অমিত মিত্র। —ফাইল চিত্র।
বিশাল অঙ্কের অনাদায়ি ঋণ হিসাবের খাতা থেকে মুছে দেওয়ার প্রবণতাই এখন দেশের ব্যাঙ্কিং শিল্পের সব থেকে বড় সমস্যা বলে দাবি রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এবং বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান মুখ্য উপদেষ্টা অমিত মিত্রের। বৃহস্পতিবার বণিকসভা সিআইআই আয়োজিত ব্যাঙ্ক শিল্প নিয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, এত অনুৎপাদক সম্পদ উদ্ধার হওয়ার বদলে উধাও হওয়ায় ব্যাঙ্কের লোকসান হচ্ছে। তবে তার বোঝা আখেরে বইতে হচ্ছে সাধারণ আমানতকারীদেরই। অমিতবাবুর প্রশ্ন, এই ঘটনার জন্য দায়ী কে? এর পিছনে কি ঋণ দেওয়ার ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতি রয়েছে, নাকি অনাদায়ি হওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও ওই ঋণ দেওয়ার জন্য কোনও পক্ষ থেকে ব্যাঙ্কের উপরে চাপ দেওয়া হয়েছিল?
এ দিন কেন্দ্রেরই তথ্য উল্লেখ করে অমিতবাবু জানান, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ন’বছরে দেশের ব্যাঙ্কিং শিল্পে মোট ১৪.৫৬ লক্ষ কোটি টাকার অনাদায়ি ঋণ হিসাবের খাতা থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি (৭.৪০ লক্ষ টাকা) বড় শিল্প এবং পরিষেবা সংস্থার। হালে প্রতি বছরই ক্রমাগত বেড়েছে মুছে ফেলা অনাদায়ি ঋণের অঙ্ক। গত ২০২১-২২ সালে তা ছিল ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা। পরের বছর বেড়ে দাঁড়ায় ২.০৯ লক্ষ কোটি। অথচ এই সরকার ক্ষমতায় আসার আগের ন’বছরে হিসাবের খাতা থেকে মুছে ফেলা ঋণের পরিমাণ ছিল সাকুল্যে ২.২০ লক্ষ কোটি টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী, হিসাবের খাতা থেকে কোনও অনাদায়ি ঋণ মুছে দেওয়ার পরেও তা আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যায় ব্যাঙ্ক। অমিত জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রেও ছবিটা অত্যন্ত মলিন। ওই ১৪.৫৬ লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে উদ্ধার হয়েছে মাত্র ২.০৪ লক্ষ কোটি। দ্রুত বেড়েছে ইচ্ছাকৃত ভাবে ধার শোধ না করার অঙ্কও। তাঁর দাবি, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত ভাবে খেলাপ করা মোট ঋণের অঙ্ক ছিল ৩.৪৬ লক্ষ কোটি টাকা। আর গত মার্চের শেষে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকার প্রথম ৫০ জনের অনাদায়ি ঋণই দাঁড়ায় ৮৭,২৯৫ কোটি টাকা।
গ্রাহকের বায়োমেট্রিক তথ্য চুরির প্রসঙ্গ তুলেও কেন্দ্রকে বিঁধেছেন অমিত। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এর ফলে ব্যাঙ্কের বহু সাধারণ গ্রাহক প্রতারিত হচ্ছেন। অ্যকাউন্ট থেকে টাকা যাচ্ছে জালিয়াতদের কাছে।
তবে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বেশ উজ্জ্বল বলে মন্তব্য রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর। দাবি করেছেন, রাজ্য ভিত্তিক ব্যাঙ্কিং কমিটির (এসএলবিসি) মাধ্যমে ব্যাঙ্কগুলিকে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে (এমএসএমই) ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণ বাড়াতে বলেছিলেন তিনি। ব্যাঙ্কগুলি তাঁর কথা রাখায় বিপুল কাজ তৈরির সুযোগ হয়েছে। রাজ্যে গত অর্থবর্ষে তারা মোট ঋণ দিয়েছে ৪.৬৮ লক্ষ কোটি টাকার। এর মধ্যে এমএসএমইগুলি পেয়েছে ১.২৮ লক্ষ কোটি। তার হাত ধরে ছোট শিল্পে প্রায় ৪৪ লক্ষ কর্মসংস্থানের পথ খুলেছে। অমিতবাবু বলেন, প্রতি ১ কোটি টাকা লগ্নি হলে এমএসএমইতে কর্মসংস্থান হয় ৩৭ জনের। দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৯৩ শতাংশই এই শিল্পের আওতায়।