বিভিন্ন রাজ্য সরকারের চালু করা কৃষিঋণ মকুব প্রকল্প আদতে কতটা প্রয়োজনীয়, তা নিয়ে এ বার প্রশ্ন তুললেন রঘুরাম রাজন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের মতে, কৃষকদের সুবিধা করে দেওয়ার লক্ষ্যে আনা এই সব প্রকল্প কার্যত তাঁদের ঋণ পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তা ছাড়া অভিযোগ উঠেছে, অনেক সময়েই বেআইনি ভাবে প্রকল্পের সুযোগ এমন কিছু কৃষক নিচ্ছেন, যাঁদের তা প্রয়োজন নেই।
প্রসঙ্গত, এর আগে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের তরফেও এই ধরনের প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ব্যাঙ্কিং শিল্পমহলের একাংশের অভিযোগ, ‘জনমোহিনী চমক’ হিসেবে আনা এই সব প্রকল্প তাদের অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা বাড়াচ্ছে। যে-কারণে কৃষিঋণে রাশ টানতেও বাধ্য হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক। ফলে শেষ পর্যন্ত বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকই।
ইন্ডিয়ান ইকনমিক অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সভা উপলক্ষে সম্প্রতি এখানে আরবিআই গভর্নর একই সুরে বলেন, “বহু রাজ্যই দফায় দফায় কৃষিঋণ মকুব করেছে। কিন্তু সেগুলি কৃষকদের কতটা কাজে এসেছে? আমাদের সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, এ ধরনের প্রকল্প আদৌ কার্যকর হয়নি। বরং এক বার ঋণ মকুবের সুযোগ নিলে ভবিষ্যতে ওই কৃষকের নতুন করে ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।”
এ প্রসঙ্গে ঋণের দায়ে জর্জরিত কৃষকদের আত্মহত্যা নিয়েও উদ্বেগ জানান রাজন। তিনি বলেছেন, এই গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে আরও সমীক্ষার প্রয়োজন। রাজন যে-সব দিক খতিয়ে দেখার কথা বলেন, তার মধ্যে রয়েছে:
• কৃষিঋণ মকুব যেহেতু তেমন কার্যকর নয়, সে ক্ষেত্রে কৃষকদের বোঝা কমাতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত
• ঋণের বোঝা কৃষকদের আত্মহত্যার জন্য কতটা দায়ী
• এই বোঝার কতটা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা থেকে নেওয়া ঋণ, কতটাই বা মহাজনের থেকে
গত বছর ঘূর্ণীঝড়ের কবলে পড়া কৃষকদের জন্য অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলঙ্গানায় আনা ঋণ মকুব প্রকল্পের উল্লেখ করে রাজন জানান, ঋণের টাকা ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্ককে ফিরিয়ে দিয়েছে তেলঙ্গানা রাজ্য সরকার। কিন্তু এখনও সে পথে হাঁটেনি অন্ধ্র প্রদেশ। দুই রাজ্য মিলিয়ে ব্যাঙ্ক- গুলির কৃষিঋণ ১.৩ লক্ষ কোটি টাকা।
বস্তুত, সিএজি তার রিপোর্টে এমন বেশ কিছু নজির তুলে ধরেছে, যেখানে ঋণের ভারে জর্জরিত কৃষক তাঁর বোঝা লাঘব করার সুযোগ পাননি। অন্য দিকে যাঁর তা প্রয়োজন নেই, তিনি প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। ফলে এ ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আঁচ করছে সিএজি। আর, এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজন। তিনি বলেছেন, কৃষক স্বার্থে আনা এই সব প্রকল্প আসলে ক্ষতি করছে কৃষিরই।