এ বার জৈব গ্যাস তৈরি হবে মুরগির বিষ্ঠা বা মল থেকেও। প্রতীকী ছবি।
এত দিন রাজ্যে গোবর থেকে জৈব গ্যাস তৈরি হত। এ বার তৈরি হবে মুরগির বিষ্ঠা বা মল থেকেও। এ জন্য মুরগির খামার থেকে এই গ্যাস তৈরির প্রকল্প গড়তে উদ্যোগী হয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশন। তারা চুক্তি করেছে ইন্ডিয়ান অয়েলের (আইওসি) সঙ্গে। সেই সঙ্গে রাজ্যের কাছেও সহায়তার আর্জি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বর্জ্য থেকে জ্বালানি তৈরির কেন্দ্রীয় প্রকল্প ন্যাশনাল বায়ো-এনার্জি প্রোগ্রামের আওতায় মুরগির মল থেকে মিথেন এবং অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। মিথেন গ্যাস বিশেষত রান্নার কাজে ব্যবহার হবে। সেই সঙ্গে দাহ্য ক্ষমতা সিএনজি-র থেকে বেশি হওয়ায় তা গাড়ির জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগানো হবে। আর অ্যামোনিয়া ব্যবহার করা হবে সার তৈরিতে। এতে কমবে খামারের মাধ্যমে ছড়ানো দূষণও।
পোলট্রি ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য বিকাশকুমার সরকার বলেন, ডিম দেয় এমন ৩০০টি মুরগির খামার রয়েছে রাজ্যে। সেখানে মুরগির সংখ্যা প্রায় ১.৯০ কোটি। এর মধ্যে ৪০টির মতো খামার গ্যাস তৈরির জন্য উপযুক্ত। আইওসি সূত্রের খবর, খামারগুলিতে জৈব গ্যাস তৈরির প্রযুক্তি জোগাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। উৎপন্ন গ্যাস কিনবেও তারা। খামার মালিকরা যাতে সহজে তা সরবরাহ করতে পারেন, সে জন্য পাইপলাইন তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। তবে আপাতত এই গ্যাস সিলিন্ডারে করে খামার থেকে ইন্ডিয়ান অয়েলকে সরবরাহ করা হবে।
গ্যাস তৈরি শুরু হলে খামারগুলির আয় দ্রুত বাড়বে বলে মনে করেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদন মোহন মাইতি। তিনি বলেন, প্রতি গ্যাস কারখানা গড়তে ১০ কোটি টাকা খরচ হবে। উৎপন্ন হবে দিনে ২ টন করে গ্যাস। যা কিলোগ্রাম পিছু ৬২ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন মালিকেরা। প্রতিটি কারখানায় প্রায় ৩০ জনের কর্মসংস্থান হবে বলেও তাঁর দাবি।
তবে এই কারখানা গড়তে সংশ্লিষ্ট খামার মালিককেই লগ্নি করতে হবে। মদনবাবু জানান, “এ জন্য ঋণের বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই কিছু ব্যাঙ্কের সঙ্গে চুক্তি করেছি। কিন্তু অত টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালানোর ক্ষেত্রে খামার মালিকদের সমস্যা রয়েছে। তাই আর্থিক সহায়তা দিতে রাজ্যের সঙ্গে কথা বলছি।’’ কেন্দ্রের প্রকল্প অনুসারে, ন্যূনতম ২ টন উৎপাদন ক্ষমতার জৈব গ্যাস তৈরির কারখানা গড়া বাধ্যতামূলক। খরচ কমাতে ন্যূনতম ৫০০ কিলোগ্রামের কারখানা গড়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, তেলের আমদানি খরচ ও দূষণ হ্রাসের লক্ষ্যে শিল্পোৎপাদন, পরিবহণ, রান্না ইত্যাদি কাজে জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছে ভারত। সেই গ্যাস জোগানের জন্য বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে মূল পাইপলাইন গড়ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গেল। তাদের সেই পাইপ থেকে আলাদা পাইপলাইনে বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকদের কাছে গ্যাস পৌঁছনোর বরাত পেয়েছে বহু সংস্থা।