রাজ্যে এই প্রথম পা রাখছে তাইল্যান্ডের লগ্নি।
তাইল্যান্ডের প্রথম সারির খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা ক্রুঙ্গসিয়াম বেভারেজ কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারতে ব্যবসা শুরু করতে চলেছে। স্থানীয় সংস্থা পূরব-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এ রাজ্যে উত্পাদন কেন্দ্র তৈরি করছে প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার ব্যবসা করা এই সংস্থা। তাদের দাবি, রাজ্যে ২০০ কোটির প্রকল্প তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
ক্রুঙ্গসিয়াম মূলত এনার্জি ড্রিঙ্ক ও ফ্রুট জুস উত্পাদন করে। বিশ্বের ১৭টি দেশে ‘কমান্ডো’ ও ‘ইয়াকু’ ব্র্যান্ডের প্যাকেটবন্দি এনার্জি ড্রিঙ্ক ও ফলের রস রফতানি করে এই সংস্থা। ১৯৯৯ সালে তৈরি সংস্থার বর্তমান কর্ণধার সিনতানাসাক আতসারাসি ই-মেল মারফত জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের এই কারখানা শুধু ভারতের বাজারের জন্যই পণ্য উত্পাদন করবে না। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানের পাশাপাশি এই কারখানার উত্পাদন পশ্চিম এশিয়ায় রফতানি করা হবে। আপাতত প্রায় ১০০ কোটি টাকা লগ্নি করবে তাঁর সংস্থা।
তাই সংস্থাকে এ রাজ্যে টেনে নিয়ে আসার পেছনে রয়েছেন পূরব-এর কর্ণধার জন মুখোপাধ্যায়। নির্মাণ শিল্পের ব্যবসায়ী জন ফর্মুলা ওয়ান রেসিং-এর মার্শালও বটে। তাইল্যান্ডে কার রেসিং-এর সূত্রেই জনের সঙ্গে সে দেশের শিল্পমহলের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রেসিং ট্র্যাক তৈরি না-হলেও এ রাজ্যের জন্য লগ্নি টানতে সফল জনের দাবি, শুধুই বিনিয়োগ নয়, ২০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের জন্য যাবতীয় প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে ক্রুঙ্গসিয়াম। কারখানার সমস্ত যন্ত্রপাতি বসানোর দায়িত্বও তাদের।
কল্যাণী হাইওয়ের পাশে পাঁচ একর জমিতে এই কারখানা গড়ে উঠবে। জমি কেনা আগেই হয়েছে। শুরু হয়েছে কারখানা তৈরির কাজও। ২০১৫ সালের গোড়ায় উত্পাদন কেন্দ্র তৈরি হয়ে যাবে। শুরু হয়ে যাবে বাণিজ্যিক উত্পাদনও। প্রকল্পের ৫১ শতাংশের মালিক জন মুখোপাধ্যায় জানান, কারখানায় দৈনিক ১২ লক্ষ এনার্জি ড্রিঙ্কের ক্যান উত্পাদন করার ক্ষমতা থাকবে। এ ছাড়া প্রতিদিন ৫ লক্ষ বোতল জল উত্পাদনও হবে এখানে। দেশের বাজারের পাশাপাশি বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও পশ্চিম এশিয়ায় এই কারখানার পণ্য রফতানি করা হবে।
তবে সম্পূর্ণ উত্পাদন ক্ষমতা সদ্ব্যবহারের আগে ভারতের বাজার মেপে নিতে চায় যৌথ উদ্যোগের দুই অংশীদারই। সেই সূত্রেই দেশে কমান্ডো এনার্জি ড্রিঙ্ক বিপণনের দায়িত্ব নিয়েছে পূরব। শীঘ্রই এই পণ্য বাজারে ছেড়ে ক্রেতাদের মন যাচাই করতে চায় তারা। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, মূলত মেট্রো ও বড় শহরেই এ ধরনের পানীয়ের চাহিদা বেশি। চাহিদার নিরিখে দিল্লি, মুম্বই ও বেঙ্গালুরুর পেছনে রয়েছে কলকাতা।
প্রকল্পের বাণিজ্যিক সাফল্য নিয়ে অবশ্য কোনও দ্বিধা নেই তাদের। তার প্রধান কারণ ভারতে এনার্জি ড্রিঙ্কের লাফিয়ে বাড়তে থাকা চাহিদা। ফ্রস্ট অ্যান্ড সুলিভানের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে এনার্জি ড্রিঙ্কের বাজারের মাপ ৭০০ কোটি টাকার। এবং বার্ষিক ২৫% হারে বাড়ছে এই বাজার। বাজারের ৭৫% রেড বুল-এর দখলে। তবে ব্যবসায় এখনও টিঁকে রয়েছে ক্লাউড নাইন, রেস্টলেস, জিঙ্গা, বার্ন-সহ অন্যান্য ব্র্যান্ডও। কারণ স্বাস্থ্য সচেতন ক্রেতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এই বাজারও।
এই বাজারের সঙ্গে ফলের রস-সহ নরম পানীয়ের বাজারের দিকেও নজর রয়েছে তাই সংস্থাটির। ৭০০০ কোটি টাকার সেই বাজারে নিজেদের ব্র্যান্ড ছাড়তে চায় ক্রুঙ্গসিয়াম। প্রাথমিক ভাবে সমস্ত পণ্য তৈরি হবে এ রাজ্যে। বাজারের চাহিদা বুঝে অন্যান্য রাজ্যেও সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।