‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র পরে ‘শ্রমেব জয়তে’। শ্রমের মর্যাদা বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার শ্রমিক কল্যাণে একগুচ্ছ সংস্কার আনলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
দেশি-বিদেশি শিল্পপতিদের মন জয়ের লক্ষ্যে ভারতে পণ্য তৈরির আহ্বান জানিয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির উদ্বোধন গত মাসেই করেছিলেন মোদী। এ বার দেওয়ালির আগে তারই পরিপূরক হিসেবে তিনি ঘোষণা করলেন ‘শ্রমেব জয়তে’, যার অর্থ শ্রমই জয়ের একমাত্র চাবিকাঠি। মোদী বলেছেন, এ দেশে ব্যবসা করা আরও সহজ হলে তবেই সফল হবে তাঁর মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচি। আর, সেই কারণেই শ্রমিকদের দক্ষ করতে এই সংস্কার। ‘ইন্সপেক্টর রাজ’ ও জটিল শ্রম বিধির জমানা বদলে দিয়ে বিনিয়োগমুখী পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই কর্মসূচি চালু করে শিল্পপতিদেরই আশ্বস্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এই প্রয়াসকে স্বাগত জানিয়ে মোদীর উপরেই আস্থা রেখেছে শিল্পমহল।
লাল ফিতের ফাঁসের বদলে কেন্দ্রীয় সরকার যে শিল্পপতিদের লাল কার্পেট পেতে অভ্যর্থনা করতে চায়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক মারফত আনা এই কর্মসূচি চালু করে সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তবে এর জন্য আগে শ্রমিকদের সম্মান করে তাঁদের ‘শ্রমযোগী’-র শিরোপা দিতে বলেছেন তিনি। যে-কোনও তথাকথিত উঁচু পদের কাজ বা ‘হোয়াইট কলার্ড জব’-এর সঙ্গে তিনি এক সারিতে বসাতে বলেছেন শ্রমিকদের। তাঁর মতে তা হলে ওই কর্মযোগীই ধাপে ধাপে হয়ে উঠবেন ‘রাষ্ট্র যোগী’ ও ‘রাষ্ট্র নির্মাতা’। শ্রমিকদের দৃষ্টিকোণ থেকেই সমস্যাকে বুঝে নিয়ে সহানুভূতির সঙ্গে তার সমাধান করতে বলেছেন মোদী।
শ্রম মন্ত্রক সূত্রের খবর, শ্রমেব জয়তে কর্মসূচি ৫টি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে: প্রথমত রয়েছে শ্রম সুবিধা পোর্টাল তৈরি করা, যার মাধ্যমে প্রতিটি সংস্থা নিজস্ব লেবার আইডেন্টিফিকেশন নম্বর পাবে। ওই নম্বর মারফত পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। ইন্সপেক্টর রাজ জমানার অবসান ঘটাতে কারখানা পরিদর্শন ব্যবস্থা এর মারফত সরল করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, রয়েছে পিএফের আওতায় থাকা প্রায় ৪ লক্ষ কর্মীকে ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া। তৃতীয়ত, শিল্পে কর্মী দক্ষতা বাড়াতে চালু হচ্ছে শিক্ষানবিশ প্রোৎসাহন কর্মসূচি। চতুর্থত রয়েছে দেশ জুড়ে ১১,৫০০ আইটিআই মারফত বৃত্তিমূলক শিক্ষায় উৎসাহ দেওয়া। পঞ্চমত, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনায় চালু হচ্ছে অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্য স্মার্ট কার্ড। ওই কার্ডে দু’টি কিংবা তারও বেশি সংখ্যক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের খোঁজ দেওয়া হবে।
বণিকসভা সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এই সংস্কার কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, শ্রম সুবিধা পোর্টাল শ্রম আইন মেনে চলার পক্ষে আরও বেশি সহায়ক হবে। ইন্সপেক্টর রাজের হাত থেকে মুক্তি পেলে শিল্পের সার্বিক পরিবেশ উন্নত হবে বলেও তিনি মনে করছেন। আইন সরল হলে তা বিশেষ ভাবে ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পকে সাহায্য করবে। কর্মী প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে উন্নত করার প্রয়াসের প্রশংসা করেছে ফিকি। অ্যাসোচ্যামও পিএফের আওতায় থাকা কর্মীদের অভিন্ন নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে। পাশাপাশি, মোদী প্রশংসা কুড়িয়েছেন রফতানিকারীদের সংগঠন ফিও-র। তাদের মতে ব্যবসা করা এ বার সত্যিই আরও ‘সহজ’ হবে।