ছব সংগৃহীত।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমাতে ঝড়খণ্ডের পাচোয়াড়া (উত্তর) খনির কয়লাকেই হাতিয়ার করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম। সূত্রের খবর, ওই খনিটি থেকে নিগম এ বছর কমপক্ষে ৬০ লক্ষ টন কয়লা রাজ্যের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে আনার পরিকল্পনা করেছে। তার মধ্যে সব থেকে বেশি কয়লা যাবে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে।
পরিবেশের ছাড়পত্র-সহ অন্যান্য প্রশাসনিক বাধা কাটিয়ে গত বছরের শেষ থেকে পাচোয়াড়া খনি মুখে কাজ শুরু হয়। গত কয়েক মাসে কিছু কয়লা নিয়ে আসাও হয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে। এখন সেই কয়লাই আরও বেশি করে আনার তোড়জোর শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, চলতি অর্থবর্ষে পাচোয়াড়া-সহ নিগমের অন্য খনিগুলি থেকে ৯০ লক্ষ টন কয়লা আনার পরিকল্পনা হয়েছে। যার মধ্যে বীরভূমের বড়জোড় ও গঙ্গারামচক ছাড়াও বাঁকুড়ার বড়জোড়া (উত্তর) কয়লা খনি রয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে, চলতি বছর থেকেই যতটা সম্ভব কোল ইন্ডিয়ার উপরে নির্ভরতা কমানো।
নিগমের এক কর্তা জানান, সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী অর্থবর্ষে তাঁদের খনিগুলি থেকে কমপক্ষে ১ কোটি টন কয়লা আনবেন তাঁরা। ফলে কোল ইন্ডিয়ার কয়লার উপর নির্ভরতা অনেকটাই কমবে। তাঁর দাবি, কোল ইন্ডিয়ার কয়লা যে দামে কিনতে হয়, তার থেকে অনেক কম খরচে পাচোয়াড়ার কয়লা পাওয়া যাবে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচও কমবে।
কয়লা মিলবে
• পাচোয়াড়া (উত্তর): ৬০ লক্ষ টন
• বড়জোড়: ৫ লক্ষ টন
• গঙ্গারামচক: ১০ লক্ষ টন
• বড়জোড়া (উত্তর): ১৫ লক্ষ টন
পাচোয়াড়াতে
• কয়লা মজুত ৪০ কোটি টন
• বছরে ১.৫ কোটি টন তোলা সম্ভব
• ২৫ বছর কয়লা মিলবে
নিগমের চাহিদা
• তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লা লাগে ১.৭ কোটি টন
• এর মধ্যে কোল ইন্ডিয়া দেয় ১.৪ কোটি টন
এই মুহূর্তে নিগমের চালু পুরনো খনিগুলির মধ্যে পাচোয়াড়াতেই সব থেকে বেশি কয়লা মজুত রয়েছে। এর পরে বীরভূমের মহম্মদ বাজার ব্লকের ডেউচা পাঁচামি খনির কয়লা তোলা শুরু হলে কোল ইন্ডিয়ার উপরে নিগমের নির্ভরতা আরও কমবে। রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তাদের দাবি, একা ডেউচাই বাংলার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে কমপক্ষে ৫০ বছর কয়লা (২১০ কোটি টন মজুত) জোগান দিতে পারবে। দু’টি খনিতে মোট কয়লা মজুত রয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টন। উল্লেখ্য, ডেউচা পাঁচামিতে কোথায় কত কয়লা আছে তার সমীক্ষার কাজও পুজোর পরেই শুরু হওয়ার কথা।
২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রের ২০৪টি খনি বণ্টন বাতিল হয়। ফলে বন্ধ হয় রাজ্যের খনিগুলি থেকে কয়লা তোলা। পরে কেন্দ্র নতুন করে খনি নিলাম ও বিলি শুরু করলে আর্জির ভিত্তিতে কয়লা মন্ত্রকের থেকে নিজেদের খনিগুলি হাতে পায় নিগম। তবে পাচোয়াড়া থেকে কয়লা তোলাই ছিল সংস্থার কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ খনিটি হাতে পাওয়ার পরে, ফের নিগমকে নতুন করে ঝড়খণ্ডের থেকে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র জোগাড় করে তবেই উত্তোলনের কাজে হাত দিতে হয়। অবশেষে সেই কয়লা এ বছর ঝাড়খণ্ড থেকে রাজ্যে আসতে শুরু করেছে।