লাইনে দাঁড়িয়ে সিনেমার টিকিট কাটার দিন কবেই ফুরিয়েছে। ট্রেন বা প্লেনের টিকিট, বই, সিডি, মোবাইল-সহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিন গ্যাজেটও নেট বাজারের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। আর এ বার সেই তালিকায় ঢুকে পড়ছে বাড়িও।
শ’দুয়েক টাকার বই বা জামাকাপড় কেনা দিয়ে শুরু হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ধাপে ধাপে আস্থার সঙ্গে বেড়েছে কেনাকাটার অঙ্কও। হাজার পাঁচ-দশের জিনিস কিনতে এখন আর পিছপা হচ্ছেন না নেট দুনিয়ার ক্রেতারা। কিন্তু বাড়ির মতো দামি জিনিস সরাসরি কিনতে এই বাজারের ব্যবহার এত দিন সীমিতই ছিল। আবাসন শিল্পমহলের মতে, সাধারণত ক্রেতারা বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার আগে প্রাথমিক খোঁজখবর নিতে নেট ব্যবহার করতেন। গুগলের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, গত চার বছরে ৪৩০০ কোটি ডলারের লেনদেনকে প্রভাবিত করেছে নেটের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য।
তবে এ বার আর শুধুমাত্র খোঁজ-খবর করা নয়। বাড়ি কেনার প্রাথমিক পর্বও অনেকে সেরে ফেলছেন নেটে। বিশেষজ্ঞ সংস্থা কুশম্যান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ডস-এর পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা অভিজিৎ দাসের মতে, ইন্টারনেট কেনার প্রবণতা ক্রমশ বাড়বে। তিনি বলেন, “নেট বাজার থেকে কেনাকাটায় মানুষ যত স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠবেন, তত বাড়বে বাড়ির মতো দামি জিনিস কিনতে অনলাইন-এর ব্যবহার। সদ্য ঘোষিত প্রকল্পের ক্ষেত্রে ফাঁকা জমি দেখে বিশেষ কিছু বোঝা যায় না। সে ক্ষেত্রে ব্রোশিওর দেখে কেনা ও অনলাইনে কেনার মধ্যে ফারাক তেমন নেই বললেই চলে।”
তথ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী ছোট-বড় শহরের মধ্যে সুয়োরানি-দুয়োরানি মার্কা বিভেদ ঘুচিয়ে দিচ্ছে অনলাইন কেনাকাটা বা ই-কমার্সের সুযোগ। প্রায় ৫০% ব্যবসা দিচ্ছে ছোট ও মাঝারি শহর। এমনকী কোনও কোনও ক্ষেত্রে মেট্রো শহরকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে তারা। একই প্রবণতা অনলাইনে বাড়ি কেনার ক্ষেত্রেও। দ্বিতীয় স্তরের শহর থেকে ক্রেতার সংখ্যা এক লাফে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ২০১৩ সালে ১১% থেকে এখন তা ছুঁয়েছে ৩০ শতাংশ।
অবশ্য ছোট-বড় শহরের বিভেদ নয়, ধীরে ধীরে দেশ-বিদেশের সীমানাও মুছে দিচ্ছে অনলাইনে বাড়ি কেনার সুযোগ। নেট বাজারে বাড়ি কেনার দলে ২৫% অনাবাসী। আত্মীয়-বন্ধুদের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে তাঁরা এ বার অনলাইনে বাড়ি কিনতে ঝাঁপাচ্ছেন।
রিয়েল এস্টেট অনলাইন সংস্থা মকান ডট কম-এর কর্তা আদিত্য বর্মার মতে, ভিন্ দেশে থেকেও নিজের দেশে বাড়ি কেনার জন্য অনলাইনের ব্যবহার ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। অন্তত প্রাথমিক পর্ব অনলাইনেই সেরে ফেলছেন তাঁরা। বাড়ি বুকিং করে নিচ্ছেন বিদেশে বসেই। তারপরে ছুটি কাটাতে যখন দেশে আসছেন, তখন পরবর্তী পর্যায়ের কাজ সেরে নিচ্ছেন।
আর এই নতুন বাজার তৈরি করছে সংগঠিত ক্ষেত্রের বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থা। যেমন টাটা হাউসিং-এর শাখা সংস্থা টাটা ভ্যালু হোমস। বিপণনের তুরুপের তাস হিসেবে তারা বেছেছে অনলাইন মাধ্যমকেই। টাটা হাউসিং-এর প্রধান ব্রতীন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নতুন বাজার তৈরি করছে অনলাইনের সুবিধা। যথেষ্ট তথ্য দেওয়ার ফলে এখানে বাড়ি কেনার ব্যাপারে আরও স্বচ্ছতা এসেছে।”
এই বাজারের উত্থানের পেছনে অবশ্য রয়েছেন নতুন প্রজন্মের ক্রেতারা। সংশ্লিষ্ট মহলের সমীক্ষা বলছে এঁদের গড় বয়স এখন ২৯-৪২ বছর। গত বছরেও যা ছিল ৩১-৪৫। ফলে নেট ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে।
ইন্ডিয়া প্লাজা, ফ্লিপকার্ট, জাবং, ই-বে থেকে শুরু করে মিন্ট্রা, সি বাজার, সব সংস্থারই মত, নেটের দৌলতে নিত্যনতুন বাজার তৈরি হচ্ছে। একটি তথ্য থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। ২০০১ সালে ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন ৩০ লক্ষ মানুষ। এখন তা কোটি ছুঁয়েছে।