সংস্কারের রথের চাকায় গতি ফেরাতে যে কোনও মূল্যে বিমা বিল পাশ করাতে চায় কেন্দ্র। রাজনীতিকে যে তার পথে বাধা হিসেবে বরদাস্ত করা হবে না, শনিবার তা স্পষ্ট জানিয়েও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আর কেন্দ্রের এই একবগ্গা মনোভাবে খুশি বিমা শিল্প মনে করছে, শেষ পর্যন্ত ওই বিল সত্যিই পাশ হলে, আরও ৮,০০০ কোটি টাকার বিদেশি লগ্নি আসবে শুধু জীবনবিমায়। সাধারণ বিমাতেও তা আসতে পারে আরও ১,০০০ কোটি।
বর্তমানে ভারতে বিমায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা ২৬%। সেই সীমা বাড়িয়ে ৪৯% করতে চায় কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে কোনও ভারতীয় বিমা সংস্থায় আরও ২৩% বিদেশি বিনিয়োগ আসার দরজা খুলবে।
সংশ্লিষ্ট শিল্প মনে করে, জীবনবিমা এবং সাধারণ বিমা উভয় ক্ষেত্রেই বিদেশি লগ্নির সীমা বেড়ে ৪৯% হবে ঠিকই। কিন্তু তুলনায় অনেক বেশি অঙ্কের বিদেশি লগ্নি আসার সম্ভাবনা জীবনবিমায়। সেখানে সাধারণ বিমায় তা কতখানি আসবে, তা নিয়ে এখনই একই রকম আশাবাদী নন সকলে।
ব্রিটিশ বিমা সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড লাইফের ২৬% শেয়ার রয়েছে এইচডিএফসি স্ট্যান্ডার্ড লাইফে। সংস্থাটির এগ্জিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় ত্রিপাঠি বলেন, “দেশে জীবনবিমা শিল্পে মোট লগ্নি ৩৪ হাজার কোটি টাকা। তাই বিমা বিল পাশ হয়ে নয়া আইন চালু হলে, সেখানে আরও ৮ হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ আসার পথ খুলে যাবে। তবে কোন সংস্থা তার কতটা টানতে পারবে, তা এখনই বলা কঠিন। ব্যবসার অবস্থা, সম্প্রসারণের সম্ভাবনা ইত্যাদির উপর তা নির্ভর করবে।”
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, সাধারণ বিমার তুলনায় জীবনবিমাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। জীবনবিমায় যদি ৮ হাজার কোটি টাকার বিদেশি লগ্নি আসে, তবে সাধারণ বিমায় তা আসার সম্ভাবনা মেরেকেটে এক হাজার কোটি। কারণ, মূলধনের প্রয়োজন তুলনায় বেশি জীবনবিমাতেই। ব্যবসা ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগও সেখানে বেশি।
এসবিআই লাইফের প্রাক্তন ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও অতনু সেন বলেন, “জীবনবিমায় ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ ও সম্ভাবনা প্রচুর। এখন দেশে বিমা-প্রকল্প কেনার ক্ষমতা রয়েছে, এমন মানুষের মাত্র ৪ শতাংশ বিমার আওতায় এসেছেন। ফলে পড়ে রয়েছে বিস্তৃত বাজার। তা ছাড়া জীবনবিমা প্রকল্পগুলি দীর্ঘমেয়াদি হয়। সেখানে দায় দীর্ঘমেয়াদি। ফলে মূলধনের প্রয়োজনও বেশি।”
সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন...
বিমায় বিদেশি বিনিয়োগ
হয়তো এই সমস্ত কারণেই বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা বাড়লে, সাধারণ বিমায় নতুন বিনিয়োগ কতটা আসবে, তা নিয়ে সংশয়ী ওই বিমা সংস্থাগুলির কর্তারা। তাঁদের অনেকে মনে করছেন, বিল পাশ হলে, বিদেশি লগ্নি আসবে। তাতে বিদেশি মুদ্রার আমদানিও বাড়বে। কিন্তু সেই লগ্নি সব ক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগ না-ও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাবে পুরনো শেয়ারের হাতবদল হচ্ছে সেখানে। দেশি অংশীদারের থেকে শেয়ার কিনে নিচ্ছে বিদেশি লগ্নিকারীরা।
জার্মান সংস্থা এইচডিআই জার্লিংয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সাধারণ বিমা চালু করেছে ম্যাগমা ফিনকর্প। ম্যাগমা এইচডিআই জেনারেল ইনশিওরেন্সের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার সজ্জন কুমার কেডিয়ার কথায়, “জীবনবিমার মতো মূলধনের অত চাহিদা সাধারণ বিমায় নেই। তবে এখানেও বিদেশি লগ্নিকারীরা পুঁজি ঢালতে আগ্রহী। কিন্তু তাতে নতুন বিনিয়োগ কতটা আসবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বরং নয়া আইনের সুযোগ নিয়ে ভারতীয় অংশীদারদের কাছ থেকে শেয়ার কেনার প্রবণতা বিদেশি অংশীদারদের মধ্যে বাড়ার সম্ভবনা বেশি বলেই আমার মনে হয়। যাকে আমরা বলি, শেয়ারহোল্ডিং রিস্ট্রাকচারিং। এতে বিদেশি মুদ্রা আসবে ঠিকই, কিন্তু নতুন বিনিয়োগ আসবে না।”
ভারতে ২৪টি জীবনবিমা ও ২৮টি সাধারণ বিমা সংস্থা রয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ বেসরকারি সংস্থাতেই বিদেশি লগ্নি রয়েছে। বিল পাশ হলে, এদের ভাঁড়ারে নতুন লগ্নি কত আসবে, এখন সে দিকেই চোখ সকলের।