—প্রতীকী চিত্র।
কোনও পরিবারের আর্থিক অবস্থা কেমন? পরিবারের সদস্যেরা মাসে কেমন খরচ করছেন, সেটা দেখে এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়। যে পরিবারের আর্থিক অবস্থা যত ভাল, তার সদস্যেরা প্রতি মাসে খরচ করেন তত বেশি। আর এই মাথা পিছু খরচের নিরিখেই পশ্চিমবঙ্গ এখন দেশের শেষ বেঞ্চে বসে থাকা রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে। তা সে শহরে হোক বা গ্রামে।
পরিসংখ্যান মন্ত্রক সম্প্রতি ২০২২-২৩ সালের ‘পারিবারিক কেনাকাটার খরচ সমীক্ষা’-র প্রাথমিক কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে। সেই হিসাব অনুযায়ী, দেশের গ্রামাঞ্চলে গড়ে মাথা পিছু মাসিক খরচের পরিমাণ মাত্র ৩৭৭৩ টাকা। শহরাঞ্চলে ৬৪৫৯ টাকা। আর পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তা গ্রামাঞ্চলে মাসে ৩২৩৯ টাকা, শহরে ৫২৬৭ টাকা। অর্থাৎ গ্রাম হোক বা শহর, এ রাজ্যের বাসিন্দাদের মাথা পিছু খরচ জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেক কম।
মাথা পিছু মাসিক খরচের নিরিখে জাতীয় গড়ের তুলনায় যে সমস্ত রাজ্য পিছিয়ে রয়েছে, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম। এ রাজ্যের সঙ্গে এই তালিকায় রয়েছে অসম, বিহার, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা ও মেঘালয়। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে মাথা পিছু খরচের নিরিখে বিহারের অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের থেকে ভাল। বঙ্গের শহরাঞ্চলের মানুষের ক্ষেত্রে ওই খরচ বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশার তুলনায় ভাল। তবে উত্তর-পূর্বের রাজ্য অসমের গ্রাম হোক বা শহর, মানুষের মাথা পিছু খরচ পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, আয়ের ভিত্তিতে নয়। মাথা পিছু খরচের ভিত্তিতেই দারিদ্র থেকে আর্থিক অবস্থার পরিমাপ করা যায়। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের এই সমীক্ষা তাই জাতীয় গড়ের তুলনায় পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলির জন্য চিন্তার। এই খরচের হিসেবে সব থেকে এগিয়ে রয়েছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চণ্ডীগড়। তার পরেই রয়েছে রাজধানী দিল্লি। পশ্চিমবঙ্গের শহরাঞ্চলের মানুষের মাসিক মাথা পিছু খরচ যেখানে ৫২৬৭ টাকা, সেখানে দিল্লির মানুষের ৮২১৭ টাকা, চণ্ডীগড়ের ১২,৫৭৫ টাকা।
নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতের শহরে মাথা পিছু খরচও পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বেশি, ৬৬২১ টাকা। তবে সেখানকার গ্রামে তা ৩৭৯৮ টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর কারণ হল, গুজরাতের গ্রাম এবং শহরের আর্থিক অসাম্য। গুজরাতে গ্রামের তুলনায় শহরের মানুষের মাথা পিছু মাসিক খরচ ৭৪% বেশি। বাংলায় এই ফারাক ৬২%। বস্তুত, এই আর্থিক অসাম্য গোটা দেশের মধ্যে গুজরাতেই সব থেকে বেশি।
সরকারি সূত্রের যুক্তি, গ্রামে খাবার থেকে পরিবহণ— সব খরচই অনেক কম। সেটা সেখানে বসবাসকারীদের মাথা পিছু খরচ কম হওয়ার কারণ হতে পারে। কিন্তু জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক বিকাশ রাওয়ালের মতে, ‘‘এর পিছনে একটি বড় কারণ আর্থিক অসাম্য।’’