গুটিয়ে যাচ্ছে ডেসকন

বাজার খারাপ, দাবি কর্তৃপক্ষের

ঝাঁপ বন্ধ হচ্ছে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ডেসকনের। সংস্থাটি গুটিয়ে গেলে প্রায় ২০০ কর্মী রুজি-রুটি হারাবেন। তাঁদের অভিযোগ: সংস্থায় নিয়মিত বেতন হচ্ছে না, ব্যবসা চালানোর কোনও সদিচ্ছাও কর্তৃপক্ষের নেই। কর্তৃপক্ষের অবশ্য পাল্টা দাবি, বাজার খারাপ। তাই বাধ্য হয়েই সংস্থা বন্ধ করা হচ্ছে। তবে পরিচালনার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ঢিলেঢালা মনোভাবই ডেসকনের এই পরিণতির জন্য দায়ী বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মহলের।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৪ ০০:১৪
Share:

ঝাঁপ বন্ধ হচ্ছে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ডেসকনের।

Advertisement

সংস্থাটি গুটিয়ে গেলে প্রায় ২০০ কর্মী রুজি-রুটি হারাবেন। তাঁদের অভিযোগ: সংস্থায় নিয়মিত বেতন হচ্ছে না, ব্যবসা চালানোর কোনও সদিচ্ছাও কর্তৃপক্ষের নেই। কর্তৃপক্ষের অবশ্য পাল্টা দাবি, বাজার খারাপ। তাই বাধ্য হয়েই সংস্থা বন্ধ করা হচ্ছে। তবে পরিচালনার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ঢিলেঢালা মনোভাবই ডেসকনের এই পরিণতির জন্য দায়ী বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মহলের।

১৪০ বছরের পুরনো অ্যান্ড্রু ইয়ুল গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ডেসকনের জন্ম ইতিহাস। কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যান্ড্রু ইয়ুল গোষ্ঠীর সংস্থা দিশেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিএসসি)-এর পরিচালন কর্তৃপক্ষের আগ্রহে তৈরি হয় ডেসকন। ১৯৯৫ সালে গঠিত হয় এই নয়া সংস্থা। মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি ও তার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত কাজকর্মের বরাত জোগানোর লক্ষ্যে ডেসকন গড়ে তোলা হয়। সে সময়ে অ্যান্ড্রু ইয়ুল গোষ্ঠীর অন্যতম লাভজনক সংস্থা ছিল ডিপিএসসি।

Advertisement

তবে ডিপিএসসি-র সহযোগী ডেসকন পৃথক সংস্থা হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরিচালন কর্তৃপক্ষ প্রায় একই ছিল।

দু’টি সংস্থার শেয়ার কাঠামোতেও তার প্রতিফলন হয়। ডেসকনের ২০ শতাংশ শেয়ার ছিল ডিপিএসসি-র হাতে। তবে মূলত ডেসকনের পুঁজির জোগান দিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু ইয়ুল গোষ্ঠীর কর্মীরাই। তার কারণ, বাকি ৮০ শতাংশ শেয়ার মূলধন কর্মীদের কাছ থেকেই তোলা হয়েছিল। অন্য দিকে ডিপিএসসি-র প্রায় ৩৩ শতাংশ শেয়ার ডেসকনের হাতে ছিল।

ডেসকনের শুরুটা ভালই হয়েছিল। ডিপিএসসি-র প্রায় সমস্ত কাজের বরাত পাওয়ার দৌলতে ডেসকনের ব্যবসাও এগোচ্ছিল। এ পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল।

দুর্দিনের সূত্রপাত এর পরেই। ২০০৯-’১০ সালে ডিপিএসসি বিক্রি হয়ে যায়। সংস্থাকে কিনে নেওয়ার জন্য ডেসকন কর্তৃপক্ষ জিন্দল গোষ্ঠীর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ডিপিএসসি কিনে নেয় শ্রেয়ী গোষ্ঠী। ডিপিএসসিতে নিজেদের শেয়ারের বদলে ৯০ কোটি টাকার বেশি হাতে পায় ডেসকন। এই সময় থেকেই ডেসকনের বরাতের খাতা প্রায় ফাঁকা হতে শুরু করে। প্রশ্ন উঠেছে এই ৯০ কোটি টাকার সদ্ব্যবহার নিয়েও।

সব মিলিয়ে সংস্থার বেহাল দশার ছবি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শালবনির ইস্পাত প্রকল্প বাস্তবায়িত না-হওয়ার ফলে ডেসকন সম্পর্কে আগ্রহ হারায় জিন্দল গোষ্ঠীও। সংস্থা থেকে সরে দাঁড়ায় তারা। এর পরে আর একজন শিল্পপতির কাছে ডেসকনের শেয়ার গচ্ছিত রেখে টাকা তোলার চেষ্টা করেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা-ও সফল হয়নি। ফলে গত তিন বছর ধরে কার্যত কোনও কাজ পাচ্ছে না এক সময়ের লাভজনক সংস্থা ডেসকন।

কাজ না-থাকার ফলে কর্মীদের বেতনও হচ্ছে না সময় মতো। কর্মীদের অভিযোগ, কাজ পাওয়ার কোনও আগ্রহও দেখাননি কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে তাঁদের ক্ষোভ, সংস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে যে-ওজনের ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হয়, সে তুলনায় সংস্থার ব্যবসার পরিমাণ নেহাতই কম। ফলে তাঁদের পিছনে যে-বিপুল অর্থ খরচ করা হয়, তা অযৌক্তিক।

ডেসকন কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি জানিয়েছেন, সংস্থা বাঁচাতে জুন মাসের মধ্যেই ক্রেতা খোঁজার চেষ্টাও শুরু হয়েছে। তবে বিষয়টি যে এত দ্রুত সেরে ফেলা সম্ভব নয়, তা-ও স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁরা। অন্য দিকে, কর্মীদের পাল্টা দাবি, তাঁরা যে চলতি জুন মাসেই কাজ হারাচ্ছেন, সে কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যত তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement