—প্রতীকী চিত্র।
সাম্প্রতিক ঋণনীতিতে ব্যাঙ্কের ঋণ এবং আমানত বৃদ্ধির মধ্যে বাড়তে থাকা ফারাকের সমস্যায় নজর দিয়েছেন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। সেই ফাঁক কমানোর কৌশলও বার করতে বলেছেন। তার পরেই উঠেছে প্রশ্ন, তা হলে কি আমানত বাড়াতে ইঙ্গিতে গ্রাহকের জমা টাকায় সুদের হার বাড়াতে বললেন আরবিআই কর্ণধার? যদি তা না-ও বলে থাকেন, তবু ব্যাঙ্কগুলি কি আমানত বাড়ানোর অন্যতম কৌশল হিসেবে সুদ বৃদ্ধির পথে হাঁটবে?
শিল্প, ঋণগ্রহীতা-সহ বিভিন্ন মহল যখন সুদ কমানোর দাবি করছে, তখন প্রমাদ গুনছেন প্রবীণ নাগরিক-সহ সুদ নির্ভর অসংখ্য মানুষ। কারণ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে স্বল্প মেয়াদে ধার দেয় তারা) কমালে ব্যাঙ্কগুলি ঋণের পাশাপাশি তাঁদের ওই জমা টাকাতেও সুদ ছাঁটবে। এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, ঋণ এবং আমানত বৃদ্ধির মধ্যে সাযুজ্য আনতে তারা সুদ বাড়াতে পারে বটে। তবে তা ঢালাও ভাবে হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং নগদের জোগান বাড়ানোর জন্য খুচরো আমানত সংগ্রহের স্বল্প মেয়াদি নতুন প্রকল্প আনা হতে পারে।
আর্থিক কর্মকাণ্ডে গতি আসায় ব্যাঙ্কে ঋণের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু আমানত না বাড়ালে যে সেই চাহিদা মেটানো কঠিন। কারণ, ব্যাঙ্কের হাতে নগদ কম পড়বে। পরিসংখ্যানেই প্রকাশ, গত অর্থবর্ষে দেশে ঋণের চাহিদা বেড়েছে ১৬.৫% আর আমানত বৃদ্ধির হার ১২.৫%। তার উপর লগ্নির মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয়তা বেড়েছে শেয়ার, ফান্ড, সোনা ইত্যাদির। সুদের তুলনায় সেগুলির আয় অনেক ক্ষেত্রে বেশি। তার ফলেও আকর্ষণ হারাচ্ছে ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানত।
ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলছেন, “ব্যাঙ্কে আমানত বাড়ানোর প্রধান উপায় সুদ বাড়িয়ে গ্রাহক টানা। সে জন্য বেশি সুদ দিয়ে স্বল্প মেয়াদের কিছু খুচরো প্রকল্প চালু করতে পারে তারা। যা ইতিমধ্যেই করেছে কিছু ব্যাঙ্ক।’’ ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি দেবব্রত সরকারেরও অভিমত, ‘‘আমানত বাড়িয়েই ঋণের চাহিদা মেটানোর টাকা তুলতে হবে তাদের। সে জন্য সব প্রকল্পে সুদ বাড়াতে গেলে ব্যাঙ্কের আমানত সংগ্রহের খরচ বেড়ে যাবে। যা মুনাফা কমাবে। তাই হয়তো বেশি সুদের স্বল্প মেয়াদি স্থায়ী জমা প্রকল্প আসছে।’’
তবে এখনই আমানত বৃদ্ধিতে জোর দেওয়ার দরকার হবে না, দাবি বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা-এমডি চন্দ্রশেখর ঘোষের। তিনি বলেন, “সাধারণত অর্থবর্ষের প্রথম দু’টি ত্রৈমাসিকে ঋণের চাহিদা কম থাকে। তৃতীয় ত্রৈমাসিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) থেকে বাড়ে। তখন নগদ জোগাড়ে আমানত বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ব্যাঙ্ক সুদ বাড়াতে পারে।’’ যদিও তাঁর মতে, সব ব্যাঙ্ক ওই পথে না-ও হাঁটতে পারে। আমানত কতটা বাড়াতে হবে, তা নির্ভর করবে সেই ব্যাঙ্কে ঋণের চাহিদার উপর।
ব্যাঙ্কে নগদের ঘাটতি সামলানোর অন্য পথ ঋণের চাহিদায় রাশ। সম্প্রতি কিছু (ব্যক্তিগত, ক্রেডিট কার্ড মারফত ইত্যাদি) বন্ধকহীন খুচরো ঋণে লাগাম পরাতে পদক্ষেপ করেওছে আরবিআই। তবে আইসিএআই-এর পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনির্বাণ দত্তের মতে, ‘‘দেশে চাহিদা বাড়াতে ওই সব ঋণের বড় ভূমিকা আছে। ফলে সেগুলি কমানো হলে ধাক্কা খেতে পারে অর্থনীতি। যদিও বিভিন্ন ব্যাঙ্কে আমানতে সুদের হার বৃদ্ধি নিয়েও সংশয় রয়েছে আমার। কারণ, আর কয়েক মাসের মধ্যেই রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমাতে পারে।’’