কাঞ্চনজঙ্ঘার মতোই গন্তব্য অনেক। কিন্তু বিদেশিদের ভিড় কোথায়?
পর্যটন তাদের কাছে পাখির চোখ। পর্যটনকে ঘিরে অগণিত মানুষের অন্ন- সংস্থান। নিত্যনতুন দ্রষ্টব্য স্থান তারা তুলে ধরছে পর্যটকদের সামনে। বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রেও তারা উঠে এসেছে অনেক উপরে। ছোট্ট সেই দেশ মালয়েশিয়ায় ২০১৪-এ বিদেশ থেকে প্রায় সওয়া দু’কোটি পর্যটক গিয়েছেন। ২০১৫-এ তারা প্রায় ৩ কোটি পর্যটকের আশায় পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছে।
এমন একটি দেশের পর্যটন কর্তাদের উপলব্ধি, আশপাশের দেশের পর্যটন শিল্পকেও সমান ভাবে উন্নত করতে হবে। তাদেরও তাল মিলিয়ে গড়তে হবে পরিকাঠামো, যাতে সেখানেও নিয়মিত পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। তার কারণ, যে-সব সংস্থা বিমান চালাচ্ছে, তারা দু’পিঠেই ভাল যাত্রী চায়।
নিজেদের দেশের পর্যটন উন্নয়নে চিন, হংকং, ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর যতটা এগিয়ে, ততটা যে ভারত এগিয়ে নেই, তা স্বীকার করে নিয়েছেন পর্যটন বিশেষজ্ঞরা। গুজরাত, হিমাচল, মধ্যপ্রদেশ, কেরল বা গোয়ার মতো কয়েকটি জায়গা ছাড়া পর্যটন নিয়ে তেমন সক্রিয়তা দেখা যায় না অন্যত্র। যেহেতু মালয়েশিয়ার পর্যটন দফতরের ‘রোডশো’ সম্প্রতি ছিল কলকাতায়, তাই প্রসঙ্গ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন নিয়েও। মালয়েশিয়ার পর্যটন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল আজিজান নুরদিনের কথায়, “আমরা আশা করব, মালয়েশিয়া থেকে আরও বেশি পর্যটক এ বার থেকে কলকাতায় আসবেন। আমরা চাই পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন দফতর গিয়ে আমাদের দেশে রোডশো করুক। তবে না আমাদের দেশের নাগরিকরা এই রাজ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন, এবং আসার জন্য উৎসাহিত হবেন।”
কলকাতা থেকে মালয়েশিয়ায় নিয়মিত উড়ান চালায় এয়ার এশিয়া। সস্তার এই বিমান পরিষেবা সংস্থার কর্তাদেরও বক্তব্য, মালয়েশিয়া যাওয়ার যাত্রী পাওয়া গেলেও সেখান থেকে কলকাতায় আসার নিয়মিত যাত্রী পাওয়া যায় না। যাঁরা যান, প্রধানত তাঁরাই ফেরেন। ও দেশের পর্যটক খুব বেশি আসেন না। যাঁরা বৈষ্ণব, তাঁরা মায়াপুরে আসেন। এখানকার অনেক পর্যটক সিঙ্গাপুর-ব্যাঙ্কক-হংকং ঘুরেও মালয়েশিয়া যান। তাতে একবারে দু’তিনটি দেশ দেখে নেওয়া যায়। কলকাতা থেকে নিয়মিত উড়ান চালানো ড্রাগন এয়ার, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, তাই এয়ারলাইন্সের কর্তাদেরও একই মত। কলকাতা থেকে যত যাত্রী যাচ্ছেন, তত জন এ দিকে আসছেন না।
ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশনের কর্তা অনিল পঞ্জাবি জানাচ্ছেন, যে-ভাবে ব্যাঙ্কক, মালয়েশিয়া পর্যটন ক্ষেত্রে অতি দ্রুত এগিয়ে চলেছে, আমাদেরও তা করে দেখাতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে দেখার মতো জায়গার তো অভাব নেই। কিন্তু, তা সঠিক ভাবে তুলে ধরার পরিকাঠামো নেই। অনিলের কথায়, “আমরাই তো বিক্রি করি। এ রাজ্যে সুন্দরবন বা দার্জিলিঙে হোটেলে থাকার সুবিধা কতটা আছে, সেখানে গিয়ে কোথায় কোথায় ঘোরা যায়, কী ধরনের প্যাকেজ হতে পারে, এ সব সম্পর্কে আমরা জানি না। জানলে তবে না বিক্রি করব?”
কী বলছে পর্যটন দফতর?
রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কথায়, “আমরা ২০১৪ সাল থেকে বিদেশে রোডশো শুরু করেছি। বার্লিন, লন্ডন, স্পেন-এ পশ্চিমবঙ্গের রোডশো হয়েছে। সেখানে দার্জিলিং, ডুয়ার্স, বোলপুর, দিঘা, সুন্দরবন সব জায়গাকেই তুলে ধরা হয়েছে। আমরা ভাল সাড়াও পাচ্ছি।” জানা গিয়েছে, সম্প্রতি দিল্লির প্রগতি ময়দানে পর্যটন-এর স্টল দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। কলকাতার পর্যটন মেলায় বিদেশিরা অংশ নিয়েছেন। গুজরাতের ট্রাভেল এজেন্টদের আমন্ত্রণ করে এনে ঘোরানো হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। পর্যটন দফতর সূত্রের দাবি, ২০১০ সালে যেখানে রাজ্যে দেশের অন্যত্র থেকে প্রায় ২ কোটি পর্যটক এসেছিলেন, ২০১৪ সালে এসেছেন প্রায় ৫ কোটি। এ রাজ্যে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যাটাও এই চার বছরে ১২ লক্ষ থেকে প্রায় ১৪ লক্ষ হয়েছে।
মালয়েশিয়ার পর্যটন দফতর জানাচ্ছে, ২০১৪-এ প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ ভারতীয় পর্যটক পেয়েছে তারা। পর্যটকদের মধ্যে অনেকে মালয়েশিয়ায় গিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান করছেন, কেউ মধুচন্দ্রিমার জন্য বেছে নিচ্ছেন, আবার কোনও সংস্থা সেখানে কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছে। নুরদিনের কথায়, “আমাদের দেশের আয়ের একটা বড় অংশ এখন পর্যটন ক্ষেত্র থেকে আসে। ২০১৫-এ পর্যটন ক্ষেত্র থেকে আমরা ৮৯০০ কোটি রিংগিত আয় করব বলে আশা করছি।” ভারতীয় মুদ্রায় যা দেড় লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি।