বিশ্ব বাজারে কমতে থাকা অশোধিত তেলের দাম, চিনের অর্থনীতি নিয়ে দুশ্চিন্তা, ভারতেও এ যাত্রায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ না-কমানো— এই ত্র্যহস্পর্শে অব্যাহত শেয়ার বাজারের পতন। বুধবার সেনসেক্স পড়েছে আরও ৩১৫.৬৮ পয়েন্ট। এই নিয়ে টানা তিন দিন ধরে নামতে থাকা সূচকের পারদ প্রভাব ফেলেছে টাকার দরেও। এ দিন ফের ৬৮ টাকা ছাড়িয়েছে ডলারের দাম। টাকা ৯ পয়সা পড়ায় বিদেশি মুদ্রার বাজার বন্ধের সময়ে প্রতি ডলারের দর দাঁড়ায় ৬৮.০৭ টাকা।
এ দিন সূচক থিতু হয় ২৪,২২৩.৩২ অঙ্কে। আগের দিন অর্থাৎ গত মঙ্গলবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ না-কমানোর সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই হতাশ লগ্নিকারীরা মুনাফার টাকা তুলে নিতে শেয়ার বিক্রি করতে থাকেন। এর জেরেই ২৮৬ পয়েন্ট পতন হয় সূচকের। বুধবার তা পড়ল আরও ৩১৫ পয়েন্ট। ফলে মাত্র দু’দিনেই সূচক পড়ল ৬০১।
এ দিনও স্বাভাবিক ভাবেই শেয়ার বিক্রির মুখ্য ভূমিকায় ছিল বিদেশি লগ্নি সংস্থা, যে-কারণে পড়তে থাকে টাকাও।
একই ভাবে পড়েছে নিফ্টি। নেমে এসেছে ৭৪০০ অঙ্কের নীচে। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের ওই সূচক এ দিন ৯৩.৭৫ পয়েন্ট পড়ে বাজার বন্ধের সময়ে দাঁড়ায় ৭৩৬১.৮০ পয়েন্টে। বাজার বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল, ৭৪০০-র নীচে এখনই নিফ্টি নামবে না। কিন্তু এ দিনের পতন তাঁদের সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত করল।
বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম ফের পড়ায় দুনিয়া জুড়ে আর্থিক ক্ষেত্রে সমস্যা আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তেল রফতানিকারী দেশগুলির জোট ওপেক উৎপাদন কমাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে এ দিন এশীয় বাজারে তেল ফের নেমে যায় ব্যারেলে ৩০ ডলারের নীচে। তেলের দাম কমার ফলে বিশেষ ভাবে আতঙ্কিত বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি।
এ দিন তাদের শেয়ার বিক্রির পথে হেঁটে ভারতীয় লগ্নি সংস্থাগুলিও শেয়ার বিক্রি করতে থাকেন। এ দিন বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতের বাজারে ৩৫৭ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। পাশাপাশি ভারতীয় আর্থিক সংস্থাগুলিও বিক্রি করেছে ১৪৪ কোটি টাকার শেয়ার। সম্প্রতি বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি শেয়ার বিক্রি করলেও ভারতীয় আর্থিক সংস্থা শেয়ার কিনছিল, যা সূচকের পতনের বহর কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা পালন করছিল। কিন্ত এখন দেখা যাচ্ছে যে, ভারতীয় সংস্থাগুলিও শেয়ার বিক্রি করতে নেমে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শেয়ার বাজার তাকিয়ে আছে কেন্দ্রের দিকে। স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ বলেন, ‘‘লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরাতে অবিলম্বে সরকারের কিছু পদক্ষেপ করা জরুরি। অনেকেই মনে করছেন, বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কিছু ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু তা কতটা কার্যকরী হবে, সেটা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে লগ্নিকারীদের মনে, যার জেরে পড়ছে বাজার।’’