৬২,০৫২.৫৭ অঙ্কের উচ্চতা ছিল ৫২ সপ্তাহে সর্বোচ্চ। এ দিন নিফ্টি উঠেছে ১৮,৪০৯.৬৫-তে। প্রতীকী ছবি।
বিশ্ব অর্থনীতি এখনও অস্থির। ব্রিটেনে ৪১ বছরের চূড়োয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। মন্দার আশঙ্কা বাড়ছে। চড়া দাম এবং সুদের ধাক্কায় মন্দার খাদে ঝুলে ইউরোপীয় অঞ্চলও। আমেরিকায় দামের চাপ সামান্য কমলেও, সুদ বৃদ্ধি থমকানোর আশা নেই। তার মধ্যেই ফের উচ্চতার নতুন শিখরে পা রাখল ভারতের শেয়ার বাজার। সেনসেক্স এই প্রথম দিনের শেষে পৌঁছে গেল ৬২ হাজারের মুখে। বুধবার তা সামান্য (১০৭.৭৩ পয়েন্ট) উঠলেও, থিতু হয়েছে ৬১,৯৮০.৭২ অঙ্কে। যা নজিরবিহীন। দিনের মাঝে তা ৬২ হাজার পেরিয়ে গিয়েছিল। ৬২,০৫২.৫৭ অঙ্কের সেই উচ্চতা ছিল ৫২ সপ্তাহে সর্বোচ্চ। এ দিন নিফ্টি উঠেছে ১৮,৪০৯.৬৫-তে।
বাজারের এমন দৌড়েই আশঙ্কার মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের মতে, আপাতদৃষ্টিতে এই উত্থান লগ্নিকারীদের পক্ষে স্বস্তির। বিশেষত যেহেতু অক্টোবরে দেশে মূল্যবৃদ্ধির হার মাথা নামিয়েছে। বৃদ্ধিতে ফিরেছে শিল্পোৎপাদনও। কিন্তু সূচকের এতটা চাঙ্গা হওয়ার জন্য নিশ্চয়তার যে পরিবেশ দরকার, তা এখনও তৈরি হয়নি। এটাই অস্বস্তি তৈরি করছে।
তাঁদের দাবি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না থামায় ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বহাল। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কাও জাঁকিয়ে বসে। ফলে পণ্যের জোগান ও চাহিদা, দু’টোই ক্ষতিগ্রস্ত। এর আঁচ থেকে ভারতের গা বাঁচানো মুশকিল। ইতিমধ্যেই প্রায় ১৭% কমেছে দেশের রফতানি বাণিজ্য। অথচ সব প্রতিকূলতা উড়িয়ে দেশের শেয়ার বাজার হাঁটছে কার্যত উল্টো পথে। বহু শেয়ারের দাম আচমকাই বিপুল বেড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ লগ্নিকারীদের সতর্ক ভাবে লগ্নি করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। বলছেন, চারপাশের পরিস্থিতির নিরিখে সূচক একটু বেশিই উঁচুতে।
বাজার মহলের মতে, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির ভারতে ফের শেয়ার কিনতে শুরু করা সূচকের উত্থানের বড় কারণ। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, আগামী দিনে আমেরিকা ফের সুদ বাড়ালে তারা আবার শেয়ার বেচে বেরিয়ে যাবে কি? তা হলে ধস নামার আশঙ্কা থাকবে বলে মনে করছে তারা।
বুধবার ডলারের নিরিখে টাকার দাম অবশ্য কমেছে। ডলার ফের ৮১ টাকা পেরিয়েছে। ৩৫ পয়সা বেড়ে দিনের শেষে হয়েছে ৮১.২৬ টাকা। মঙ্গলবার আমেরিকার মুদ্রাটির দাম ৩৭ পয়সা কমেছিল।
বাজার বিশেষজ্ঞ তথা জিয়োজিৎ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের গবেষণা শাখার প্রধান বিনোদ নায়ারের ব্যাখ্যা, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার নিরিখে ভারতীয় বাজারের গতিপথ এখনও পর্যন্ত আলাদা। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের অনুকূলে থাকা এবং বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির পুঁজি আবারও ভারতে ফেরা এর অন্যতম কারণ। তবে বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েও এতটা উঁচুতে উঠে যাওয়ায় স্বল্প ও মাঝারি মেয়াদে এ দেশের বাজার কিছুটা সতর্ক থাকতে পারে।
সূত্রের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে সাধারণ লগ্নিকারীরা বড় পতনের মুখে পড়তে পারেন। তাই সব দিকে দেখে এগোতে হবে। তা ছাড়া, এত উঁচু বাজারে যে কোনও মুহূর্তে সংশোধন আসতে পারে বলেও সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞেরা।