Financial Fear

নতুন বছরে আশার সঙ্গে ওত পেতে বসে আশঙ্কাও

যদিও আশার কথা, নভেম্বরে দেশের ব্যাঙ্কগুলিতে ঋণের চাহিদা বেড়েছে ১৮%। অনুৎপাদক সম্পদ নেমেছে অনেকটা। ভাল মুনাফার সুবাদে চাঙ্গা হচ্ছে বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্তব্যাঙ্ক।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:০২
Share:

ভেম্বরে দেশের ব্যাঙ্কগুলিতে ঋণের চাহিদা বেড়েছে ১৮%। প্রতীকী ছবি।

নানা উত্থান-পতনে শেষ হল ২০২২। যে বছর করোনাজনিত ক্ষত অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে ভারতীয় অর্থনীতি। সামলেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে তৈরি হওয়া সঙ্কটও। বিভিন্ন শিল্প ফিরতে শুরু করেছে কোভিড আসার আগের অবস্থায়। আর এই সব কিছু ঘটেছে দেশে-বিদেশে শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলি টানা সুদ বাড়ানো সত্ত্বেও। তবে আশঙ্কা মুছে যায়নি। বেকারত্ব এখনও চড়া। দুর্বল টাকা। মার খাচ্ছে রফতানি। বাড়ছে ঘাটতি। দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের চাহিদা শ্লথ। সরকারের ঘাড়ে ঋণ এবং সুদের ভারী বোঝা। সুদের চড়া হারে ঋণের খরচ বাড়ায় লগ্নিও সে ভাবে বাড়ছে না দেশে। তার উপরে চিন-সহ বিভিন্ন দেশে ফের কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধি উস্কে দিয়েছে পণ্যের জোগান এবং মূল্যবৃদ্ধির দুশ্চিন্তা।

Advertisement

যদিও আশার কথা, নভেম্বরে দেশের ব্যাঙ্কগুলিতে ঋণের চাহিদা বেড়েছে ১৮%। অনুৎপাদক সম্পদ নেমেছে অনেকটা। ভাল মুনাফার সুবাদে চাঙ্গা হচ্ছে বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্তব্যাঙ্ক। বাড়ছে বাড়ি-গাড়ির বিক্রি। এই দুই শিল্পের উপরে নির্ভর করে আরও অনেক ক্ষেত্র। অক্টোবর-ডিসেম্বরে বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক ফল মোটের উপর ভাল হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিশ্ব জোড়া অস্থির আবহে খারাপ করেনি বাজারও। ২০২২-এ সেনসেক্স ও নিফ্‌টি বেড়েছে যথাক্রমে ৪.৪৪% এবং ৪.৩২%। বেশিরভাগ দেশের তুলনায় যা ভাল। সেনসেক্স ১ ডিসেম্বর উঠেছিল রেকর্ড উচ্চতায় (৬৩,২৮৪)। নজির গড়েছে নিফ্‌টিও (১৮,৮১২)।

Advertisement

পশ্চিমী দুনিয়ায় মন্দা ভাব দেখা দেওয়ায় রফতানি অবশ্য মার খেয়েছে। বছরে ১১.৩% বেড়ে এক ডলার পৌঁছেছে ৮২.৭২ টাকায়। ফলে বেড়েছে বাণিজ্য এবং চলতি খাতে ঘাটতি। যদিও অশোধিত তেলের দাম কমায় আমদানির খরচে কিছুটা সুবিধা পেয়েছে ভারত। নভেম্বরে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উৎপাদনও বেড়েছে ৫.৪%।

ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য আর্থিক সংস্থায় আমানতে সুদ বাড়ায় খুশি সুদ নির্ভর সাধারণ মানুষ, বিশেষত প্রবীণরা। নতুন বছরে কয়েকটি স্বল্প সঞ্চয়েও সুদের হার বেড়েছে। প্রবীণদের সঞ্চয় প্রকল্পে তা হয়েছে ৮%, যা মূল্যবৃদ্ধির হারের তুলনায় বেশি। জাতীয় সঞ্চয়পত্রে (এনএসসি) সুদ বেড়ে ৭% হওয়ায়, সরকারি ফ্লোটিং রেট বন্ডের সুদ বাড়িয়ে ৭.৩৫% করা হবে বলে আশা। সুদ অনেকখানি বেড়েছে ঋণেও। গত বছর আরবিআই ২২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে রেপো রেট (যে সুদে তারা ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়)। ফলে বাড়ি-গাড়ি ঋণের ইএমআই-র বোঝা বেড়েছে মধ্যবিত্তের।

এখন প্রশ্ন হল, কেমন যাবে নতুন বছর? অনেকেই আশাবাদী দেশের আর্থিক উন্নতি নিয়ে। তাঁদের অনুমান, শেয়ার বাজার চঞ্চল থাকলেও তা আরও উঠবে। বিশ্ব বাজারের সমর্থন পেলে সেনসেক্স ৭০,০০০ ছুঁতে পারে। তবে সেই পথে কাঁটা হতে পারে—

ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। তাইওয়ানের প্রতি চিনের চোখরাঙানির দিকেও নজর রাখছে বাজার। এই দুই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়লে নামতে পারে সূচক।

আমেরিকা এবং ইউরোপে চড়া মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে নাগাড়ে সুদ বৃদ্ধি। এর ফলে পশ্চিমী দুনিয়ায় মন্দা এলে ভারতও গা বাঁচাতে পারবে না। ধাক্কা খেতে পারে রফতানি। কাজ হারাতে পারেন বহু মানুষ।

ব্যাঙ্ক, ডাকঘর এবং অন্যান্য আমানতে সুদ বাড়ায় আকর্ষণীয় হয়েছে সেগুলি। এতে শেয়ার এবং ফান্ড থেকে সরতে পারেন কিছু মানুষ।

দেশে মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা কমলেও স্বস্তি দেওয়ার জায়গায় নামেনি। আরবিআই-ও আগামী দিনে সুদের হার বৃদ্ধির প্রক্রিয়া বহাল রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে। ২০২২-এ মোট ২২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়িয়েছে তারা। আরও বাড়লে শিল্প এবং আমজনতাকে তার চাপ সইতে হবে।

সুদ বাড়ায় বন্ডে ইল্ড বাড়ছে। ফলে বাড়ছে সরকারের সুদ বাবদ খরচ। গত সেপ্টেম্বরের শেষে তাদের মোট দেনা ১৪৭ লক্ষ কোটি টাকা। জুনে ছিল প্রায় ১৪৬ লক্ষ কোটি। এই সময়ে গড়ে ইল্ড ৭.২৩% থেকে বেড়ে হয়েছে ৭.৩৩%।

করোনার চোখরাঙানি। তা ফের ছড়ালেঅনেক অঙ্কই ভুল প্রমাণিত হতে পারে। চুপসে যেতে পারে শেয়ার বাজার। অর্থাৎ আশার পাশাপাশি আশঙ্কাও কম থাকবে না নতুন বছরে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement