এখানেও বেঙ্গালুরুর মতো স্টার্ট আপ সংস্থার সংখ্যা বাড়বে। তাঁর দাবি, রাজ্য জায়গা দেওয়ায় সেন্টার তৈরির কাজ সহজ হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যেই তা পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারবে বলেও মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, এর আগে রাজ্য তার নিজস্ব উদ্যোগ পুঁজির তহবিল গড়েছে। কিন্তু তা যে সব নয়, তা জানে সরকার। আর সেই কারণেই জেলায় জেলায় ইনকিউবেশন সেন্টার গড়তে কর্পোরেটের হাত ধরতে চায় তারা।
অবশ্য শুধু ইনকিউবেশন সেন্টার তৈরি করে সমস্যার সমাধান হবে না বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তাদের মতে, তার সঙ্গে চাই বাজারও। পরিসংখ্যানও সেই কথাই বলে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ভারতে যত প্রযুক্তি সংক্রান্ত স্টার্ট আপ তৈরি হয়, তার ২৮ শতাংশের শিকড়ই বেঙ্গালুরুতে। দিল্লিতে ২০%, পুনে-মুম্বইয়ে ১৫%। কলকাতা-সহ পূর্বাঞ্চলে তা মাত্র ১০%। নতুন সেন্টার এই সমস্যা মেটাবে কি? উত্তর দেবে সময়ই।