সময় মতো প্রিমিয়াম মেটাতে না-পারার জন্য বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা পলিসি গ্রাহককে ফের চালু করার সুযোগ দেবে জীবনবিমা নিগম (এলআইসি)। লক্ষ্য, ঝিমিয়ে পড়া ব্যবসায় প্রাণ ফেরানো। মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস বি মৈনাক। খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে তাঁরা বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন বলে কলকাতায় বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স আয়োজিত বিমা সংক্রান্ত এক আলোচনাসভা শেষে জানান মৈনাক।
গত অর্থবর্ষ (২০১৩-’১৪) থেকেই বিমা শিল্পে মন্দা দেখা দিয়েছে। ব্যবসা বৃদ্ধি ঠেকেছে তলানিতে। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা বাড়ানোর বিভিন্ন সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন জীবনবিমা নিগম কর্তৃপক্ষ। তেমনই একটি হল, মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়া পলিসি পুনরুজ্জীবিত করার ব্যবস্থা চালুর এই উদ্যোগ।
বিমা ব্যবসায় মন্দার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মৈনাক বলেন, “এখন সব শ্রেণির মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট সংখ্যক প্রকল্প বাজারে নেই। পাশাপাশি বিমা বিপণনের পরিকাঠামোও তেমন মজবুত নয়।”
গত বছরেই বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইআরডিএ বেশ কিছু নতুন নিয়ম চালু করেছে। তাদের নির্দেশ, পুরনো সমস্ত প্রকল্প গুটিয়ে নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্প বাজারে ছাড়তে হবে। মৈনাক বলেন, “জীবনবিমা নিগমের ৫৪টি প্রকল্প চালু ছিল। সব ক’টিই গুটিয়ে নিতে হয়েছে। নতুন নিয়মে আপতত গোটা দশেক প্রকল্প বাজারে ছাড়া সম্ভব হয়েছে। একই হাল বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলিরও।”
তবে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে বিমা ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে হলে বাজারে কম প্রিমিয়ামের প্রকল্প বেশি আনতে হবে বলে মনে করেন মৈনাক। পাশাপাশি প্রকল্প বিপণনে জোর দেওয়াও জরুরি।
এ দিনের সভায় ন্যাশনাল ইনশিওরেন্সের ভারপ্রাপ্ত সিএমডি এ ভি গিরিরাজ জানান, “বর্তমানে বিমা শিল্পে মূলধনের পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বিমা পরিষেবা বাড়াতে মূলধন বৃদ্ধি জরুরি।” এই প্রসঙ্গে মৈনাকের অভিমত, বিমা শিল্পে বিদেশি লগ্নি টানার প্রস্তাব দ্রুত কার্যকর করা দরকার। কারণ, বিপণন পরিকাঠামোর প্রসার ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে অতিরিক্ত মূলধন লাগবে।
সাধারণ বিমা শিল্প সম্প্রসারণে স্বাস্থ্যবিমা ও মোটরগাড়ি বিমাই প্রধান ভূমিকা নেবে এ নিয়ে এক সমীক্ষার উল্লেখ করে গিরিরাজ বলেন, ২০২০-র মধ্যেই স্বাস্থ্যবিমার বাজার ২ লক্ষ কোটি টাকায় দাঁড়াবে। বর্তমানে যা ৮০ হাজার কোটি। তবে এ জন্য হাসপাতাল, বিমা সংস্থা, বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও বিপণন কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন জরুরি বলে মন্তব্য তাঁর। গিরিরাজের কথায়, “বিমা শিল্পের সঙ্গে এরা সকলেই জড়িত। কিন্তু শিল্পের সমস্যার ক্ষেত্রে দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়ার প্রবণতা এদের সকলের মধ্যেই কমবেশি দেখা যায়।”