উদ্বেগের পারদ ক্রমশ চড়ছে।
সরকার যতই ‘কিছু হয়নি’ ভাব দেখাক, সম্প্রতি খোদ মোদী সরকারের পরিসংখ্যান মন্ত্রক জানিয়েছিল, চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে আটকে থাকবে। এ বার বিশ্বব্যাঙ্কও ফের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬% থেকে ৫ শতাংশে নামাল। এর আগে ডিসেম্বরের ঋণনীতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ওই ৫ শতাংশের পূর্বাভাসই শুনিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সত্যিই এই ৫ শতাংশের ‘গর্তে’ পা ঢুকলে, ২০০৮ সালে বিশ্ব জোড়া আর্থিক মন্দার পরে ১১ বছরের তলানিতে পিছলে যাবে দেশের বৃদ্ধির হার। বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার টুইট-তোপ, যে অর্থনীতির উন্নতিতে বিজেপি সরকারের বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা, সেটিই এই মুহূর্তে হিমঘরে ঢুকেছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কিন্তু মোদী সরকার মানুষকে আশ্বস্ত করার মতো কোনও পদক্ষেপ করছে না।
এ দিনই মার্কিন অর্থনীতিবিদ নুরিয়েল রুবিনির মন্তব্য, ‘‘ভারত সরকার ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতির তুলনায় মতাদর্শগত বিষয়গুলিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে অর্থনীতি শ্লথ হলে জনপ্রিয়তা হারাতে হতে পারে।’’
উদ্বেগ বাড়ছেই
৫% বৃদ্ধি ১১ বছরে সবচেয়ে কম। বিশ্বব্যাঙ্কের দাবি, বৃদ্ধির গতি শ্লথ যথেষ্ট ঋণের অভাবে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড কমায় এবং চাহিদা-কেনাকাটা ঝিমিয়ে পড়ায়। সরকারের পরিসংখ্যান মন্ত্রকের ইঙ্গিত ছিল, কারখানার উৎপাদন, লগ্নি বা নির্মাণ যন্ত্রাংশে পুঁজির ক্ষেত্রেও ছবিটা বেশ খারাপ। রয়টার্সের সমীক্ষায় ইঙ্গিত, আনাজের চড়া দামের জেরে ডিসেম্বরে খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি পাঁচ বছরের সর্বোচ্চ হতে পারে। তখন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের
বিশ্বব্যাঙ্ক তাদের গ্লোবাল ইকনমিক প্রসপেক্টাসে জানিয়েছে, কেনাকাটা থমকে যাওয়ায় বৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়েছে ঠিকই। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিয়ে যেতে যে পুঁজি দরকার, তাতে ভয়ানক রকম টান পড়াও দায়ী। আবার ঋণও যথেষ্ট মিলছে না। ফলে ধাক্কা খাচ্ছে চাহিদা।
বার্তা
‘‘বিজেপি সরকারের সব থেকে বেশি নজর দেওয়া উচিত অর্থনীতিতে। অথচ অর্থনীতির উন্নতিই হিমঘরে ঢুকেছে। বেশি ভুগছেন ব্যবসায়ী, গরীব ও দিন মজুর।’’
প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা (কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক)
‘‘ভারত সরকার কাহিল অর্থনীতির তুলনায় মতাদর্শগত বিষয়ে জোর দিচ্ছে।’’
নুরিয়েল রুবিনি (মার্কিন অর্থনীতিবিদ)
এ দিনই সিডবি জানিয়েছে, গত এক বছরে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ঋণ বৃদ্ধির হার হয়েছে ৮.১%, যা গত কয়েক বছরে সবচেয়ে কম। ঋণের ঘাটতির জন্য বিশ্বব্যাঙ্ক আঙুল তুলেছে এনবিএফসিগুলির আর্থিক দুর্বলতার দিকে। অর্থনীতির কাহিল হওয়ার জন্য দায়ী করেছে কৃষিক্ষেত্রের মন্থর উৎপাদনকেও। তবে একই সঙ্গে শুনিয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়া, ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা ও আর্থিক ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে উপযুক্ত সংস্কারের অভাবের খেসারতও গুনতে হচ্ছে ভারতের মতো দেশগুলিকে।