সোনা আমদানির উপর কড়াকড়ি আরও শিথিল করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এখন থেকে ব্যাঙ্কগুলি সোনার মুদ্রা বা গোল্ড কয়েন আমদানি করতে পারবে। ব্যাঙ্ক ছাড়া নির্দিষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন বাণিজ্য সংস্থাও আমদানি করতে পারবে সোনা। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, স্বর্ণমুদ্রা আমদানি করলেও তা সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করা যাবে না। শুধু গয়না প্রস্তুতকারকদের কাছেই তা বিক্রি করতে পারবে ব্যাঙ্ক। তবে ব্যবসায়ীদের ইঙ্গিত, এর ফলে বাজারে কমতে পারে সোনার দাম।
আমদানি খাতে বিদেশি মুদ্রার খরচ কমাতে সোনা আমদানির উপর প্রথম বিধিনিষেধ জারি করেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। সরকারি নীতির সঙ্গে তাল রেখে আরবিআইও বিশেষ করে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সোনা আমদানির উপর নানা বিধিনিষেধ জারি করে। দীর্ঘ দিন ধরেই স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলেন। কারণ, এর ফলে কাঁচা সোনার পাশাপাশি গয়না ব্যবসায়ীরাও সমস্যায় পড়েছিলেন। এ বার বিধিনিষেধ অনেকটাই ওঠার ফলে খুশি স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ফেডারেশনের পরিচালন পর্ষদের ডিরেক্টর হর্ষদ আজমেরা বলেন, “বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ায় দেশে সোনার ব্যবসা এ বার দ্রুত এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি, চোরাপথে আমদানি বন্ধ হবে, ফলে সরকারের আয়ও বাড়বে।”
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অবশ্য মাস দুয়েক আগেই সোনা আমদানির উপর বিধিনিষেধ শিথিল করতে শুরু করে। গত বছরের ২৮ নভেম্বর আমদানি করা সোনার ২০% বাধ্যতামূলক ভাবে রফতানির উদ্দেশ্যে ব্যবহারের আইনটি তুলে নেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এটি স্বর্ণ ব্যবসায়ী মহলে ৮০:২০ প্রকল্প নামে পরিচিত। তবে এ ব্যাপারে নির্দেশিকা নিয়ে ব্যবসায়ীদর মধ্যে ধন্দ ছিল। তা এ বার কেটেছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, গত ২৮ নভেম্বরের আগে যে-সোনা আমদানি করা হয়েছিল, তার অনেকটাই রয়ে গিয়েছে ব্যবসায়ীদের হাতে। যে-বিষয়টি নিয়ে ধন্দ সৃষ্টি হয় তা হল, হাতে থাকা ওই সোনার ২০ শতাংশও কি রফতানির জন্য ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক? রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, ওই দিন পর্যন্ত আমদানি করা সোনার ২০ শতাংশ পুরনো আইন মেনেই রফতানির জন্য ব্যবহার করতে হবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী এ বার থেকে ব্যাঙ্কগুলি ‘কনসাইনমেন্ট’-এর ভিত্তিতে ফের সোনা আমদানি করতে পারবে। ওই ব্যবস্থায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা ব্যাঙ্কের কাছে এক লপ্তে সোনা আমদানির বরাত দিলেও, এক সঙ্গে পুরো সোনা ছাড়াতে হয় না। কিস্তিতে তা ছাড়ানো যায়। ব্যাঙ্কও সেই মতো কিস্তিতে বিদেশ থেকে সোনা আমদানি করে ব্যবসায়ীদের তা জোগান দিতে পারে। বছর খানেক আগে এই কনসাইনমেন্ট ব্যবস্থা তুলে দিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এর ফলে ব্যবসাীদের পুরো টাকা দিয়ে বরাতের পুরো সোনাই ছাড়াতে হত, যেটা অনেক ব্যবসায়ীর পক্ষেই সম্ভব ছিল না।
আরবিআই-এর নয়া নির্দেশিকায় এখন থেকে সোনা কেনার জন্য কম সুদে ব্যবসায়ীদের ব্যাঙ্কঋণ দেওয়ার রাস্তাও আবার খুলে গেল বলে জানিয়েছেন আজমেরা। তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, চোরাপথে সোনা কেনার জন্য স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের যে-বাড়তি দাম গুনতে হত, এ বার থেকে তা আর হবে না। এর ফলে বাজারে সোনার দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁর আশা, এর ফলে গয়নার দামও কমতে পারে। পাশাপাশি গয়নার ব্যবসা সম্প্রসারণের রাস্তাও খুলে গেল। এতে উপকৃত হবেন গয়নার কারিগররাও।
প্রসঙ্গত, সোনা আমদানির উপর ২০১৩ সাল থেকে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। সে সময়ে চলতি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ঘাটতি লাফিয়ে বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার ও শীর্ষ ব্যাঙ্ক এই সিদ্ধান্ত নেয়। সোনা আমদানি বাগে আসায় এবং বিশ্ব বাজারে তেলের দাম তলানিতে নেমে আসায় এই ঘাটতি এখন অনেকটাই কমেছে, যার জেরে আরবিআই-এর এই সিদ্ধান্ত। এ বার আসন্ন বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার সোনার আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনবে বলেও আশা শিল্পমহলে। এই মুহূর্তে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ভাণ্ডার ৩৩ হাজার কোটি ডলারের মতো।