প্রত্যাশা মতো সংস্কারের জয়ধ্বজা ওড়েনি। জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে শিল্পায়নের পথে নানা সমস্যা নিয়ে বাজেটে কোনও উচ্চবাচ্যও নেই। বড় প্রাপ্তি বলতে দুই সম্পদ কর তুলে দেওয়া এবং কোম্পানি কর ৫ শতাংশ কমানোর ঘোষণা। ফলে মুখে কেউ কেউ অরুণ জেটলির প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেটকে ‘দূরদৃষ্টি সম্পন্ন’-এর তকমা লাগালেও ক্ষোভটা রয়েই গিয়েছে শিল্পমহলের। আর সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যখন তাঁরা এই বাজেটকে দশের মধ্যে বিশেষ নম্বর দিতে চাননি।
শনিবার সাধারণ বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, আগামী চার বছরে কোম্পানি কর ধাপে ধাপে ৩০% থেকে ২৫%-এ নামিয়ে আনা হবে। একই সঙ্গে তুলে দেওয়া হয়েছে সম্পদ কর। বাজেটে এই জোড়া প্রাপ্তিতে কিছুটা সন্তুষ্ট শিল্পমহল। কেন্দ্র কোম্পানি কর কাঠামো সরলীকরণের পথে হাঁটছে বলে মনে করছে কর্পোরেট দুনিয়া। তাঁরা আরও মনে করছেন, বাজেটে যে ধরনের কর প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তা ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেবে। ফলে লগ্নি আসার পথ প্রশস্ত হতে পারে বলেও অনেকের আশা। পাশাপাশি কোটি টাকার উপরে যাঁদের আয়, তাঁদের উপর ২% সারচার্জ বসানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
জোড়া প্রাপ্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিল্পপতি আদি গোদরেজ। একই সঙ্গে তিনি উল্টো দিকটাও তুলে ধরে বলেন, “তবে উৎপাদন শিল্পের জন্য বিশেষ কোনও সুবিধা দেয়নি। উল্টে উৎপাদন শিল্পের উপর সারচার্জ বসানোয় করের বোঝা বেড়েছে।” বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের অন্যতম কর্তা অম্বরীশ দাশগুপ্তের মতে, কোম্পানি কর হ্রাসের সুবিধা কতটা দাঁড়াবে, তা ভবিষ্যতে বোঝা যাবে। তবে সম্পদ কর তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে তিনি বলেন, “সম্পদ করের হিসেব অনেক বেশি জটিল ছিল।” এক কোটির বেশি বেতন পান যাঁরা, তাঁদের পক্ষে ২% বাড়তি সারচার্জ দেওয়া সহজ এই মন্তব্য করে অম্বরীশবাবুর বক্তব্য, এর ফলে সরকারি কোষাগারেও আসবে অতিরিক্ত ৮ হাজার কোটি টাকা।
বণিকসভা ফিকির প্রেসিডেন্ট জ্যোৎস্না সুরি অবশ্য জানান, দেশের আর্থিক উন্নয়নের জন্য অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট একটি রোডম্যাপ সামনে রেখেছেন। বণিকসভা সিআইআই-এর প্রেসিডেন্ট অজয় শ্রীরাম বলেন, “আর্থিক বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের দিকে নজর রেখেই তৈরি হয়েছে ইতিবাচক এই বাজেট।” একই সুরে ভারতী এন্টারপ্রাইজেস-এর রাজন ভারতী মিত্তল জানান, কোম্পানি কর কমিয়ে এবং সম্পদ কর তুলে দিয়ে ব্যবসা করার প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করে দিয়েছে কেন্দ্র।
শুধুমাত্র কোম্পানি কর হ্রাস ও সম্পদ কর তুলে দেওয়াই নয়। কালো টাকার সমস্যা মেটাতে যে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্র, তা স্বাগত জানিয়েছেন বণিকসভা ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স, ভারত চেম্বার, ক্যালকাটা চেম্বার, এমসিসি চেম্বার অব কমার্স ও বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স। কেপিএমজি-র কর বিশেষজ্ঞ রাজর্ষি দাশগুপ্তের মতে, কর কাঠামোয় পরিবর্তন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা জোগাবে।
তবে এই বাজেট নিয়ে ক্ষুব্ধ নির্মাণ শিল্পমহল। তাদের অভিযোগ, জমি অধিগ্রহণ-সহ যে সমস্যার মুখে পড়ছে এই শিল্প, তার সমাধানসূত্র মেলেনি।